Flooded areas of Contai

বানভাসি এলাকায় কোথায় জনপ্রতিনিধিরা? উঠছে প্রশ্ন

এ বার পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পাশাপাশি ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩৪
পটাশপুর-১ ব্লকের চিস্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুর্গতদের সমস্যার খোঁজ নিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান।

পটাশপুর-১ ব্লকের চিস্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দুর্গতদের সমস্যার খোঁজ নিচ্ছেন স্থানীয় তৃণমূল উপপ্রধান। —নিজস্ব চিত্র।

নিম্নচাপের ফলে টানা বৃষ্টিতে তাঁদের কারও এলাকায় নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে, কোথাও খাল ছাপিয়ে এলাকা ভেসে গিয়েছে। প্লাবিত একাধিক ব্লক। নষ্ট হয়েছে ফসল। ভেঙেছে বাড়িঘর। রাতের পর রাত বহু এলাকায় মানুষ বাঁধ ভাঙার আশঙ্কায় আতঙ্কে রাত কাটিয়েছেন, কোথাও বানবাসি গোটা গ্রাম আশ্রয় নিয়েছে ত্রাণ শিবিরে।

Advertisement

এই সব এলাকার বিভিন্ন দলের জনপ্রতিনিধিরা এই সঙ্কটের মুহূর্তে এলাকার মানুষের কাছে কতটা ছিলেন বা কতটা তাঁদের সাহায্যের জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, সেই প্রশ্ন এ বার ওঠা শুরু হয়েছে। অবধারিত ভাবে তা নিয়ে শাসক ও বিরোধী চাপানউতোড়ও তুঙ্গে উঠেছে।

প্রয়োজনের সময় এলাকার জনপ্রতিনিধিকে পাশে পাওয়া যায়নি বলে দুই দল একে অন্যের নেতাদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী স্থানীয় ক্লাবগুলির পুজোর বরাদ্দ টাকা বাড়িয়েছেন। এই ক্লাবগুলি মূলত শাসক দল-পুষ্ট এবং তৃণমূলের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ক্লাবের মাথা। সেখানে পুজোর বাজেটে কাটছাঁট করে কোন কোন ক্লাব বন্যাদুর্গতদের জন্য টাকা ব্যয় করে মানবতার নজির দেখিয়েছে, সেই হিসেবও বিরোধীরা কষার কথা বলছেন। শাসকদলের জনপ্রতিনিধিদের দাবি, তাঁরা মানুষের পাশে ছিলেন, আছেন। যদিও তা একেবারে ভুল বলে কটাক্ষ করেছে বিরোধী বিজেপি।

এ বার পঞ্চায়েত ভোটে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পাশাপাশি ২১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে তৃণমূল। এর পর চলতি মাসে নদী বাঁধ থেকে অতিরিক্ত জল ছাড়ার ফলে কংসাবতী এবং কাঁসাই নদীর জলস্তর বেড়ে গিয়েছে অনেকটা। শহীদ মাতঙ্গিনী ব্লক প্রশাসনিক অফিস জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পাঁশকুড়া, কোলাঘাট এবং ময়না ব্লকের অনেকটা অংশ জলবন্দি। জলস্তর কিছুটা কমলেও এখন পর্যন্ত ভগবানপুর এবং পটাশপুর এলাকায় চাষের জমি জলের তলায়। চন্ডীপুরের একাংশে অনেকে বাড়ি ছেড়েছেন।

ঘটনা হল, এমতাবস্থায় শাসকদলের ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি দূরে থাক, বিধায়ক কিংবা সাংসদদের ও প্লাবিত এলাকায় দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এমনিতেই প্লাবিত এলাকা থেকে জল কমতে আরও প্রায় মাস দেড়েক সময় লাগার কথা। পুজোর মুখে নতুন করে নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না নদী পাড়ের হাজার হাজার বাসিন্দা। জলমগ্ন এলাকায় দূষণ রোধে শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদের কাউকেই মাঠে নামতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। চন্ডীপুর এবং ভগবানপুর বিধানসভা এলাকার বিরাট অংশ জুড়ে সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি। সেখানে তৃণমূলের তারকা বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী এলাকায় এখনও পর্যন্ত যাননি। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গত সপ্তাহে পটাশপুর-১ বিডিও অফিসে জরুরি মিটিং করেন স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক। তারপর পটাশপুর-১ ব্লকেও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জোর কদমে নেমেছে শাসক দল। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন পটাশপুর -১ ব্লকের চিস্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মিলন কুমার খুটিয়া বলছেন,"বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর রাখছি। প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ মেরামতের কাজও নিয়মিত দেখাশোনা করতে হচ্ছে।’’

স্থানীয় কয়েক জন জানালেন,‘‘চার দিকে এখনও জল থই থই। ‌তবু জনপ্রতিনিধিরা কোমর সমান জল পেরিয়েই দেখা করতে আসছেন। দ্রুত নিকাশির বন্দোবস্ত করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি"। যদিও, পটাশপুরের পাশে ভগবানপুরের কোটবাড় এলাকার বেশ কয়েক জনের অভিযোগ, সপ্তাহ ঘুরলেও দুর্গতদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউই‌‌।

পাঁশকুড়া কিংবা কোলাঘাটে অবশ্য শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা দাঁড়িয়ে থেকে দুর্গতদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে। ‌সেখানে বামেরাও প্লাবিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতা করছেন বলে দাবি। তৃণমূল পাল্টা জানিয়েছে, ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের পদাধিকারীরা দলের দিল্লি কর্মসূচি শেষ করে ফেরার পর এলাকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নেমেছেন। ময়না, পটাশপুর এলাকায় দুর্গতদের ত্রিপল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে মিটিং ও করেছেন শাসকদলের বিধায়কেরা। এ প্রসঙ্গে পটাশপুরের বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলেন, "দিল্লিতে দলের কর্মসূচিতে অনেকেই গিয়েছিল ঠিক। তবে ফিরে এসে প্রতিটি এলাকায় যা যা পদক্ষেপ করার, সব করা হয়েছে।’’ যদিও শাসক দলের দাবি মানতে রাজি নয় বিরোধীরা।

দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক তথা সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি অরূপ দাস বলছেন, ‘‘দুর্গত মানুষদের কাছে শাসক দলের লোকজন যদি ঠিকমত পৌঁছতেন তা হলে আমাদের যুব মোর্চার কর্মীদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হত না। চণ্ডীপুর এবং পটাশপুরের মতো কয়েকটি এলাকায় আমাদের দলের কর্মীরাই দুর্গতদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করিয়েছেন।" বন্যা ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেছেন, "জেলায় নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ। জলমগ্ন এলাকাগুলিতে জল না সরার ফলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মশার পাশাপাশি দূষণের প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু সে সব যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement