CID

তৃণমূল নেতা খুনে তদন্তের ‘গতি’ বাড়াচ্ছে সিআইডি

ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির। সূত্রের খবর, তদন্তকারী সংস্থার একটি দল না কি সোমবার ওই এলাকায় গিয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২৩ ০৭:২৭
CID

—প্রতীকী ছবি।

এক তৃণমূল নেতা খুনের মামলা। তদন্তভার সিআইডি- র হাতে। সিআইডি কি তদন্তের ‘গতি’ বাড়াচ্ছে, জল্পনা। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ির। সূত্রের খবর, তদন্তকারী সংস্থার একটি দল না কি সোমবার ওই এলাকায় গিয়েছিল। একাধিক তৃণমূল নেতার ‘ঠিকুজিকুষ্ঠি’র খোঁজে। প্রয়োজনে কি তাঁদের ডেকে জেরা করবেন তদন্তকারীরা, জল্পনা।

Advertisement

তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে অবশ্য ‘স্পিকটি নট’ তদন্তকারী সংস্থা। এখনও তো ওই খুনের কিনারা হয়নি? মঙ্গলবার সিআইডি- র এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। এর বেশি কিছু বলব না।’’ খুনের নেপথ্যে কি ষড়যন্ত্র থেকে থাকতে পারে? সদুত্তর এড়িয়ে ওই কর্তার জবাব, ‘‘তদন্তে সবদিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ সূত্রের খবর, এই আবহে কেশিয়াড়ির এক তৃণমূল নেতা না কি নিজেকে ‘আড়ালে’ রেখেছেন। সহজে তাঁর গতিবিধি কাউকে বুঝতে দিচ্ছেন না। মোবাইল বন্ধ রেখেছেন তিনি। ওই নেতাকে কি জেরা করতে পারে তদন্তকারী সংস্থা, সেটা বুঝেই কি নিজেকে ‘লুকিয়ে’ রেখেছেন তিনি, জল্পনা শাসক শিবিরের একাংশে।

গত ১০ অগস্ট কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন হওয়ার কথা ছিল। সভাপতি, সহ সভাপতি নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। পরে কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন নিয়ে মামলাও হয়েছে কলকাতা হাই কোর্টে। মামলা ঠুকেছেন সমিতির ১৫ জন তৃণমূল সদস্য। এখানে সমিতির ২৭ জন সদস্যের মধ্যে তৃণমূলেরই ২৩ জন। এঁদের মধ্যে ‘আড়াআড়ি’ বিভাজন রয়েছে। তৃণমূলের একপক্ষ চেয়েছিল, সমিতির সভাপতি হোন ফটিক পাহাড়ি। আরেকপক্ষ চেয়েছিল সভাপতি হোক উত্তম শীট। জেলা নেতৃত্বের ‘হুইপ’ ছিল উত্তমকে সভাপতি করার। দলেরই একাংশ সেই ‘হুইপ’ মানেননি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত রাখা হয়। ঘটনাচক্রে, এর পরপরই ফটিককে দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সুবিচার চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূলের ১৫ জন জয়ী প্রার্থী। এঁদের মধ্যে রয়েছেন ফটিকও। বোর্ড গঠনের নির্ধারিত দিনে তাঁর পক্ষে ১৫ জন সমিতি সদস্য ছিলেন, এখনও কি তাঁর পক্ষে ১৫ জন সদস্য রয়েছেন? মঙ্গলবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ফটিকের সঙ্গে। তাঁর মোবাইল বন্ধ ছিল। ফটিকের অনুগামী বলে পরিচিত কেশিয়াড়ির এক তৃণমূল নেতার দাবি, ‘‘আমিও ওঁর (ফটিক) সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলাম। খুব জরুরি দরকার ছিল। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি। বাইরে কোথাও গিয়েছেন মনে হয়!’’

কোন মামলায় সিআইডি তদন্তের ‘গতি’ বাড়াচ্ছে বলে জল্পনা? মামলাটি তৃণমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় ওরফে ঝাড়েশ্বর সাঁতরার খুনের। মৃত্যুঞ্জয় দলের অঞ্চল সভাপতি ছিলেন। ঘটনা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের। পরের বছর অর্থাৎ, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন ছিল। নৃশংসভাবে খুন হয়েছিলেন ওই নেতা। কেশিয়াড়ির ডাডরা গ্রামের এই বাসিন্দা দলীয় বৈঠকে যোগ দিতে নছিপুরে গিয়েছিলেন। রাতে বাইকে করে ফিরছিলেন। ভসরাঘাটে ঢোকার সময়ে তাঁর উপর চড়াও হয়েছিল সশস্ত্র দুষ্কৃতী দল বলে অভিযোগ। তাঁকে লক্ষ্য করে তির ছোড়া হয়েছিল। পায়ে তির লাগায় বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। চোখ উপড়ে নেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। খুনের পর রাস্তার ধারে দেহ ফেলে রেখে দেয় দুষ্কৃতীরা। বিজেপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনে সরব হয়েছিল তৃণমূল। শুরুতে তদন্তে নামে পুলিশই। পরে তদন্তভার গিয়েছে সিআইডি- র হাতে।

তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘কেশিয়াড়ির ওই ঘটনার তদন্ত সিআইডি করছে বলে জানি। তবে আমি ওই সময়ে দলের সভাপতি ছিলাম না। তাই ওই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, ‘‘সর্বত্রই তৃণমূল বনাম তৃণমূল। কেশিয়াড়িতেও তাই। কারা ওই খুনের ঘটনায় যুক্ত তার সঠিক তদন্ত হোক। আসল সত্য সামনে আসুক।’’

আরও পড়ুন
Advertisement