জুনপুটে ডিআরডিও-র লঞ্চিং প্যাডে মাছের জাল শুকোচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
পরপর তিন বার বাতিল হয়েছে পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ। স্থানীয়দের আপত্তিতে সীমানা প্রাচীরের কাজও শুরু হয়নি। তবে জুনপুটে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র গড়ার প্রথম ধাপ হিসেবে ‘লঞ্চিং প্যাড’ তৈরি হয়েছিল। আপাতত তা স্থানীয় মৎস্যজীবীদের ‘দখলে’। খোলা আকাশের নীচে শুকোচ্ছে শুঁটকি মাছ, মেরামত করা হচ্ছে মাছ ধরার জাল।
কাঁথি-১ ব্লকের জুনপুটে পরীক্ষামূলক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করার কথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজ়েশন)-র। গত মার্চে পরীক্ষামূলক ভাবে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কথা থাকলেও তা হয়নি। জুলাইয়েও দু’দফায় ঘোষণার পরে পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বাতিল হয়। তবে বেশ কিছু দিন আগেই সেখানে তৈরি হয়েছে ‘লঞ্চিং প্যাড’। সেখানেই চলছে মাছ শুকানো। সেই কাজে ব্যস্ত কয়েক জন মহিলা স্পষ্টই বলেন, “জায়গাটা ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তাই মাছ শুকোচ্ছি।”
জানা গিয়েছে, ডিআরডিও একটি বেসরকারি সংস্থাকে প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব দিয়েছিল। তবে কিছু দিন হল সেই নিরাপত্তাকর্মীরাও এলাকায় আসছেন না। সেই সুযোগে ডিআরডিও অধিগৃহীত জমি সম্মতি ছাড়াই এ ভাবে ব্যবহার করে দখলের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ। স্থানীয় বিধায়ক তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অরূপ দাসের দাবি, “প্রথমে স্থানীয়দের উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। তারা সাময়িক ব্যবহারের পরে এত দিন যারা প্রকল্পে বাধা দিচ্ছিল, তারাই ওই জমি দখলের পরিকল্পনা করেছে। আমরা ডিআরডিও-কে সবটা জানাচ্ছি।”
পূর্ব মেদিনীপুর মৎস্যজীবী ফোরামের সম্পাদক দেবাশিস শ্যামলের পাল্টা বক্তব্য, “যে জায়গায় লঞ্চিং প্যাড হয়েছে, সেখানে দীর্ঘ দিন ধরে মৎস্যজীবীরা মাছ শুকানোর কাজ করতেন। ওই জমি ডিআরডিও-কে দেওয়ার আগে মৎস্যজীবীদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়নি।”
তৃণমূল ও স্থানীয় প্রশাসন অবশ্য জমি দখলের কথা মানতে নারাজ। কাঁথির মহকুমাশাসক শৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, “এমন ঘটনা জানা নেই। ডিআরডিও-র পক্ষ থেকে যখন যা সহযোগিতা চাওয়া হয়, আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করি।” তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক আমিন সোহেলের দাবি, “এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই পারে না। বরং ঘূর্ণিঝড়ে যেটুকু ক্ষতি হয়েছিল, সেই সব সামগ্রী আমরা একপাশে সরিয়ে রেখেছি। যদি কেউ এ কাজ করেও থাকে, তারা স্থানীয় মৎস্যখটিতে কিছু জানায়নি।”
কেন্দ্রীয় সরকারের বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক এবং সিআরজেড কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র নিয়েই জুনপুটের এই এলাকাকে ডিআরডিও-র ‘সেন্টার ফর ফায়ার, এক্সপ্লোসিভ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সেফটি’র পক্ষ থেকে বাছা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অনুমতি মেলে। তার পরে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ কেন্দ্র তৈরির জন্য ৮.৭৩ একর জমি রাজ্য সরকারের কাছ থেকে পায় ডিআরডিও। ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের দিন স্থানীয় বাসিন্দা ও মৎস্যজীবীদের এলাকা ছেড়ে সরে যেতে হবে বলে জানানো হয়। এর প্রতিবাদে ওই কেন্দ্র গড়তে বাধা দেয় স্থানীয়রা। তারপর অবশ্য পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ আর হয়নি।