—প্রতীকী ছবি।
সেই পুরনো কৌশল। ব্যাঙ্কে যে সুদ মেলে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে সুদের টোপ দিয়ে আকৃষ্ট করা হয়েছিল সাধারণ মানুষকে। গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করতে অধিক সুদে গচ্ছিত টাকা ফেরানোও হয় বেশ কয়েক বার। কিন্তু এ বার যখন টাকা ফেরতের সময় এসেছে, দেখা গেল চিটফান্ড সংস্থার অফিসে তালা! নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সংস্থার কারও হদিসও মিলছে না। সর্বস্বান্ত হয়ে শেষমেশ ‘বন্ধন মাল্টি স্টেট কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি’ নামে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার শতাধিক বাসিন্দা। আমানতকারীদের অভিযোগ, গত অগস্ট মাস থেকেই সংস্থার সব ক’টি শাখায় তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তমলুকের আমানতকারীদের দাবি, রামতারকহাট শাখাতেই প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলেন গ্রাহকেরা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০২১ সালে রামতারকহাট ব্যবসায়ী সমিতির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সংস্থার অফিসটি খোলা হয়েছিল। বছরে ১১ শতাংশ সুদ দেওয়ার টোপ দিয়ে শুরু হয় গ্রাহক ধরা। এলাকা থেকে টাকা তুলে বছরের শেষে রেকারিং পদ্ধতিতে সুদ সমেত তা গ্রাহকদের ফেরানোও হয়। গত বছর অনেকেই এ ভাবে টাকা ফেরত পাওয়ায় সাধারণ মানুষের বিশ্বাস আরও বেড়ে যায়। এ বছর টাকা রাখেন আরও অনেকে। অভিযোগ, এ বার টাকা ফেরতের সময়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে সংস্থার অফিসে। ‘প্রতারিত’ আমানতকারীদের দাবি, আশপাশের এলাকার বাকি শাখাগুলিতেও তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, সেগুলি গত অগস্ট মাস থেকে বন্ধ! গা ঢাকা দিয়েছেন সংস্থার কর্মী-এজেন্টরাও। এর পরেই আমানতকারীদের একাংশ পুলিশের দ্বারস্থ হন।
তমলুকের হোগলবেড়িয়ার বাসিন্দা পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বিমলকুমার মাইতি বলেন, ‘‘দিনে ১০০ টাকা রেখে গত বছর সবটাই ফেরত পেয়েছিলাম। এ বার নতুন করে আমি ও এলাকার বহু মানুষ টাকা রাখতে শুরু করি। কিন্তু এখন দেখছি, সংস্থাটাই আর নেই! আমার কাছ থেকে যিনি টাকা নিয়েছিলেন, সেই মহিলাও এজেন্টেরও খোঁজ পাচ্ছি না।’’
রামতারকহাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বীরেন্দ্রনাথ ধাড়ার দাবি, ‘‘এই সংস্থায় এলাকার বহু মানুষের প্রায় ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি জমা ছিল। সে সব ফেরত না দিয়েই সংস্থাটি উঠে গিয়েছে। তাঁদের অফিসঘর এখন তালা বন্ধ। সাধারণ মানুষেরা যাতে তাঁদের টাকা ফেরত পান, সেই দাবি জানাচ্ছি আমরা।” বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতরও শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃনমূল নেতা মৃত্যুঞ্জয় মান্নার দাবি, ‘‘রামতারকহাট শাখা ম্যানেজার সিপিএম নেতার ছেলে ছিলেন। তাঁরাই যোগসাজশ করেছেন। আমরা ঘুণাক্ষরেও এই প্রতারণার টের পাইনি। তা হলে আগে থেকেই আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারতাম।” পাল্টা সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সভাপতি নিরঞ্জন সিহির দাবি, “এই ঘটনার সঙ্গে সিপিএমের কোনও যোগ নেই।” তাঁর মতে, ‘‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, গোটা ঘটনার পিছনে তৃণমূলের লোকেরাই জড়িত। এই এলাকাগুলিতে তৃণমূলের একচেটিয়া ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে তৃণমূলের সহযোগিতা ছাড়া এমন একটি অবৈধ সংস্থা কী ভাবে টাকা তুলে নিয়ে গেল, তার তদন্ত হওয়া উচিত।”