(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। সোমবার রেড রোডে ইদের নমাজে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রতি বারের মতো এ বছরেও রেড রোডে ইদের নমাজে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যোগ দেবেন, তা জানাই ছিল। কিন্তু তৃণমূলের অন্দরে কৌতূহল ছিল, অন্যান্য বারের মতো এ বারেও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইদ-নমাজে তাঁর সঙ্গী হন কি না। বিশেষত, যখন গত কয়েক মাস ধরে তৃণমূলের মধ্যে শীর্ষ স্তরের ‘সমীকরণ’ নিয়ে জল্পনা চলেছে। কখনও অভিষেক ‘দূরত্ব’ রচনা করেছেন। কখনও মমতা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনিই তৃণমূলে ‘শেষ কথা’। তবে মুখ্যমন্ত্রীর ইংল্যান্ড সফরের আগে দু’জনের মধ্যে সমীকরণ অনেকটাই ‘মসৃণ’ হয়েছিল বলে শাসকশিবিরের অন্দরের খবর ছিল। তা আরও বেশি প্রামাণ্য রূপ পেয়েছিল অভিষেক দলের প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রতিনিধিকে নিয়ে একটি ‘ভার্চুয়াল বৈঠক’ করায়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ প্রজন্মের নেতা সুব্রত বক্সী। যে বৈঠকে বক্সী অভিষেককে ‘আমাদের সকলের নেতা’ বলে অভিহিত করেন।
সেই আবহেই অভিষেক এ বারেও ইদের নমাজে মমতার সঙ্গে রেড রোডে আসবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল। বাস্তবেও তেমনই ঘটেছে। ফলে হাঁপ ছেড়েছে তৃণমূলের একটি অংশ। প্রায় ছ’মাস পরে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল মমতা-অভিষেককে। ৩৪ দিন পর সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি হল।
সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ রেড রোডে যান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক এবং মন্ত্রী জাভেদ খান। মমতা এবং অভিষেক সমাবেশে বক্তৃতাও করেন। দু’জনের বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই ছিল রাজ্যে এবং দেশে সম্প্রীতিরক্ষার আহ্বান। একই সঙ্গে ‘গোলমাল’ পাকানোর চেষ্টা করার জন্য কেন্দ্রের শাসকদলকেও নিশানা করেন তাঁরা। মমতা এক ধাপ এগিয়ে সিপিএম-বিজেপিকে একই বন্ধনীতে ফেলে আক্রমণ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “লাল আর গেরুয়া এক হয়ে অশান্তি করছে। আমরা বিভাজনের রাজনীতি করি না। ধর্মের নামে ব্যবসা করে কিছু রাজনৈতিক দল।” ভাষণে বরাবরের মতোই সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, সব ধর্মের প্রতিই তিনি সমান শ্রদ্ধাশীল। উপস্থিত সকলকে সাবধান করে জানান, কেউ কেউ গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছেন। প্ররোচনায় যেন কেউ পা না-দেন। সেই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, “কেউ গোলমাল পাকাতে এলে মনে রাখবেন, দিদি আছে।”
রেড রোড থেকে পার্ক সার্কাস যান মমতা এবং অভিষেক। যান রিজওয়ানুর রহমানের বাড়িতেও। রিজওয়ানুরের মূর্তিতে মাল্যদান করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা।
সাম্প্রতিক লন্ডন সফরের প্রসঙ্গও উত্থাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জানিয়ে দেন, ইদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে তিনি বিদেশের একটি অনুষ্ঠান বাতিল করে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বাইরে যাওয়া জরুরি নয়। আমাদের লোকেদের শুভকামনা জানানোটা জরুরি।” অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এনে ‘বাম-রাম’কে খোঁচা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সংযোজন, “কয়েক জন কলকাতা থেকে টিকিট কেটে গিয়ে প্রশ্ন করেছিল, আপনি কি হিন্দু? আমি গর্বের সঙ্গে বললাম, আমি হিন্দু, আমি মুসলিম, আমি শিখ, আমি ইসাহি। আমি এক জন ভারতীয়।” মুখ্যমন্ত্রীর পরেই বক্তৃতা করেন অভিষেক। মুখ্যমন্ত্রীর সুরে তিনিও কোনও প্ররোচনায় পা না-দেওয়ার আহ্বান জানান। কেউ গোলমাল পাকাতে এলে রেয়াত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি। অভিষেক বলেন, “মৃত্যু পর্যন্ত একতা বজায় রাখতে হবে। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে।”