জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে দুই পর্ষদের (হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ এবং দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ) যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সুরেই বিধানসভায় সরব মহিষাদলের তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী। তিনি জানতে চেয়েছেন হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ উঠে গিয়েছে কি না। ঘটনাচক্রে যে পর্ষদের শীর্ষে রয়েছেন তৃণমূলেরই এক নেতা, সেখানে দলের বিধায়কের এই ধরনের প্রশ্নে শাসক দলের অন্দরে চর্চা শুরু হয়েছে। দলের একাংশের বক্তব্য, পর্ষদের মাথায় থাকা শাসক-নেতৃত্বকে বিড়ম্বনায় ফেলতে বিধানসভায় বিধায়কের এই প্রশ্ন।
বিধানসভায় সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শীতকালীন অধিবেশন। ওই দিনই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ) সম্পর্কিত একাধিক প্রশ্ন বিধানসভায় পেশ করেন তিলক চক্রবর্তী। তিনি জানতে চান, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ কি উঠে যাচ্ছে? যদি তা না হয়, তবে ২০২৩-২০২৪ এবং পরবর্তী আর্থিক বর্ষে পর্ষদের জন্য আর্থিক বরাদ্দের পরিমাণ কত? পর্ষদের এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ ও নতুন কাজের কি পরিকল্পনা ইত্যাদি। বিধায়কের ওই প্রশ্ন গ্রাহ্য হয়েছে। বামফ্রন্ট আমলে আশির দশকে বন্দর ভিত্তিক হলদিয়া শহরের শিল্প পরিকাঠামো তৈরির লক্ষ্যে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ তৈরি হয়েছিল। সম্প্রতি হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরই হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের ন’জন ইঞ্জিনিয়ারকে বদলি করা হয়। হলদিয়া একাধিক কারখানার কর্তৃপক্ষের একাংশও পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে সরব। তাঁদের অভিযোগ, তাঁরাপর্ষদের কাছে জমির জন্য আবেদন করলেও রাজ্য সরকারের তরফে সবুজ সঙ্কেত না মেলায় পর্ষদ জমি দেয়নি। এই আবহে পর্ষদের আওতাধীন মহিষাদলের বিধায়কও পর্ষদ নিয়ে বিধানসভায় শঙ্কা প্রকাশ করলেন।
কিন্তু কেন?
স্থানীয় সূত্রের খবর, তিলকের বিধানসভা এলাকার কিছু প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ। কিন্তু ওই সব প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে রূপায়ণ না হওয়ায় স্থানীয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছিল তাঁকে। যা বিধানসভা ভোটের ব্যাঙ্কে প্রভাব ফেলতে পারে। প্রশাসন সূত্রের খবর, এককালীন যে এতজন ইঞ্জিনিয়ার সরিয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার, তার ফলে প্রকল্পে রূপায়ণে ব্যর্থ হয়েছে পর্ষদ। এ ব্যাপারে তিলক বলছেন, ‘‘হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ এলাকার বিধায়ক হিসেবে আমি এই প্রশ্নগুলি করেছি। পর্ষদের নির্মিত পথবাতিগুলি টিমটিম করে জ্বলছে। অনেক এলাকায় জলের পাইপ ফেটে গেছে। সংস্কার করা হচ্ছে না। নতুন কোনও প্রকল্প জমা দেওয়া হলে, তা অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। আগে হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের কাজের থেকে বর্তমানে উন্নয়ন পর্ষদের কাজের গতি অনেকটাই শ্লথ।’’
তিলকের এই ধরনের প্রশ্নে রাজনৈতিক মহল অন্য বাখ্যাও সামনে আনছে। তৃণমূলের একটি অংশ বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসাবে তাঁর জানার দরকার হলে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে জানতে পারতেন বিধায়ক। বিধানসভায় এরকম প্রশ্ন করে আদতে বিরোধীদের হাত শক্ত করছেন বিধায়ক। তৃণমূলের আরেকাংশের দাবি, তিলক তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হবেন বলে শোনা যাচ্ছিল। তবে তা এখনও মান্যতা পায়নি। দাবি, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ প্রসঙ্গ তুলে নিজের প্রাসঙ্গিকতা জোরদার করছেন তিলক।
মহিষাদলের রাজবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় স্থানীয় একটি খালে পাকা সেতু নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন তিলক। অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল পর্ষদের কাছে। কিন্তু সেখানে সেতু গড়া যাবে না বলে রিপোর্ট জমা পড়েছে। এরপর থেকে বিধায়কের সঙ্গে পর্ষদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। যদিও তিলক বলছেন, ‘‘ আমি এত কিছু ভেবে প্রশ্ন করিনি।’’ আর হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান জ্যোতির্ময় কর বলছেন, ‘‘বিধানসভায় কোন বিধায়ক, কী প্রশ্ন জমা দিয়েছেন, তা নিয়ে মন্তব্য করব না।’’