—প্রতীকী চিত্র।
পুলিশে ভরসা নেই। বাবা ও ছেলের বিরুদ্ধে সোনা চুরির অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব তাই নিজেই নিয়েছিলেন সোনার দোকানের মালিক। শুধু কি তদন্ত। বিচারও। দিল্লি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে এসে বসিয়েছিলেন সালিশিও। বাবাকে সেখানে ডেকে এনেও লাভ হয়নি। অভিযুক্ত দোষ স্বীকার করেননি। তাই বাবা ও তাঁর অন্য এক ছেলেকে নাকি অপহরণ করান ওই সোনার দোকানের মালিক। অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে পুলিশ। উদ্ধার করা হয় অপহৃতদের। গ্রেফতার হন ওই সোনার দোকানের মালিক ও তাঁর এক সঙ্গী।
পুলিশ সূত্রের খবর, ঘাটাল থানার গোপমহলের বাসিন্দা মধুসূদন সামন্তের ছোট ছেলে সুজয় দিল্লিতে একটি সোনার কাজ করেন। ওই দোকানের মালিক সুভাষ মালিকের অভিযোগ, দিন পনেরো আগে সুজয় সোনা চুরি করে পালিয়ে আসেন। দাসপুর থানার জোতকেশব গ্রামের বাসিন্দা সুভাষ কিন্তু চুরির বিষয়ে কোনও থানারই দ্বারস্থ হননি।
তিনি দিল্লি থেকে তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে এনে হানা দেন সুজয়ের বাড়িতে। এর পর ফের ৬ ডিসেম্বর গোপমহল সুরত্রবাড় এলাকায় তাঁরা হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন প্রধান জয়দেব দোলই সহ অন্যরা। ওই দিন রাতে চুরির সোনা উদ্ধারে বসেছিল সালিশি সভা।
সুভাষ ছাড়াও সালিশি সভায় ছিলেন তাঁর সহযোগী রাজীব মালিক এবং স্থানীয় রত্নেশ্বরবাটি গ্রামের কয়েকজন যুবকও। সালিসি সভায় সোনা চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত সুজয় না থাকলেও ছিলেন মধুসূদন। সভায় বেশ কিছুক্ষণ তর্কাতর্কি হয়। মধুসূদন জানান, তিনি সোনা চুরির বিষয়ে কিছুই জানেন না। সুজয়ও যে দিল্লি থেকে বাড়ি ফেরেননি, সে কথাও সালিশি সভায় জানান মধুসূদন।
অভিযোগ, মধুসূদনের কথা বিশ্বাস করেননি সুভাষ ও তাঁর সহযোগীরা। মাঝপথে সভা থামিয়ে মধুসূদনকে অপহরণ করে তাঁরা পালিয়ে যান। মধুসূদনের বড় ছেলে অজয় থাকেন কলকাতায়। পরের দিন, ৭ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে অজয়কেও অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ। বাবা এবং বড়ছেলে একসঙ্গে আটকে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এর পরই বিষয়টি থানায় জানান মধুসূদনের স্ত্রী কৃষ্ণা সামন্ত।
অভিযোগ পেয়ে শনিবার রাতে দাসপুর থানার পুলিশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে বাবা ও ছেলেকে উদ্ধার করে। গ্রেফতার করে সুভাষ ও তাঁর সঙ্গী রাজীব মালিককে। দাসপুরে গিয়েছিল ঘাটাল থানার পুলিশও। ঘাটাল থানার পুলিশের হাতে দু’জনকে তুলে দেওয়া হয়।
বাড়ি ফিরে মধুসূদন বলছেন, ‘‘পুলিশকে ধন্যবাদ। সোনা চুরির অভিযোগ সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। ছোট ছেলের সঙ্গেও যোগাযোগ নেই। সালিশি সভায় এ কথাই বলেছিলাম। বিশ্বাস করল না। আমাদের অপহরণ করে একটা ঘরে আটকে রেখেছিল। পুলিশের জন্য ছাড়া পেলাম।’’
পুলিশ জানিয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সালিশি সভায় কারা কারা ছিলেন তাঁদের নাম জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। সালিশি সভায় ছিলেন প্রাক্তন প্রধান জয়দেব। তিনি বলেন, “সোনা চুরির ঘটনায় একটা সালিশি হয়েছিল। সেখানে অনেকেই ছিল। আমিও ছিলাম।’’