Jhumur Song

‘সুনীল মাহাতোর জেলায় ঝুমুর ধ্বংসের মুখে’

নিজের লেখা গানের বেশিরভাগই নিজেই সুর করেন। তবে সেই সুর শিল্পীদের উপর চাপিয়ে দেন না।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:১৫
তমালের ঝুমুর গানের সংকলন।

তমালের ঝুমুর গানের সংকলন। নিজস্ব চিত্র।

পেশা চাষাবাদ। নেশা ঝুমুর গান লেখা। প্রকৃতি, মানুষজন, জীবনযাত্রা পর্যবেক্ষণ করেন। সেই অনুভব ফুটিয়ে তোলেন গানে। পুজোর আগে থেকে লেখার চাপ বাড়ে। তখন শিল্পীরা অনেক বেশি সংখ্যায় নতুন গানের ফরমায়েশ করেন। আসলে শরৎ, হেমন্ত আর শীত এই তিন ঋতু ঘিরে জঙ্গলমহলে মূলবাসীদের নানা পরব। পরব মানেই ঝুমুর গানের আসর। তাই গীতিকার তমাল মাহাতোকেও গান লেখার জন্য ব্যস্ত থাকতে হয়।

Advertisement

নিজের লেখা গানের বেশিরভাগই নিজেই সুর করেন। তবে সেই সুর শিল্পীদের উপর চাপিয়ে দেন না। তমাল বলছেন, ‘‘বলি, এ রকম সুরে গাইলে ভাল। অধিকাংশ শিল্পী সে কথা মেনেও নেন।’’ লেখা গানগুলোর সংকলন করেছেন তমাল। ২০১২-২৩ পর্যন্ত তাঁর লেখা বিভিন্ন গানের চারটি সংকলন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। চারটি সংকলনে সর্বমোট আড়াইশোটি গান রয়েছে। গত বছর প্রকাশিত ‘মাতে হিয়া ঝুমইর পিয়াসে’ সংকলনে সবচেয়ে বেশি ১৩২টি গান রয়েছে। যার বেশিরভাগই জনপ্রিয়।

ঝুমুর গান লেখাই মূল কাজ। তবে কেউ জোর করলে মঞ্চে ঝুমুর গান করেন তমাল। অভিনয় করতেও ভালবাসেন। গ্রামে এক সময় নাটক হত। বাংলা ও কুড়মালি নাটকে অভিনয়ও করেছেন। বছর দশেক আগে শেষবার মঞ্চে অভিনয়। একটা নাটকও লিখেছেন তিনি। ‘বিনা পয়সার ভালবাসা’। অভাবি দম্পতির জীবনযাপনের কাহিনি।

নিজের জঙ্গলমহল প্রিয় জায়গা তমালের। তাই বাইরে কোথাও খুব একটা যান না। তমাল বলছেন, ‘‘৩০ বছরেরও বেশি ঝুমুর সঙ্গীতের সেবা করছি বিনা পারিশ্রমিকে। অথচ আজ পর্যন্ত সে ভাবে কোনও স্বীকৃতি-সম্মান জোটেনি। আমি সরকারি লোকপ্রসার প্রকল্পে মাসে এক হাজার টাকা ভাতা পাই। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচার গান লিখে দিতে হয় ঝুমুরের আদলে।’’ ভাগ্যে বিশ্বাসী তমাল বলেন, ‘‘যত পরিশ্রমই করি না কেন, ভাগ্য সুপ্রসন্ন না হলে কিছুই হয় না।’’

জীবনে আক্ষেপ রয়ে গিয়েছে কিছু। একটা আক্ষেপ ‘ঝুমুর সম্রাট’ বিজয় মাহাতো শেষের দিকে তমালের লেখা গান রেকর্ড করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তাঁর আকস্মিক মৃত্যুর ফলে সেটা আর সম্ভব হয়নি। অন্য আক্ষেপটি ঝুমুরের চরিত্র বদল নিয়ে। তমাল বলছেন, ‘‘চিরাচরিত ঝুমুর কিংবা দরবারি ঝুমুরের শ্রোতা দিন দিন কমছে। নতুন প্রজন্ম চটুল গানে মজেছে। তাই ঝুমুরেও বেনোজল ঢুকছে। পুরুলিয়া জেলায় তো ঝুমুরের নামে অশ্লীল কাণ্ডকারখানা হচ্ছে।’’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার সুনীল মাহাতোর লেখা ‘পিঁদাড়ে পলাশের বন পালাব পালাব মন/নেংটি ইঁদুরে ঢোল কাটে’ গানটি প্রথমবার গেয়ে অমর হয়ে যান বিজয় মাহাতো। অথচ ভাবতে কষ্ট হয়, সেই সুনীল মাহাতোর জেলায় আজ ঝুমুর ধ্বংসের মুখে। ঝুমুরের নামে যা হচ্ছে তা চূড়ান্ত আদিরসাত্মক নোংরামি।’’

আশার কথাও শোনান তমাল। ঝাড়গ্রাম জেলায় এখনও আদিরসাত্মক গানের প্রচলন হয়নি। তার কারণ হিসেবে তমাল বলেন, ‘‘শুধু আমি নই, ঝাড়গ্রামের অন্য গীতিকারেরাও শস্তার গান লেখার পথে কেউ যাননি।’’ কিন্তু কালের নিয়মে শ্রোতার মন পেতে সমঝোতা করতে হয়েছে ঝাড়গ্রামের গীতিকারদেরও। তমাল সে কথা স্বীকার করেন। বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের কাছে ঝুমুরের কদর টিকিয়ে রাখতে গান লেখার ধরন বদলাতে হয়েছে। রোমান্টিক ঝুমুরও লেখা হচ্ছে। তবে অবশ্যই শালীনতা
বজায় রেখে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement