Digha Jagannath Temple

অযোধ্যা আর দিঘা, দুই মন্দির মিলছে উপকরণ ও শিল্পীতে

মিলে যাচ্ছে অযোধ্যার রামলালা মন্দির আর দিঘার জগন্নাথ ধাম। দুই মন্দিরই সেজে উঠেছে এক উপকরণে, একই শিল্পীদের হাতে।

Advertisement
কেশব মান্না
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১২
পুরীর মন্দিরের আদলেই দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ ধাম।

পুরীর মন্দিরের আদলেই দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ ধাম। —ফাইল চিত্র।

দূরত্ব প্রায় হাজার কিলোমিটার। রাজনীতির ভাগাভাগিতেও তাদের অবস্থান দুই দিকে। সে সব ছাপিয়েও মিলে যাচ্ছে অযোধ্যার রামলালা মন্দির আর দিঘার জগন্নাথ ধাম। দুই মন্দিরই সেজে উঠেছে এক উপকরণে, একই শিল্পীদের হাতে।

Advertisement

পুরীর মন্দিরের আদলেই দিঘায় তৈরি হচ্ছে জগন্নাথ ধাম। আগামী ৩০ এপ্রিল তার উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যায় রামন্দির উদ্বোধন ঘিরে বিজেপি শিবির যখন মাতোয়ারা, তখনই তৃণমূল নেত্রী দিঘায় জগন্নাথ ধাম তৈরির ঘোষণা করেন। সেই সূত্রে এই দুই মন্দির জুড়ে গিয়েছে রাজনীতির ভাগাভাগিতেও।

পুরীর মতোই নাগর শৈলীতে তৈরি এই জগন্নাথ মন্দির কলিঙ্গ স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন হতে চলেছে। নির্মীয়মাণ এই মন্দির এবং অযোধ্যার রামমন্দির, দুটিই ‘সম্পূরা’ ঘরানায়, গোলাপি বেলেপাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে। দু’জায়গাতেই রাজস্থান থেকে আনা হয়েছে সেই গোলাপি বেলেপাথর। কারিগরেরাও
অনেকে একই।

প্রায় আটশো কারিগর দিঘায় এসেছিলেন মন্দির নির্মাণের কাজে। এঁরা মূলত রাজস্থানের বাসিন্দা। অযোধ্যায় রামমন্দিরের কাজেও এঁরা ছিলেন। এই সব কারিগরদের নিয়ে এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের ঠিকাদার শেখ আইজুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘‘বংশীপাহাড়পুর, আগ্রা এবং মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর কারিগর এসেছিলেন। এঁদের অনেকেরই অযোধ্যার রামমন্দিরে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। দিঘাতেও পাথর কেটে কেটে নানা নকশা ফুটিয়ে তুলেছেন এঁরা।’’ রাজ্যের তরফে দিঘার মন্দিরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ‘হিডকো’র এক ইঞ্জিনিয়ারও বললেন, ‘‘রাজস্থানের বংশীপাহাড়পুরের বেলেপাথর এনে কাজ হয়েছে। একই পাথর ব্যবহৃত হয়েছে রামমন্দিরের একটা বড় অংশে দেউল নির্মাণে। অযোধ্যায় কাজ করা কারিগরদের অনেকেই দিঘাতেও কাজ করেছেন।’’

পুরীর মন্দিরের অনুকরণে দিঘাতেও মূল মন্দিরে গর্ভগৃহ, নাটমণ্ডপ, জগমোহন এবং ভোগ মণ্ডপ রয়েছে। দেউলের নীচে রয়েছে গর্ভগৃহ। নাটমণ্ডপে প্রবেশ ও প্রস্থানের দরজায় কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দশাবতার মূর্তি। গর্ভগৃহে তৈরি হয়েছে রত্নবেদী। সেখানেই থাকবে জগন্নাথ, বলরাম আর সুভদ্রার মূর্তি। নাটমন্দিরের দেওয়ালেও পাথর কেটে কেটে নানা দেব-দেবীর মূর্তি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দিরের গায়ে অপূর্ব সব কারুকাজে পৌরাণিক নানা কাহিনির বর্ণনা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নকশা, ভাস্কর্য এবং দেবদেবীর মূর্তির প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হয়েছিল কারিগরদের হাতে। তারপর হিডকো-র ইঞ্জিনিয়ারদের মারফত জানানো হয় কোথায় কী নকশা হবে। বেশিরভাগ কারিগরই সেই মতো পুরীর মন্দির না দেখেই দিঘায় কাজ করেছেন। কীর্তি শেখাওয়াত, দেবদত্ত পাটিলের মতো কারিগররা বলেন, ‘‘পুরীর মন্দির কবে তৈরি হয়েছে তা জানি না। কোনও দিন চোখেও দেখিনি। শুধুমাত্র পেশাগত প্রশিক্ষণের জোরে যে কোনও ছবিই ফুটিয়ে তুলতে পারি।’’ কীর্তি জুড়লেন, ‘‘আমার দাদা দেবেন্দ্র অযোধ্যার রামমন্দিরেও কাজ করেছে। দিঘাতেও কাজ করে গিয়েছে।’’

এই সব কারিগরদের ঠিকাদার আইজুদ্দিন হেসে বলছিলেন, ‘‘একই পাথর, একই কারিগর। তফাৎ আর
কী রইল!’’

বিশ্বাসীরা বলেন, রাম আর জগন্নাথেও তো তফাৎ নেই। দুই-ই যে বিষ্ণুর অবতার।

Advertisement
আরও পড়ুন