প্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখার কথা জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।
সরকারি ভাবে এখনও স্পষ্ট করা না হলেও, বেসরকারি মতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গিতে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা আড়াই হাজার ছাড়িয়েছেএবং মৃত্যুর সংখ্যা সাত। ফলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন, এমন পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক ভাবে পদক্ষেপ করা খুব জরুরি। এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ে। তবে তাঁর মতে, ডেঙ্গি সমস্যা আসছে প্রধানত বাইরে থেকে। মমতা বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে আসছে। বেশি পাওয়া গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটা ইত্যাদি এলাকায়।’’
এই পরিস্থিতিতে এ দিনই ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে দুই পর্যায়ে বৈঠক করল রাজ্য সরকার। স্থির হয়েছে, সর্বস্তরে ডেঙ্গি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসারপ্রস্তুতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখতে হবে। সঙ্গে থাকবে এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখা এবং সচেতনতা প্রচারের কাজ। সরকারি হাসপাতালে নিখরচায় ডেঙ্গি পরীক্ষার সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
এ দিনই সব জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিক, হাসপাতালের সুপারদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। পরেবিকেলে সব জেলা-কর্তাদের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীও। স্থির হয়েছে, প্রতিটি হাসপাতালে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ‘ফিভার ক্লিনিক’ চালু রাখতে হবে সর্বক্ষণ। কেউ জ্বর নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। জ্বরের রোগীকে চিহ্নিতকরতে রেজিস্টারে নথিবদ্ধ করতে হবে। সেটি দেখাশোনার দায়িত্ব এক জন সহকারী সুপারের। ২৪ ঘণ্টার পরীক্ষাগারে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করে তার ফলাফল পাওয়া নিশ্চিতকরতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। প্রত্যেক রোগীর স্বাস্থ্য, তাঁর চাহিদা ইত্যাদি নথিবদ্ধ করা এবং নজরদারিতে পৃথক ভাবেঅতিরিক্ত সুপারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাসপাতালগুলি এবং ব্লাড ব্যাঙ্কে অণুচক্রিকার (প্লেটলেট)জোগানে যাতে কোনও ঘাটতি না থাকে। ভর্তি হওয়া রোগীর শয্যার টিকিটে চিকিৎসার তথ্য বিস্তারিত ভাবে নথিবদ্ধ করতে হবে। সেই রিপোর্ট প্রতিদিন পাঠাতে হবে স্বাস্থ্য দফতরে। এমনকি, এই পরিস্থিতিতে কী করতে হবে(ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট), কী হবে বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগে— তার রেকর্ড রাখতে হবে। প্রতিদিন ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা কেমন থাকছে, তা পর্যালোচনা করতে হবে সব হাসপাতালের শীর্ষকর্তাকে। সেই তথ্য জানাতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকে।
পরে মুখ্যসচিবের বৈঠকে স্থির হয়েছে, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে ব্লক স্তর পর্যন্ত প্রশাসনিক সমন্বয়নিশ্চিত করতে দফতরগুলির মধ্যে নিয়মিত সমন্বয়ের ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। প্রস্তুতি বা মোকাবিলার দিকগুলিও খতিয়ে দেখবেন আধিকারিকেরা। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি পুরসভা এলাকায় পরিচ্ছন্নতা অভিযানের উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। ১২৯টিপুরসভা এলাকায় প্রতি সপ্তাহে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পদ্ধতি ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত, তা চলবে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। একই ভাবে চলবে মশার লার্ভা নষ্ট করার প্রক্রিয়া। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্যপ্রতিটি পুর এলাকায় ৬২৪টি বিশেষ দল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব। মশার লার্ভা নষ্ট করার জন্য জেলাগুলিকে বিশেষমাছ দেওয়া হয়েছে। আরও ২.২৫ কোটি দেওয়া হবে আগামী এক মাসের মধ্যে।
নবান্ন জানিয়েছে, ন’হাজার চিকিৎসককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তৈরি রাখা হয়েছে আশাকর্মীদেরও। আধিকারিকদের বিশেষ দল ডেঙ্গি উপদ্রুত এলাকা এবং হাসপাতালগুলিতেনিয়মিত পর্যবেক্ষণ করবে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের। অগস্ট থেকে মাসে দু’বার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ পালন করা হবে সর্বত্র।রেল-বন্দর-সহ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলিকেও পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দিয়েছে নবান্ন। ডেঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় এক লক্ষ বিশেষ মশারি দেওয়া হবে সরকারের তরফে। জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, গোটা ব্যবস্থাপনার উপরে নিয়মিত নজরদারি চালাতে।
এ দিকে, ডেঙ্গি নিয়ে যে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী করেছেন, সেই প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘ওঁর উচিতঅবিলম্বে চার্টার্ড বিমান নিয়ে ঢাকা যাওয়া। সঙ্গে ক্যানিংয়ের শওকত মোল্লা, ভাঙড়ের আরাবুল ইসলাম, ফলতার জাহাঙ্গিরদের নিয়ে যাবেন। কারণ, সীমান্ত এলাকায় এঁরা কাজকর্ম করেন, কে কী ভাবে ঢুকবে না ঢুকবে, নিয়ন্ত্রণ করেন। ডেঙ্গিবাংলাদেশ থেকে এলে এঁদেরও ব্যাপারটা দেখা উচিত। এই প্রতিনধিদল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আলোচনায় বসুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে!’’