ট্রেন লাইনে পড়ে থাকা সেই কবিতার খাতার দু’টি পাতা। —নিজস্ব চিত্র।
‘‘অল্প অল্প মেঘ থেকে হালকা হালকা বৃষ্টি হয়, ছোট্ট ছোট্ট গল্প থেকে ভালবাসা সৃষ্টি হয়....’’
কবিতাটি কে লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, তার বিন্দুবিসর্গ জানার উপায় এই মুহূর্তে নেই। তাঁর বয়স কত, উপায় নেই তা-ও জানার। করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থলে চাপ চাপ রক্ত, রক্তমাখা দেহের স্তূপ, এ দিক-ও দিক ছড়িয়ে ছেঁড়া জামাকাপড়, খাবার, ব্যাগপত্র, বাচ্চাদের খেলনার মাঝে পাওয়া গিয়েছে একটি কবিতার খাতাও। তাতেই লেখা এই কবিতা। অপটু হাতে, সুন্দর করে নকশার কারসাজিও রয়েছে কবিতার লাইনের মাঝেমাঝে।
ওই খাতায় উল্টেপাল্টে দেখার সময় আনন্দবাজার অনলাইনের প্রতিনিধির চোখে পড়ল আরও একটি কবিতা। তার শুরুতে লেখা,
‘‘ভালবাসা এই মন তোকে চায় সারাক্ষণ,
আছিস তুই মনের মাঝে
পাশে থাকিস সকাল সাঁঝে।
কী করে তোকে ভুলবে এই মন,
তুই যে আমার জীবন...’’
সম্ভবত, কবিতার খাতার মালিক দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনটিতেই ছিলেন। দুর্ঘটনার অভিঘাত এতটাই বেশি ছিল যে, সেই কবিতার খাতা ছিটকে এসে পড়েছে ভাঙা লাইনে। কবিতার খাতার মালিক সুস্থ, আহত না মৃত, তা জানা সম্ভব হয়নি। যিনি লিখেছেন, তিনি প্রেমিক না প্রেমিকা, তা-ও জানা সম্ভব হয়নি। তবে লেখা পড়ে বোঝা যায়, কবিতাটি প্রিয় কারও উদ্দেশে লেখা। যাঁর উদ্দেশে এই কবিতা লেখা, এই কবিতার খাতা কি তাঁর কাছেও কোনও দিন পৌঁছবে! তা-ও জানার উপায় নেই।
প্রসঙ্গত, ওড়িশার বালেশ্বরে আপ করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহত এবং আহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার ভোর পর্যন্ত রেলসূত্রে মৃতের সংখ্যা ৮৮ বলে জানানো হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৬০০ জনেরও বেশি। তবে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, শনিবার ভোর পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৩৩। আহত ৯০০ জনের বেশি। অন্য দিকে, ওড়িশার দমকল বাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল সুধাংশু ষড়ঙ্গী জানিয়েছেন, শনিবার ভোর পর্যন্ত অন্তত ১২০টিরও বেশি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৮৮, আহত ৬০০। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেনে এখনও অনেক যাত্রী আটকে রয়েছেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন। গভীর রাতে ট্রেনের দরজা ভেঙে এবং গ্যাস কাটারের সাহায্যে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। দুর্ঘটনা এবং তার পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব-সহ রেলের পদস্থ অফিসারেরা। ইতিমধ্যেই উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল।