দিঘা সফর শেষে কলকাতায় ফেরার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: শুভেন্দু কামিলা
তিন দিনের জেলা সফর শেষে কলকাতা ফিরলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে দিঘা ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা জেলায় দলীয় নেতৃত্বদের বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন যে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন শাসকদলের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সকলকে নির্দেশ দিয়ে জানিয়েছেন, ‘কাঁথি তাঁর চাই’।
গত মঙ্গলবার বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী দিঘা আসেন। কোনও প্রশাসনিক বৈঠক বা কর্মসূচি ছিল না তাঁর। বুধবার তিনি দিঘায় জগন্নাথ ধামের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। তারপর এদিন দুপুরে তিনি কলকাতা রওনা দেন। দুপুর দেড়টা নাগাদ ‘দিঘি’ (মুখ্যমন্ত্রীর থাকার সরকারি আবাস) থেকে সোজা কনভয় চেপে হেলিপ্যাডে চলে যান মমতা। রাস্তার দু’ধারে তখন পর্যটকদের পাশাপাশি, দাঁড়িয়েছিলেন স্থানীয়রা। মুখ্যমন্ত্রীকে বিদায় জানাতে হেলিপ্যাডে হাজির ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি ও পুলিশ সুপার সৌম্যদীপ ভট্টাচার্য।
আগামী ১৫ ডিসেম্বর রয়েছে কন্টাই কো অপারেটিভ ব্যাঙ্কের ভোট। এই ব্যাঙ্কের নির্বাচনের দেখভালের দায়িত্ব মমতা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরিকে দিয়েছেন। হেলিপ্যাডে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক, অখিল গিরি, তৃণমূলের জেলা সভাপতি পীযূষকান্তি পন্ডা, যুব তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি-সহ দলের ন’জন নেতাকে ডেকে নেন মমতা। দলীয় সূত্রের খবর, সেখানে অখিলকে উত্তমের সঙ্গে ঝগড়া না করার নির্দেশ দেন তৃণমূল নেত্রী। উত্তমকে সঙ্গে নিয়েই কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে লড়াইয়ের কথাও তিনি বলে যান। একই সঙ্গে সুপ্রকাশকেও বাবা অখিলের মত কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দেন তৃণমূল নেত্রী।
উল্লেখ্য, কাঁথি ওই সমবায় ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি নির্বাচনে ১০৮টি আসনের মধ্যে উত্তম শিবিরে থাকা ১৩ জন প্রার্থী শেষ মুহূর্তে বদল করেছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব। নির্বাচনের আহ্বায়ক করা হয়েছে অখিলকে। তা নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে দ্বন্দ্বের চোরাস্রোত বইছে। তবে শুভেন্দু ‘গড়’ কাঁথিতে সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচন তৃণমূলের কাছে যে মর্যাদা রক্ষার লড়াই, এই সফরে কার্যত জেলা নেতাদের তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। কারণ, একদিকে দীর্ঘদিন এই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন শুভেন্দু। অন্যদিকে, ২০২১ সাল থেকে বিধানসভা, ত্রিস্তর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং এ বছর লোকসভা নির্বাচনে কাঁথিতে ভরাডুবি ঘটেছে ঘাসফুল শিবিরের।
তৃণমূল সূত্রের খবর, ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে জয়লাভ যে কোনও ভাবেই সম্ভব নয়, সেটা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পেরেছেন। সঙ্গত কারণে তৃণমূল নেত্রীর জেলা সফরে এসে দলের দুই শিবিরের নেতাদের এদিনের হেলিপ্যাডের বার্তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এ বিষয়ে অখিলএবং সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘ঐক্যবদ্ধভাবে সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনে লড়াইয়ের কথা বলে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের প্রার্থীদের জয়যুক্ত করতে সেই মাফিক লড়াই করা হচ্ছে।’’ একই সুর শোনা গিয়েছে উত্তম বারিকের গলায়। তিনি বলেন, ‘‘সবার অভিভাবক নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলে গিয়েছেন কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক নির্বাচনে সকলকে জয়যুক্ত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপিয়েছি।’’