100 days job

Purba Medinipur: ১০০ দিনের কাজের টাকা ঢুকছে ডাক্তার, মৃতদের অ্যাকাউন্টে! পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ

সম্প্রতি জেলায় ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ মেলায় নবান্নের নির্দেশে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা রাজ্যকে ফেরত দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
মহিষাদল শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২২ ১৮:৩৮
আবার জেলায় ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ।

আবার জেলায় ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ। প্রতীকী চিত্র।

১০০ দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন গ্রামের ডাক্তার থেকে বড়সড় ঠিকাদার। এমনকি, জব কার্ড দিয়ে মৃতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও টাকা ঢুকছে। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ করলেন গ্রামবাসীদের বড় অংশ। তাঁদের দাবি, যাঁরা কোনও দিন ১০০ দিনের কাজই করেননি, তাঁরা টাকা পাচ্ছেন। আবার কাজ হয়নি, এমন প্রকল্প দেখিয়েও টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এমনই পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের নাটশাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা। যদিও শাসক দলের দাবি, ‘‘এটা বিজেপি এবং সিপিএমের অপপ্রচার। তৃণমূলকে বদনাম করতেই এমন অভিযোগ তোলা হয়েছে।’’

স্থানীয়দের দাবি, জব কার্ডের মাধ্যমে টাকা প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন এলাকায় প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক গোপাল দাস ও সবিতা দাস। ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সবিতার প্রতিক্রিয়া, তিনি গৃহবধূ। বাড়ির কাজ ছাড়া বাইরে কোনও কাজে যান না। স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করলেও কোনও দিন ১০০ দিনের কাজ করেননি। তবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে কি না সেটার তার জানা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি। অন্য দিকে, এই টাকা প্রাপকের তালিকায় রয়েছেন পেশায় হাতুড়ে চিকিৎসক তপনকুমার মাইতি। তবে সেই চিকিৎসকের দাবি, তিনি ১০০ দিনের কাজ করেছেন। তাঁর কথায়, “আমার জবকার্ড রয়েছে। আমি ১০০ দিনের কাজ করেছি। তবে পুরোটা করিনি। আমি কাজের দেখাশোনা করেছি। বাম আমলেও আমি কাজের দেখাশোনা করতাম।” কিন্তু ১০০ দিনের কাজ দেখাশোনার জন্য ওই এলাকার যে সুপারভাইজার রয়েছেন, তাঁর বদলে কি টাকা পাচ্ছেন? প্রশ্ন শুনেই ওই তপন বলেন, “ডাক্তারির কাজে আয় খুব বেশি হয় না। তাই জবকার্ড করে রেখেছি। আবার কাজ এলে সেখানে যোগ দেব।”

Advertisement

অন্য দিকে, অভিযোগকারীদের মধ্যে নাটশালের বাসিন্দা অপর্ণা দাস বলেন, “কেউ ১০ দিন কাজ করলে, তাঁকে ২০ দিনের টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১০ দিনের টাকা নিয়ে যান পঞ্চায়েত সদস্য। তা ছাড়া কাউকে আবাস যোজনার টাকা দিলে তার অর্ধেকও পঞ্চায়েতের কয়েক জনকে দিতে হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রাপকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাহায্যের কোনও টাকাই ঢুকবে না।’’ মহিলার সংযোজন, ‘‘যাঁরা এই টাকার রফা করতে রাজি হয়নি, তাঁদের ভাঙা বাড়ির জন্য কোনও বরাদ্দই আসেনি।’’ তিনি আরও বলেন, “আমপান ঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়ে একটা পলিথিনও পাইনি। ভাঙা ঘরের জন্য ক্ষতিপূরণের আবেদন করেও পাইনি। কারণ, আমি কারও সঙ্গে টাকার রফা করতে যাইনি।”

এ নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তপন ব্যানার্জি বলেন, “নাটশাল ২ গ্রাম পঞ্চায়েত দুর্নীতির পাহাড় হয়ে উঠেছে। এখানকার প্রায় ১১৯ জন জব কার্ড প্রাপকদের তালিকা আমরা খুঁজে পেয়েছি, যাঁরা কোনও দিন কাজ করেননি অথচ, তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা ঢুকেছে। এঁদের মধ্যে মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে। আমরা এই তালিকা নিয়ে স্থানীয় ব্লক প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাব। প্রকাশ্যে কী ভাবে এমন দুর্নীতি চলতে পারে তা বোধগম্য নয়।’’

অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন পঞ্চায়েত সদস্য সুকুমার পাত্র। তাঁর দাবি, তাঁর এলাকায় এমন কোনও অভিযোগই নাকি পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এটা বিরোধীদের অভিযোগ। আমরা এমন কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত নই।” স্থানীয় সুপারভাইজার ঝর্না সিংহও সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জানান, জবকার্ড ছাড়া কেউই টাকা পায় না। কোনও ভুল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়নি। তাহলে ১১৯ জনের নামে ১০০ দিনের টাকার যে গরমিল রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে? সুপারভাইজারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘জবকার্ড ছাড়া কেউ টাকা পায়নি। কোনও অভিযোগ থাকলে প্রশাসন তার ব্যবস্থা নেবে।”

উল্লেখ্য, সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ মেলায় নবান্নের নির্দেশে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা রাজ্যকে ফেরত দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুন
Advertisement