ফুঁসছে কংসাবতী। মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
সোমবার সকাল ৬টা। রানিচকের কাছে রূপনারায়ণের জলস্তর তখন ৪.৭৮ মিটার। সকাল ৮টায় ০.১০ মিটার বেড়ে জলস্তর হল ৪.৮৮ মিটার। এই নদীর প্রাথমিক বিপদসীমা ৪.৭২ মিটার। সকাল ৬টায় কলমীজোড়ের কাছে কংসাবতীর জলস্তর ছিল ৯.৬২ মিটার। সকাল ৮টায় ০.২৫ মিটার বেড়ে জলস্তর হয়েছিল ৯.৮৭ মিটার। এই নদীটির প্রাথমিক বিপদসীমা ৮.৮৬ মিটার।
অবিরাম বৃষ্টি।তে ঘন্টায় ঘন্টায় বাড়ছে নদীগুলির জলস্তর। কংসাবতী, শিলাবতী, রূপনারায়ণ— কোথাও বইছে বিপদসীমার উপরে, কোথাও বিপদসীমা ছুঁইছুঁই। ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল-সহ বেশ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে। কেশপুরেও প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। বন্যা-বিপদ রুখতে অবশ্য সতর্ক প্রশাসন। আগাম পরিকল্পনায় জেলাস্তরে, মহকুমাস্তরে বৈঠক হয়েছে। ব্লকগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে, জানিয়েছেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি। জেলাশাসকের নির্দেশে সোমবার কেশপুরে যান মহকুমাশাসক (সদর) মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। বিশ্বনাথপুর সহ কয়েকটি জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কেশপুরের কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হয়েছে।’’
শনিবার থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। রবিবারও দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। সোমবারও মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বছরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জুন, জুলাই, অগস্ট, সেপ্টেম্বর— এই চার মাসেই এর বেশিরভাগ বৃষ্টি হয়। এ বার অবশ্য জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল। অগস্টের শুরু থেকে অবশ্য মোটের উপর স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে শুরু করেছিল। সেপ্টেম্বরে ভারী বৃষ্টি হল। এখনও কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়নি বলেই খবর। জল ছাড়া হলে তখন নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেতে পারে। আশেপাশের আরও নিচু এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
এই জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে কংসাবতী, শিলাবতী, রূপনারায়ণ। প্রায় প্রতি বছর ঘাটালে বন্যার কারণ শিলাবতীই। নদীগুলির জলস্তরের দিকে সর্বক্ষণ নজর রাখা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। ব্লকগুলিতে সব রকম সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেককে নিরাপদ জায়গায় সরানোও হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। আমরাও সতর্ক ছিলাম। নতুন করে ভারী বৃষ্টি হলে, সে ক্ষেত্রে আরও কিছু নিচু এলাকা জলমগ্ন হতে পারে। না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সতর্কতা হিসেবে যে সব পদক্ষেপ করার, করা হচ্ছে।’’ ব্লকগুলিকে জানানো হয়েছে, কোন কোন জায়গায় নদীবাঁধ দুর্বল রয়েছে, দেখতে হবে। দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
জলের তোড়ে ইতিমধ্যে কিছু সাঁকো ভেঙেছে। কিছু জায়গায় নৌকায় পারাপার শুরু হয়েছে। ঘাটাল বাদে পশ্চিম মেদিনীপুরের আরও কোথাও কি বন্যার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে? প্রশাসনের এক সূত্রের মতে, এখনই এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। ওই সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, শুধু অতিবৃষ্টির জলে জেলায় বন্যা হয় না। অতিবৃষ্টির সঙ্গে জলাধারের ছাড়া জলেই বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। মুকুটমণিপুরের কংসাবতীর জলাধার থেকে ছাড়া জল পশ্চিম মেদিনীপুরে এলে জেলার পরিস্থিতির অবনতি হয়। এখনও মুকুটমণিপুরের জলাধারে জল ছাড়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি বলেই খবর। তবে হঠাৎ করে নদীর জলস্ফীতি হলে আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হতে পারে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা সতর্ক রয়েছি। সবদিকে নজর রাখা হয়েছে।’’