College Admission

কলেজে পড়তে অনাগ্রহ, উৎসাহ বৃত্তিমূলক শিক্ষায়

স্নাতক স্তরে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে শুক্রবার। তার আগেই দুই-তৃতীয়াংশ কলেজে স্নাতকে আসন ফাঁকা।

Advertisement
কেশব মান্না
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ০৬:০৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

কলেজে প্রথাগত শিক্ষায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ। বরং তারা অনেক বেশি আগ্রহী বৃত্তিমূলক বা কারিগরী শিক্ষায়। চাকরিমুখি উচ্চশিক্ষায় উৎসাহী পড়ুয়াদের ঢলের পাশাপাশি হুহু করে কমছে কলেজে সাধারণ বিষয়ে স্নাতক পড়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভিড়। শিক্ষার হারে এগিয়ে থাকা পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেও একই ছবি দেখা যাচ্ছে।

Advertisement

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় অনলাইন পোর্টালে ভর্তির জন্য কারা আবেদন করেননি এবং কেন করেননি, সে সম্পর্কে সমস্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল শিক্ষা দফতর। সেখানেও উঠে এসেছিল কলেজে ভর্তির প্রতি অনীহার তথ্য।

স্নাতক স্তরে কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে শুক্রবার। তার আগেই দুই-তৃতীয়াংশ কলেজে স্নাতকে আসন ফাঁকা। অর্থনীতির পড়ুয়া কমছে সব কলেজেই। পাশাপাশি সমাজবিদ্যা, সংস্কৃত এবং ইংরেজি তো রয়েছেই। আবার অনেক জায়গায় বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতেও আসন সংখ্যা ফাঁকা থাকছে। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম মিলিয়ে প্রায় সব কলেজেই একই ছবি। পরিবর্তিত এই ধারায় উদ্বিগ্ন শিক্ষক মহল।

কলেজগুলিতে ভর্তি সংক্রান্ত বেনিয়ম ঠেকাতে এবার সিএপি (সেন্ট্রাল অ্যাডমিশন পোর্টাল) চালু করেছে রাজ্য সরকার। গত ২৪ জুন থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে কলেজে ভর্তির আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। শেষ হয়েছে ৭ জুলাই। পূর্ব মেদিনীপুরে মোট ২১ টি কলেজ রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ টি কলেজে স্নাতক স্তরে আসন সংখ্যার তুলনায় ছাত্র ভর্তির আবেদন কম জমা পড়েছে। শহরাঞ্চলের কলেজগুলিতেও প্রায় একই ছবি। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে অর্থনীতিতে ৫১টি আসন রয়েছে। ভর্তির আবেদন জমা পড়েছে ৪৯টি।

একই রকম ভাবে তাম্রলিপ্ত মহাবিদ্যালয়ে ইতিহাসে ১৪২ টি আসনে ৮৯ টি আবেদন এবং অর্থনীতিতে ১১টি আসনের জন্য ৬ জন আবেদন জমা পড়েছে। জেলার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মহিষাদল রাজ কলেজেও অর্থনীতি এবং সমাজবিদ্যার মতো বিষয়ে আসনের তুলনায় ছাত্র ভর্তির আবেদন কম জমা পড়েছে। বাজকুল মিলনী মহাবিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ২০টি আসন রয়েছে। আবেদন জমা পড়েছে ১২ টি। অর্থনীতিতে কম আবেদন জমা পড়েছে খেজুরি কলেজ, শহীদ মাতঙ্গিনী মহিলা, মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ে। এ ছাড়াও হলদিয়া গভর্মেন্ট কলেজে সমাজতত্ত্বে কম আবেদন জমা পড়েছে।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা পাঁশকুড়া, কোলাঘাট, পালপাড়া এবং নন্দীগ্রামের মতো গ্রামীণ এলাকার কলেজগুলিতে। নন্দীগ্রামের সীতানন্দ কলেজে সংস্কৃত-র পাশাপাশি গণিত, পদার্থবিদ্যা এবং ইতিহাসে আর নন্দীগ্রামের স্বর্ণময়ী যোগেন্দ্র কলেজে ইংরেজি এবং সংস্কৃততে কম আবেদন জমা পড়েছে। পালপাড়া যোগদা সৎসঙ্গ মহাবিদ্যালয় ইতিহাসে ১১৬ টি আসন রয়েছে। আবেদন করেছেন ৬৬ জন। গণিতে ১০৭ টি আসন রয়েছে। ভর্তি হতে চেয়েছেন ৫৮ জন। পাঁশকুড়া সিদ্দিনাথ কলেজে ভূগোল, গণিত, পদার্থবিদ্যা সহ মোট ৬টি বিষয়ে কম আবেদন জমা পড়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির রাজ্য কমিটির সদস্য প্রীতি রঞ্জন মাইতি বলছেন,"উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ভর্তির পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষাগুলোতে স্বচ্ছতার অভাব শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। শিক্ষালাভের পর তাঁদের কর্মসংস্থানের দিশা দিতে পারলে উচ্চশিক্ষা লাভে উৎসাহিত করতে সুবিধা হবে।"

বেলদা কলেজ, সবং কলেজ, ভাতার কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানে অনেক কম আবেদন জমা পড়ায় শঙ্কিত কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলির অধ্যক্ষ সংগঠনের সম্পাদক তথা কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজের অধ্যক্ষ অমিত কুমার দে বলেন,"১২ জুলাই এই বিষয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।" (চলবে)

আরও পড়ুন
Advertisement