মহুয়া মৈত্র-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।
কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জানিয়ে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছিলেন নদিয়ারই ছয় বিধায়ক। সোমবার বিধানসভায় তা নিয়ে সরাসরি মমতার কাছে নালিশ জানান তাঁরা। কিন্তু তৃণমূল পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, ‘আপাতত’ দলের সর্বময় নেত্রী মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে চাননি। সূত্রের খবর, বিধায়কদের বলা হয়েছে, মমতা প্রতিটি জেলা নিয়ে পৃথক ভাবে বৈঠক করবেন। নদিয়া বা কৃষ্ণনগরের বৈঠক যখন হবে, তখন এ বিষয়ে যা কথা হওয়ার হবে। এখন কিছু নয়।
মহুয়া যেমন সাংসদ, তেমনই দলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতিও। আপাতত তিনি সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের জন্য দিল্লিতে রয়েছেন। মহুয়ার বিরুদ্ধে মমতার কাছে যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা হলেন করিমপুরের বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহরায়, চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান, নাকাশিপাড়ার বিধায়ক কল্লোল খাঁ, পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য (যিনি সম্প্রতি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন পেয়েছেন), কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাস এবং কালীগঞ্জের বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ (লাল) ওই অভিযোগপত্রে সই ছিল না তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা এবং কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের। যিনি এখন অসুস্থ অবস্থায় কাঁচরাপড়ার বাড়িতে। উল্লেখ্য, মুকুল ২০২১ সালের ভোটে বিজেপির হয়ে জিতলেও ভোটের দেড় মাসের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।
যে বিধায়কেরা চিঠি দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে করিমপুর বিধানসভাটি পড়ে মুর্শিদাবাদ লোকসভার মধ্যে। যেখানে ২০১৬ সালে প্রথম জিতেছিলেন মহুয়া। তবে করিমপুর আবার তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার মধ্যে পড়ে। যার সভাপতি মহুয়া নিজেই। সাংসদ তথা জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে বিধায়কদের অভিযোগ, তাঁদের ‘এড়িয়ে’ মহুয়া ব্লক সভাপতি এবং অঞ্চল সভাপতি বদল করে দিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট বিধায়ককে না জানিয়ে তাঁদের এলাকায় মহুয়ার যখন তখন চলে যাচ্ছেন। সাংসদের বিরুদ্ধে বিধায়কদের এ-ও অভিযোগ ছিল যে, তিনি বেশ কিছু সংখ্যালঘু মহল্লায় ‘সমাজবিরোধীদের’ সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন এবং বিধায়কদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীকে উস্কানি দিচ্ছেন। যা সার্বিক ভাবে সাংগঠনিক জেলার রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরি করছে। মহুয়াকে জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ারও দাবি তুলেছিলেন তাঁরা।
মহুয়ার হিতৈষীদের তরফে অবশ্য এই সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। বরং তাঁরা বলছিলেন, এলাকার সাংসদ হিসেবে মহুয়া তাঁর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত যে কোনও কেন্দ্রে যে কোনও সময়ে যেতেই পারেন। তিনি সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটারদেরও সাংসদ।
তবে দলনেত্রী মমতা মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আপাতত বিধায়কদের ‘শান্ত’ করেছেন। পাশাপাশিই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এখনই কোনও রদবদল হচ্ছে না। কৃষ্ণনগর নিয়ে যখন বৈঠক হবে, তখনই এই বিষয়ে কথা বলবেন তিনি। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরেই তৃণমূল বেশ কয়েকটি প্রশাসনিক জেলায় একাধিক সাংগঠনিক জেলা তৈরি করেছিল। সেই সময়েই নদিয়াকে রানাঘাট এবং কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করেছিলেন তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব। যখন নদিয়া জেলা কমিটি ছিল, তখনও দলের নেতাদের কোন্দল নিয়ে মমতাকে বহু বৈঠক করতে হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে নদিয়ার সব পক্ষকে নবান্নে ডেকে বৈঠক করেছিলেন মমতা। তবে সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত হওয়ার পরে সেই প্রবণতা কিছুটা কমেছে বলেই অভিমত তৃণমূলের প্রথম সারির নেতৃত্বের।