সোমে উদ্বোধন আর মঙ্গলে প্রথম দিনের দর্শনেই পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ রামমন্দিরে। ছবি: পিটিআই।
সোমে উদ্বোধন আর মঙ্গলে প্রথম দিনের দর্শনেই পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ রামমন্দিরে। তবে সেই ভিড় সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হয়েছে প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরের আগেই দর্শনার্থীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলায় পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পথে হাঁটল অযোধ্যা প্রশাসন। মঙ্গলবারেই সন্ধ্যা ৭টার পরিবর্তে রাত ৯টা পর্যন্ত রামলালার দর্শন চলেছিল। আর বুধবার থেকে নতুন নিয়ম। সকাল ৬টা থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে দর্শন। চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। মাঝে সাড়ে ১১টায় ভোগ আরতি এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সন্ধ্যারতির সময়ে কিছুক্ষণের জন্য দর্শন বন্ধ রাখা হলেও মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, আগে ঠিক ছিল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত দর্শন বন্ধ থাকবে। শুরুর সময়টা ছিল সকাল ৭টা। আর শেষ সন্ধ্যা ৭টা। অন্য দিকে, বুধবার থেকে অযোধ্যা ধাম স্টেশন চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত রেলের যা সিদ্ধান্ত, তাতে বুধবার কোনও ট্রেন ঢুকবে না অযোধ্যায়। এমন চলতে পারে আরও দু’দিন।
মঙ্গলবার পাঁচ লাখ মানুষ দর্শন করে ফেললেও তাঁদের একটা বড় অংশ এখনও অযোধ্যাতেই রয়ে গিয়েছেন। বুধবারে দর্শন হতে পারে আরও কয়েক লাখ মানুষের। এই পরিস্থিতিতে নতুন করে কোনও পুণ্যার্থীকে অযোধ্যায় ঢুকতে দিতে চায় না প্রশাসন। তবে সকলকে আটকানো যে যাবে না, সেটাও জানে পুলিশ-প্রশাসন। পাশের জেলা বরাবাঁকিতে অনেককে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বহু মানুষ সড়কপথে বরাবাঁকি হয়ে অযোধ্যায় ঢুকতে চেয়েছিলেন। তাঁদের লখনউয়ের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অযোধ্যার এখনকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্তত ২৬ জানুয়ারি, শুক্রবার পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তত ক্ষণ পর্যন্ত যাতে নতুন করে কেউ এই শহরে না চলে আসেন, সেটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তবে পুলিশকে স্বস্তি দিচ্ছেন ভক্তেরা। মঙ্গলবারের ঘটনার পরে অনেকটাই সচেতন রামভক্তেরা। ‘জয় শ্রীরাম’, ‘জয় সিয়ারাম’ ধ্বনি একনাগাড়ে চললেও মন্দির দর্শনের লাইনে সকলেই শান্ত। ধীর লয়ে হলেও লাইন এগোচ্ছে মন্দিরের দিকে।
শুধু মন্দির দর্শনের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়াই নয়, কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় এসে বৈঠক করার পর আরও বেশি পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মন্দির চত্বরেই রয়েছেন এক হাজার জওয়ান। উত্তরপ্রদেশের স্বরাষ্ট্র দফতরের মুখ্যসচিব সঞ্জয় প্রসাদ নিজে অযোধ্যায় রয়েছেন। রয়েছেন ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) প্রশান্ত কুমার। দর্শনার্থীদের সামলাতে সিআরপিএফ জওয়ানরাও কাজ করছেন। নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডেপুটি কমান্ড্যান্ট অরুণকুমার তিওয়ারি।
রামমন্দিরে যাওয়ার জন্য তৈরি ‘ভক্তিপথ’-এর শুরুতে যে মূল ফটক, তার অনেক আগে থেকেই পুলিশ ‘চ্যানেল’ তৈরি করেছে। নির্দিষ্ট লাইন দিয়েই দর্শনার্থীদের ভিতরে ঢুকতে হচ্ছে। মন্দিরে যাতে কেউ কোনও সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করতে না পারেন, তার জন্য অতিরিক্ত নজরদারি চলছে। সেই সঙ্গে নাগাড়ে ঘোষণা, ‘‘সকলেই রামলালার দর্শনের সুযোগ পাবেন। ধীরে ধীরে চলুন। কেউ তাড়াহুড়ো করবেন না।’’ একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রবীণ ও শারীরিক ভাবে অক্ষমদের এখন আর অযোধ্যায় আসতে দেওয়া যাবে না। সেই মর্মেও ঘোষণা চলছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী দু’সপ্তাহ এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। শহরে থাকা দর্শনার্থীদের কাছেও পুলিশের আবেদন, সকলে একই দিনে না দেখে ভাগে ভাগে আসুন মন্দিরে। একনাগাড়ে মাইকে বলা হচ্ছে, ‘‘সকলেই দর্শনের সুযোগ পাবেন।’’ তবে সেই ঘোষণা নিয়ে আপত্তিও খুব একটা নেই। যেমন বাংলার নদিয়া থেকে আগত ‘রামভক্ত’ শিবশঙ্কর যাদবের বক্তব্য, ‘‘অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এই মন্দিরের জন্য। এখন দর্শনের জন্য একটু অপেক্ষা করলে ক্ষতি কী! বড় দুর্ঘটনা হলে তো নিন্দার কমতি থাকবে না।’’
বুধবার সকালের লাইনে অবশ্য অনেক প্রবীণকে দেখা গিয়েছে। তাঁদেরই এক জন মহন্ত পরমাত্মানন্দ। উত্তরাখণ্ড থেকে এসেছেন। বয়সের ভারে ন্যুব্জ সন্ত জানালেন, ভোরবেলা সরযূতে স্নান করে লাইনে এসে দাঁড়িয়েছেন। তবে হেঁটে আসতেই তাঁর ঘণ্টা তিনেক সময় লেগে গিয়েছে। বললেন, ‘‘প্রভু রামজির সাক্ষাৎ পেতে চার দিন থেকে অযোধ্যায় রয়েছি। মঙ্গলবার ভিড় দেখে সাহস করতে পারিনি। আজ লাইনে দাঁড়িয়ে গিয়েছি। দর্শন করেই যাব।’’ শুধু বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই নন, লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছেন শিশু কোলে মা-ও। প্রচণ্ড শীতের মধ্যেও প্রায় সকলেই সরযূ নদীতে ডুব দিয়ে এসেছেন। লাইন শুরু হয়েছে ভোর ৩টে থেকে।