গার্ডেনরিচের হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিছু দিন আগে কপালে চোট পেয়েছেন তিনি। তাঁর কপাল এবং নাকে সেলাই পড়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে ১০ দিন বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিলেন। সোমবার সকালে দেখা গেল মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মমতা। গাড়ি থেকে নেমে সরু গলি দিয়ে বেশ খানিকটা হেঁটে ঘটনাস্থলে যান তিনি। গার্ডেনরিচে গিয়েছেন কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়ও। রয়েছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর মমতা বলেন, ‘‘এটা খুব ঘিঞ্জি এলাকা। মন্ত্রীরা সারা রাত এখানে ছিলেন। প্রোমোটারদের একাংশ বেআইনি ভাবে বাড়ি তৈরি করেন। তার আগে ভাবা দরকার, আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁদের যাতে ক্ষতি না হয়। আমি শুনলাম, প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে এই বহুতলটি তৈরি করা হয়নি। এখন রমজান মাস চলছে। সকলে উপোস করে থাকেন। তা-ও সারা রাত এলাকার মানুষ উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর, দমকল, পুলিশ, কাউন্সিলররা সারা রাত ধরে কাজ করেছেন।’’
মমতা যোগ করেন, ‘‘আমরা মর্মাহত। দু’জন মারা গিয়েছেন। পাঁচ-ছ’জন এখনও আটকে। এক জনের পা আটকে। তবে তিনি বেঁচে আছেন। উদ্ধারকারীদের ভিতরে ঢুকতে সময় লেগেছে। এখন সকলে ঢুকে গিয়েছেন। শোকস্তব্ধ পরিবারের কাছে আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। যাঁরা বেআইনি কাজ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হবে। পরিবারের পাশে সরকার দাঁড়াবে। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, তৈরি করে দিতে বলব।’’
ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর হাসপাতালেও যান মমতা। সেখান থেকে বেরিয়ে বলেন, ‘‘হাসপাতালে যাঁরা আছেন, তাঁরা স্থিতিশীল।’’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালে গিয়েছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসুও।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গয়াল বলেন, ‘‘রাত থেকেই উদ্ধারকাজ চলছে। আশা করছি দ্রুত সকলকে বার করা যাবে।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে সকালে সমাজমাধ্যমে পোস্টও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিনি। ঘোষণা করা হয়েছে ক্ষতিপূরণও। সোমবার সকালে মমতা এ বিষয়ে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, আমি তাতে শোকাহত। আমাদের মেয়র, দমকলমন্ত্রী, পুলিশ কমিশনারের সেক্রেটারিয়েট, সিভিক পুলিশ, দমকল এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দল সারা রাত ধরে ঘটনাস্থলে রয়েছেন। তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।’’
ওই পোস্টেই মমতা আরও লেখেন, ‘‘মৃতদের পরিবারকে এবং আহতদের আমরা ক্ষতিপূরণ দেব। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশেই আছি। উদ্ধারকাজ চলছে।’
এর আগে ঘটনাস্থল থেকে মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারপিছু পাঁচ লক্ষ টাকা এবং আহতদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বহুতলটি যে বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছিল, তা তিনি মেনে নিয়েছেন। প্রোমোটারকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ফিরহাদ জানিয়েছেন, বাম আমল থেকে গার্ডেনরিচ এলাকায় বেআইনি নির্মাণ একটি রীতিতে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘বাম আমল থেকে এখানে বেআইনি নির্মাণ হয়ে আসছে। তখন বহুতল নির্মাণের জন্য প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমতি পেতে সমস্যা হত। বিএলআরও অফিসে গিয়ে জুতো ক্ষয়ে যেত। তাই নির্মাতারা বেআইনি পথ ধরতেন। কিন্তু এখন আমরা পদ্ধতি অনেক সহজ করে দিয়েছি। তা-ও কেন কেউ কেউ এই পথ ধরছেন, জানি না। আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাঁদের বিরুদ্ধে।’’
ফিরহাদ ঘটনাস্থলে সারা রাত ছিলেন। তিনি ওই এলাকার বিধায়কও। তাঁর সঙ্গে দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুও ছিলেন রাতে। ভাঙা বহুতলের কংক্রিটের চাঙড় সরিয়ে এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। দু’জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন মেয়র। তাঁর কথায়, ‘‘যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেখানে ২১ জন ছিলেন। ১৩ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। সাত জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক জন রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে।’’
গার্ডেনরিচের ঘটনায় ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। শুভেন্দু অধিকারী রাতেই এক্সে লেখেন, ‘‘গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচ তলা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এই এলাকাটি কলকাতার মেয়র এবং রাজ্যের মাননীয় পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত। আমি পুলিশ, রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বলব অবিলম্বে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে উদ্ধারকাজে নিয়োগ করতে। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আমার কাছে অনেক ফোন আসছে।’’