Panskura

দেব দর্শন থেকে বঞ্চিত, টাকা না মেলায় ক্ষোভ 

পাঁশকুড়ার এলাকাবাসী যেমন দেবের জলমগ্ন এলাকায় না আসা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তেমনই বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, টানা আট বছর তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে পাঁশকুড়ার জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১২
এখনও জলমগ্ন পাঁশকুড়ার নেকড়া গ্রাম।

এখনও জলমগ্ন পাঁশকুড়ার নেকড়া গ্রাম। —নিজস্ব চিত্র।

শেষবার তাঁকে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে। নিজের জন্য ভোট চাইতে এসেছিলেন পাঁশকুড়ায়। মানুষের রায়ে দ্বিতীয়বার সাংসদ হন অভিনেতা দীপক অধিকারী ওরফে দেব। তবে দাবি, সাংসদ হওয়ার পর তিনি একদিনও পাঁশকুড়ায় পা ফেলেননি তৃণমূলের এই তারকা-নেতা। গত রবিবার পাঁশকুড়ার উপর দিয়েই পড়শি জেলা পশ্চিম মেদিনীপেরর ঘাটালে বন্যা পরিদর্শনে যান সাংসদ। কিন্তু জলমগ্ন পাঁশকুড়ায় থামেনি তাঁর গাড়ি। এতেই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তাঁদের প্রশ্ন, তারকা সাংসদের পাঁশকুড়ার প্রতি এমন বৈমাত্রেয় সুলভ আচরণ কেন!

Advertisement

প্রশাসনিক বিন্যাস অনুযায়ী, পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভা এলাকাটি ঘাটাল লোকসভার অন্তর্গত। ২০১৪ সালে ঘাটাল লোকসভায় তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হন অভিনেতা দেব। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে দেবের সাংসদ তহবিল থেকে পাঁশকুড়া পশ্চিম বিধানসভায় বিভিন্ন খাতে ৮০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০১৯ সালে ঘাটাল থেকে দ্বিতীয়বার সাংসদ হন দেব। আগামী লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সালে। সাংসদ হিসেবে দেবের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হতে চলল। কিন্তু গত আট বছরে দেবের সাংসদ তহবিল থেকে পাঁশকুড়ার উন্নয়ন খাতে এক টাকাও বরাদ্দ হয়নি বলে অভিযোগ।

গত কয়েক দিনের নিম্নচাপের টানা বৃষ্টি এবং বেহাল নিকাশিতে জলমগ্ন হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায়। তার মধ্যে রয়েছে পাঁশকুড়া এবং কোলাঘাটও। এছাড়া জলধারের জল ছাড়ায় চাপ বাড়ে কংসাবতী নদীতে। আ সেই চাপে কংসাবতীর স্লুস গেট ভেঙে পাঁশকুড়ার একাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে কয়েকদিন আগে। বহু এলাকাবাসী এখনও ত্রাণ শিবিরে রয়েছেন। একই ছবি তৈরি হয়েছে পড়শি জেলার ঘাটালেও। গত রবিবার সেখানের দুর্গতদের দেখতে যান দেব। পাঁশকুড়ার রাস্তা ধরেই অভিনেতা ঘাটালে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বন্যা দুর্গত পাঁশকুড়ায় না আসায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে পাঁশকুড়াবাসীর মধ্যে।

বিষয়টি নিয়ে সরব পূর্ব মেদিনীপুর জেলা বন্যা ভাঙন প্রতিরোধ কমিটি। সংগঠনের সম্পাদক নারায়ণচন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া কিছু এলাকা সাংসদ দেবের লোকসভা এলাকার মধ্যে পড়ে। বন্যার সময় উনি ঘাটালের মানুষজনের পাশে দাঁড়ান। কিন্তু পাঁশকুড়ায় ওঁকে পাওয়া যায় না। পাঁশকুড়ার বহু গ্রাম তো এখনও জলমগ্ন। ওঁদের পাশে কি দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই!’’ এ ব্যাপারে দেবের সাংসদ প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলছেন, ‘‘পাঁশকুড়ার উপরে সাংসদের সারসরি নজর রয়েছে। তবে রবিবার ঘাটালে এবং সবংয়ে ওঁর একাধিক কর্মসূচি ছিল। তাই তিনি ওই দিন পাঁশকুড়া যতে পারেননি। পুজোর পর বিজয়া সম্মিলনীর সময় সাংসদের পাঁশকুড়ায় যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’’

পাঁশকুড়ার এলাকাবাসী যেমন দেবের জলমগ্ন এলাকায় না আসা নিয়ে প্রশ্ন করছেন, তেমনই বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, টানা আট বছর তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে পাঁশকুড়ার জন্য কোনও টাকা বরাদ্দ হয়নি। এ নিয়ে তারা মুখ খুলেছে। পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা অঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘সাংসদ দেব কি আদৌ জানেন, পাঁশকুড়া নামের কোনও জায়গা ওঁর উন্নয়ন এলাকার মধ্যে রয়েছে? যদি জানেন, তাহলে আট বছরে কেন পাঁশকুড়ার জন্য উনি এক টাকাও বরাদ্দ করলেন না? আবার ভোট এলে হয়তো ওঁকে পাঁশকুড়ায় দেখা যাবে।’’ যদিও তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি সুজিত রায় দাবি করছেন, ‘‘কোভিডের জন্য দু'বছর সাংসদ তহবিলে টাকা দেওয়া বন্ধ ছিল।পাঁশকুড়ার উন্নয়নের জন্য সাংসদ দেবের কাছে একাধিক প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement