সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আরজি কর মামলার শুনানি। ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রসঙ্গে আদালতে বলা হয়, “২৩ জন মারা গিয়েছেন। ৬০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাঁরা কাজে ফিরছেন না। এই আদালত গত শুনানিতে কাজ শুরু করতে বলেছিল। পুলিশের অনুমতি ছাড়াই যে কোনও জায়গায় প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। ৪১ জন পুলিশকর্মী আহত। এক জন পুলিশের চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।” চিকিৎসকদের আইনজীবী তখন জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়ে দিয়েছেন, চিকিৎসকদের অবিলম্বে কাজে যোগ দেওয়া উচিত। তাঁর মন্তব্য, “তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া পদক্ষেপ হবে না, আমরা তো বলেছি। ওই ডাক্তারেরা কাজে যোগ না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে রাজ্য কোনও পদক্ষেপ করলে আমরা বাধা দিতে পারব না।” প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, আগামিকালের মধ্যে ডাক্তারদের কাজে যোগ দিতে হবে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না রাজ্য। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগসুবিধা জেনে পদক্ষেপ করতে হবে রাজ্যকে।
প্রধান বিচারপতি সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন, চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করতে হবে সিআইএসএফকে। রাজ্যের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, “হাসপাতালে কত বরাদ্দ করা হয়েছে, তা জানতে চাই না। ওই হাসপাতালে কী করা হয়েছে, সেটি জানতে চাই।” হাসপাতালে কী কাজ হয়েছে, সে বিষয়ে পরবর্তী শুনানিতে রাজ্যকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মন্তব্য, “মেডিক্যাল কলেজের মাথায় ডিস্ট্রিক কালেক্টরদের নিয়োগ করুন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে আমাদের জানান।”
প্রধান বিচারপতি জানান, আগে সিবিআইকে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে দেওয়া হোক। তার পর সব পক্ষ নিজেদের প্রশ্ন তাঁদের কাছে রাখতে পারবে। ফিরোজ এডুলজির বক্তব্য, “বলা হচ্ছে, মৃতার পা ৯০ ডিগ্রি কোণে ছিল। কোমরের ভাঙা না হলে এটা সম্ভব নয়।” ঘটনার এক মাস পরেও মৃত্যুর সময় কেন জানা গেল না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আইনজীবীর। হাসপাতালের শৌচালয়ের সব টাইল্সও বদলে ফেলা হয়েছে বলেও সোমবার আদালতে জানান এডুলজি। তাঁর দাবি, ফলে অভিযুক্তের লুমিনেল পরীক্ষা করানো হলেও কিছু পাওয়া যাবে না। প্রধান বিচারপতিও জানতে চান, মৃতদেহ কখন ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তার চালান কোথায়, সে নিয়েও প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির।
সিবিআইয়ের তরফে সোমবার গুরুতর সংশয় প্রকাশ করা হয় আদালতে। সিবিআইয়ের বক্তব্য, “এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথম ৫ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা ৫ দিন পরে গিয়েছি। তখন কিছু পাল্টে গিয়েছে।” এডুলজিও প্রশ্ন তোলেন, এফআইআর দায়ের না করে কী ভাবে তদন্ত শুরু হল? এফআইআর দায়ের নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। হতে পারে সেই তথ্য নষ্ট করা হয়েছে।” জেনারেল ডায়েরি এন্ট্রি করার সময়ও ভুল বলে দাবি এডুলজির।
সঠিক ভাবে ময়নাতদন্ত হয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি। তখন সিবিআইয়ের তরফেও জানানো হয়, ময়নাতদন্ত কখন করা হয়েছে— সেই সময়ের উল্লেখ নেই। যদিও রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তি, সব কিছু উল্লেখ রয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতির এজলাসে এডুলজি বলেন, “দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শুধুমাত্র ১০ বার জিডি এন্ট্রি করা হয়েছে। পুরোটা পরে তৈরি করা হয়নি তো? অনেক রহস্য রয়েছে।” সেই সংশয়ের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সন্দেহ হলে তাঁর কাছে রিপোর্ট চাওয়া হোক। সিবিআইয়ের তরফও আদালতে জানানো হয়, ফরেন্সিক রিপোর্ট নিয়ে তাদের মনেও প্রশ্ন রয়েছে। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেটি এমসে পাঠাতে চায়।
সুপ্রিম কোর্টে সোমবার আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি মন্তব্য করেন, “রাত পৌনে ১২টায় এফআইআর দায়ের হয়েছিল। গত ২৭ বছরের কর্মজীবনে আমি এমন মামলা দেখিনি।” তিনি এক জনস্বার্থ মামলাকারীর পক্ষে সওয়াল করছেন আদালতে। তিনি আরও বলেন, “ময়নাতদন্তের পুরো রিপোর্ট দয়া করে খতিয়ে দেখুন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উপস্থিত চিকিৎসকেরা একটি লবির।”
আরজি করে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত বিষয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে আবারও অসহযোগিতার অভিযোগ জানাল কেন্দ্র। কেন্দ্রের তরফে সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে জানানো হয়, আরজি করে তিন কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সহযোগিতা করছে না। উল্লেখ্য, এই অভিযোগটি নিয়ে আগেই সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল কেন্দ্র। সোমবার প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র দফতরের সিনিয়র অফিসার এবং সিআইএসএফের সিনিয়র অফিসারেরা আলোচনা করে পুরো বন্দোবস্ত করবেন। আদালতের নির্দেশ, সোমবারই রাত ৯টার মধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সিআইএসএফকে দেবে রাজ্য।
আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। তার মধ্যে সিবিআইকে ফের তদন্তের স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি বললেন, “ওপেন কোর্টে কিছু মন্তব্য করতে চাই না, যাতে তদন্তে প্রভাব পড়ে। তদন্তের আবার স্টেটাস রিপোর্ট দিন।” তদন্তে নতুন কী কী তথ্য উঠে এল, তা নিয়ে স্টেটাস রিপোর্ট জমা দেবে সিবিআই। ১৭ সেপ্টেম্বর (আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার) এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল সোমবার সুপ্রিম কোর্টে বলেন, “সকাল সাড়ে ৯টায় দেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ফরেন্সিক রিপোর্ট বলছে, দেহ যখন পাওয়া গিয়েছিল, তখন তা অর্ধনগ্ন অবস্থায় ছিল। তাঁর দেহে ক্ষতচিহ্ন ছিল। ওই সব নমুনা এমস বা অন্য কোনও ল্যাবরেটরিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিবিআই।”
আরজি করের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজে অভিযুক্তকে প্রবেশ করতে এবং বার হতে দেখা গিয়েছিল। ফলত, ভোর সাড়ে ৪টে থেকে ফুটেজ থাকার কথা। ওই ফুটেজ কি সিবিআইকে দেওয়া হয়েছিল? জানতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়। জবাবে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, ২৭ মিনিটের মোট চারটি ক্লিপিং দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।
কখন তল্লাশি চলেছিল এবং অকুস্থল থেকে তদন্তের প্রয়োজনে কখন বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, তা-ও জানতে চান প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। জবাবে রাজ্য জানায়, রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ১১টা পর্যন্ত তল্লাশি ও বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা কখন যুক্ত করা হয়েছিল। জবাবে রাজ্যের তরফে বলা হয়, দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল। এর পর দুপুর ২টো ৫৫মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা যুক্ত করা হয়েছিল। জেনারেল ডায়েরি কখন করা হয়েছিল, সেই তথ্যও জানতে চায় আদালত। রাজ্য জানায়, জেনারেল ডায়েরিও ২টো ৫৫মিনিটেই করা হয়েছিল।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সোমবার শুনানি পর্বে জানতে চান, আরজি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বাড়ি থেকে হাসপাতালের দূরত্ব কত? জবাবে সিবিআইয়ের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, “১৫-২০ মিনিটের পথ। চাইলে আপনারা রিপোর্টের সঙ্গে চার্টটি দেখতে পারেন।”
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাজ্যের একাধিক হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারেরা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। সোমবার রাজ্যের আইনজীবী জানান, চিকিৎসকেরা কাজ না করায় ২৩ জন মারা গিয়েছেন।
শুরু হল আরজি কর মামলার শুনানি। সোমবার প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি পর্বের শুরুতেই স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিল সিবিআই। মুখবন্ধ খামে জমা পড়া স্টেটাস রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টে বসল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ। সোমবার বেলা পৌনে ১১টার কিছু আগে বেঞ্চ বসেছে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে আরজি করে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানি।
(বিধিবদ্ধ অনুমতি সংগ্রহ করে ভার্চুয়াল মাধ্যমে আদালতের এই শুনানিতে উপস্থিত ছিল আনন্দবাজার অনলাইন )
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই রাজভবনের এক সূত্রকে উল্লেখ করে জানিয়েছে, রাজ্যপাল বোস যোগাযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তখনই মুখ্যমন্ত্রীকে দ্রুত মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকার জন্য বলেছেন তিনি। কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের অপসারণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন বলে ওই সূত্রের দাবি।
সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর-কাণ্ডের দ্বিতীয় মামলার শুনানির ঠিক আগের রাতেই কলকাতা ও শহরতলিতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন সাধারণ মানুষ। রাত জেগেছেন শহরবাসী। গানে, স্লোগানে, মানববন্ধনে ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছেন তাঁরা।
খুন ও ধর্ষণ মামলার প্রথম শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল আরজি করের নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য। কিন্তু বাহিনী মোতায়েনের ক্ষেত্রে রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে কেন্দ্র। সম্প্রতি সেই নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অভিযোগ, যে সিআইএসএফ জওয়ানদের আরজি করে মোতায়েন করা হয়েছে, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেনি রাজ্য সরকার। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের উল্লেখ, শীর্ষ আদালতে জমা দেওয়া হলফনামায় এই ঘটনাকে ‘অমার্জনীয়’ বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
আরজি করে আর্থিক দুর্নীতির মামলায় তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ওই মামলা প্রথমে রাজ্য পুলিশ তদন্ত করছিল, তবে হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই অবস্থায় সন্দীপ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আর্থিক দুর্নীতির মামলার তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে শীর্ষ আদালতে।