অবস্থানে জুনিয়র ডাক্তারেরা। —ফাইল চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, “আমরা সবাই আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।” আর এক জুনিয়র ডাক্তারের কথায়, “আমরা বিচার চাই। আমরা ইচ্ছা করে কর্মবিরতির পথে হাঁটছি না।”
জুনিয়র ডাক্তারদের ফের বৈঠকে ডাকল নবান্ন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নবান্ন সভাগৃহে এই বৈঠক হওয়ার কথা। তবে রাজ্যের আহ্বানে জুনিয়র ডাক্তারেরা সাড়া দেবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। রাজ্যের তরফে মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ জুনিয়র ডাক্তারদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, বৈঠকে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসকদের ১৫ জন প্রতিনিধি বৈঠকে যোগ দিতে পারবেন। তবে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হবে না বলে জানিয়েছে নবান্ন। তার পরিবর্তে হবে রেকর্ডিং। আন্দোলনকারীরা বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করার শর্ত দিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩টের পর ধর্নায় বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। স্বাস্থ্য ভবনের সামনে তার পর থেকে টানা অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। দফায় দফায় ইমেল চালাচালি হয়েছে। কখনও নবান্ন থেকে ইমেল এসেছে, বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে। কখনও পাল্টা শর্ত দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু বৈঠক নিয়ে সমাধানসূত্র এখনও বার হয়নি।
সন্ধ্যায় বৈঠকের জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। চন্দ্রিমা সন্দেহ প্রকাশ করেন, এই আন্দোলনের মধ্যে রাজনীতি জড়িয়ে গিয়েছে। তিনি আরও বলেন, “রাজ্য সরকার খোলা মনে বসতে চাইছে। কোনও শর্ত সাপেক্ষে নয়। খোলা মন এবং শর্ত— দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না। অর্থাৎ, খোলা মন নেই। নির্যাতিতা বিচার পাক— ব্যাপারটি তা নয়। এর পিছনে রাজনীতির খেলা আছে। তাই এতটা সময় লাগছে এত কিছু চিন্তা ভাবনা করতে।”
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানস্থল থেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁরা বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম সরকার আমাদের দাবিকে মান্যতা দেবে। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার সদর্থক ভূমিকা নেবে।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “এটিকে আমাদের জেদ বলে মনে করা হলে, কিছু বলার নেই। জেদ বললে বিষয়টি ছোট করা হচ্ছে। এই নারকীয় ঘটনার উদ্দেশ্য অজানা। যতক্ষণ না এটি জানতে পারছি, এই অপরাধীদের না ধরা হচ্ছে, তত ক্ষণ কর্মবিরতি চালিয়ে যাব। সিবিআই তদন্তের দিকে তাকিয়ে আছি। আমরা সারা রাত অপেক্ষা করবে। আমাদের তরফে ইমেল পাঠানো হচ্ছে, তার জবাবের অপেক্ষা করছি। আমারও চেয়েছি খোলা মনে সবার সামনে আলোচনা হোক। মুখ্যমন্ত্রী অভিভাবক, সে ক্ষেত্রে উনি থাকবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই। এটা কোনও জেদ নয়, এটা অধিকার।”
আলোচনায় বসার জন্য চারটি শর্ত দিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমত, অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে বৈঠকে। দ্বিতীয়ত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে তার লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, আন্দোলনকারীরা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন আগে, সেই দাবিগুলির উপরেই বৈঠকে আলোচনা হতে হবে। চতুর্থত, নবান্নে যে বৈঠক হবে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।
বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় জুনিয়র ডাক্তারদের ১২-১৫ জনের প্রতিনিধিদলকে ডাকা হয়েছিল নবান্নে আলোচনার জন্য। কিন্তু তাতে রাজি হননি আন্দোলনকারীরা। তাঁরা পাল্টা চারটি শর্ত দিয়েছিলেন। তার পরেই সাংবাদিক বৈঠক করে আন্দোলনে রাজনীতি প্রবেশ করেছে বলে সন্দেহপ্রকাশ করেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে পড়ুয়ারা জানান, আন্দোলনে কোনও রাজনীতি নেই। এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন বলেও দাবি করেন তাঁরা। পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে জানানো হয়, রাজ্য সরকার তাঁদের শর্তগুলি মেনে নিলেই আলোচনায় বসতে প্রস্তুত তাঁরা। এই আবহে বৃহস্পতিবার দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার পথ খোলে কি না, সেটাই এখন দেখার।
৪১ ঘণ্টা অতিক্রান্ত। কাটল আরও একটি রাত। এখনও স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা।