—প্রতীকী চিত্র।
অফিস-ঘরে তখন কেউই নেই। কোনও আধিকারিক নেই, নেই কর্মীও। অথচ, সেই খালি অফিসে আলো জ্বলছে, পাখা চলছে। এমনকি, চলছে এসিও! সরকারি দফতরে মাঝে মধ্যে এমন ছবি দেখা যায়ই। এ ভাবে বিদ্যুতের অপচয় রুখতে এ বার দফতরে দফতরে ‘সারপ্রাইজ ভিজ়িট’ অর্থাৎ, আচমকা পরিদর্শন শুরু হতে চলেছে বলে প্রশাসনের এক সূত্রে খবর। এই পরিদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরেরই কোনও আধিকারিককে ‘ডেজিগনেটেড অফিসার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হতে পারে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিদ্যুতের অপচয় রুখতে এ বার পদক্ষেপ করা হবে।’’ শীঘ্রই এই ‘সারপ্রাইজ ভিজ়িট’ শুরু হওয়ার কথা দফতরে দফতরে। জেলার স্কুলে স্কুলেও। হঠাৎ এ নিয়ে নড়াচড়া কেন? জানা গিয়েছে, রাজ্যের নির্দেশেই জেলায় এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নবান্নে এক প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিব প্রমুখ। বিভিন্ন দফতরের প্রধান সচিবেরাও। জেলাশাসক প্রমুখ ভার্চুয়ালি ওই বৈঠকে ছিলেন। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, নবান্নের ওই বৈঠকে সরকারি দফতরে বিদ্যুতের খরচ, বিদ্যুতের অপচয় নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত আধিকারিকেরা মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শুনেছেন, ‘‘অনেক সময়ই খবর আসে যে, সরকারি অফিসে যখন লোক থাকছে না, তখনও ফ্যান ঘুরছে। এ ভাবে বিদ্যুতের অপচয় বরদাস্ত করা হবে না।’’
ইচ্ছে মতো বিদ্যুৎ খরচ করেও অনেক সরকারি অফিস বিদ্যুৎ দফতরকে বিল মেটাচ্ছে না, এমন অভিযোগও তাঁর কাছে পৌঁছেছে বলে কথাবার্তায় স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি দফতরে বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে, স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তিনি। বিদ্যুতের খরচ কমাতে সরকারি দফতরগুলিতে একে একে ‘সোলার প্যানেল’ বসানোর কথাও বলেছেন তিনি। এরপরই জেলায় ওই পরিদর্শন নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নবান্নের ওই বৈঠকে সরকারি দফতরে বিদ্যুতের খরচ, অপচয় নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন মমতা। এরপর শুক্রবারই রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে জেলার স্কুল পরিদর্শকের দফতরে নির্দেশিকা এসেছে। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, স্কুল ছুটির পরেও বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে কি না দেখতে হবে। স্কুলে স্কুলে এ নিয়ে পরিদর্শনও করতে হবে। জেলার এক শিক্ষাকর্তাও মানছেন, ‘‘বিদ্যুৎ অপচয় রুখতে আচমকা পরিদর্শন শুরু হবে।’’
প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, দফতরগুলিকে জানানো হয়েছে, অফিসে এসি থাকলে, ২৫ ডিগ্রিতে সেলসিয়াসে এসি চালাতে হবে। একাংশ অফিসে ‘কুইক কুল’ মোডে এসি চলে। এই মোড কিছুক্ষণের মধ্যে ঘরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে ঠিকই, তবে এতে বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক শোনাচ্ছেন, ‘‘এসি ২৫ ডিগ্রির আশেপাশে রেখে চালানোই ভাল। এসি ২৪-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে চালালে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ বিলে সাশ্রয় হয়, তেমনই এই তাপমাত্রা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ভাল।’’
আচমকা পরিদর্শনে দেখা হবে অফিসে এবং স্কুলের হাল-হকিকৎ। বিদ্যুতের ব্যবহার ঠিকঠাক ভাবে হচ্ছে কি না। না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব ঠিক থাকলে সৌরবিদ্যুতে জোর দিতে শীঘ্রই জেলায় এক বৈঠকও হতে পারে। জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতর, স্কুল, কলেজে সৌর-প্যানেল বসানো নিয়ে সেখানে কথা হতে পারে। জানা যাচ্ছে, এক কিলোওয়াটের সোলার-প্যানেল বসাতে ন্যূনতম ১৩০ বর্গফুট জায়গা দরকার। এতে দিনে ৪.৩২ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। খবর, একাংশ সরকারি অফিসে যে যথেচ্ছ বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে, সে খবর পৌঁছেছিল নবান্নের শীর্ষ মহলে। এরপরই বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে এই পদক্ষেপ। একটি দফতরের জেলা আধিকারিক বলছেন, ‘‘বিদ্যুৎ ব্যবহার ও অপচয় সম্পর্কে অফিসের কর্মীদের সচেতন করছি।’’