মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাস্তা বানানোর পরে পাঁচ বছর না চললে ঠিকাদারকে ব্ল্যাক লিস্ট করতে হবে। বেআইনি বাড়ি, বিপজ্জনক বাড়ি ঠিক না করা হলে বাড়ি অধিগ্রহণ করা হবে। জানিয়ে দিলেন মমতা।
মমতা বললেন, ‘‘হকারদের আমি ভালবাসি কেন জানেন? তার কারণ, রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা ঘটলে আর সবাই মুখ ফিরিয়ে চলে গেলেও হকারেরা ছুটে আসেন। ওঁরা হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। কোনও মেয়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার হলে প্রতিবাদ করেন। কিন্তু আমি যেটা করছি, সেটা ওঁদের বিরুদ্ধে নয়। কলকাতাকে সুন্দর করতে হবে। আপনারা সহযোগিতা করুন, সরকার আপনাদের সঙ্গে থাকবেন।’’
নবান্নের বৈঠকে সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়াত হোসেন সরকারদের শপথগ্রহণ নিয়েও উষ্মাপ্রকাশ করলেন মমতা। বললেন, ‘‘জেতার পরেও এক মাস ধরে আমার বিধায়কেরা বসে আছেন! রাজ্যপাল শপথ নিতে দিচ্ছেন না। মানুষ ওঁদের নির্বাচিত করেছে। ওঁর কী অধিকার তাঁদের শপথ নিতে না দেওয়ার? উনি হয় স্পিকারকে এই অধিকার (শপথগ্রহণ করানোর) দিন, নয়তো ডেপুটি স্পিকারকে দিন। আর তা না হলে নিজে বিধানসভায় যান। ওঁর রাজভবনে কেন সকলে যাবে? রাজভবনে যা কীর্তি-কেলেঙ্কারি চলছে, তাতে মেয়েরা যেতে ভয় পাচ্ছে বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে।’’
মমতা বললেন, ‘‘এক মাস আপাতত উচ্ছেদ হবে না। তার মধ্যে আমাদের সার্ভের কাজ চলবে। কিন্তু তার মধ্যে সব ঠিক করতে হবে।’’
মমতা বললেন, ‘‘হকারদের আমি এক মাস সময় দিচ্ছি। এর মধ্যে সব গোছাতে শুরু করুন। রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। আমাদের সার্ভে চালু থাকবে। আপনাদের কোথায় জায়গা দেওয়া যায়, তা সরকার দেখবে। গোডাউনের ব্যবস্থাও করবে। কিন্তু রাস্তা দখল করা যাবে না।’’
মমতা বললেন, ‘‘কাউকে বেকার করার অধিকার আমাদের নেই। তবে দ্রুত বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। আমি চাই না কারও ব্যবসা বন্ধ হোক। কিন্তু বেশি সময় দেওয়া যাবে না। ’’
মমতা বললেন, ‘‘হকারদের দোষ দিয়ে কী লাভ? দোষ তো আমাদেরই। আমরা নিউ মার্কেট এলাকায় একটা বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছি না কেন? যেখানে ওঁরা বসবেন। এটা আমাদেরই করতে হবে। হকারেরা সেখানে থাকবেন।’’
মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘‘গ্র্যান্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক কড়া। সেখানে দেশ-বিদেশের তারকা, অভিনেতারা এসে থাকেন। নিরাপত্তা রাখতে হয়। হঠাৎ করে সেখানে কিছু একটা গন্ডগোল হলে কী হবে? সঙ্গে সঙ্গে তো এনআইএ পাঠিয়ে দেবে। তাই সেই ঝুঁকি আমরা নেব না। আর যাঁরা বলছেন, গ্র্যান্ডের সামনেই বসতে দিতে হবে, তাঁদের বিষয়টা বুঝতে হবে।’’
নবান্নের বৈঠকে পুুলিশকে আক্রমণ মমতার। বললেন, ‘‘পুলিশের লোভ বেড়ে গিয়েছে আজকাল। তারা গরিব হকারদের থেকে চাঁদা নিচ্ছে। মনে রাখবেন, আমার দল টাকা চায় না। আমি আগেও বলেছি। এখনও বলছি। দরকার হলে মানুষের কাছে হাত পেতে ভিক্ষে করব। তাই যে পুলিশকে ইন্ধন দিতে দেখা যাবে, তাকে সঙ্গে সঙ্গে সরানো হবে। কাউকে ছাড়ব না।’’
যে এলাকায় বেআইনি দখল হবে সেখানকার কাউন্সিলরদের গ্রেফতার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি মমতার। বললেন, ‘‘যত বড়ই নেতা হন, তাঁকে ছাড়া হবে না।’’ তবে একই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, ভাল কাজ হলে পুরস্কৃতও করবেন তিনি।
রাজ্যের যে সমস্ত বড় বড় বাজার রয়েছে, সেই সমস্ত বাজার এলাকার প্ল্যান চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে জানালেন, বাজার এলাকার খুব কাছেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘এই ধরনের রাস্তা দখলের জন্য দায়ী রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশেরাই। কাউন্সিলরদের প্রথম থেকে এটা দেখা উচিত। কিন্তু তাঁরা দেখেও দেখছেন না। পুলিশ, হকার নেতারা গরিব হকারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন। করবেন না। আমি বলব, আপনারা লোভ সংবরণ করুন। জীবনধারণের জন্য যে টুকু দরকার, সে টুকুতেই সন্তুষ্ট থাকুন। কিন্তু তা হচ্ছে না। এলাকার নেতারা প্রথমে ডালা নিয়ে বসিয়ে দিচ্ছে, তার পরে আর সরানো যাচ্ছে না। নিজেরাই বসাবেন, তার পরে বুলডোজ়ার চালাবেন, তা হবে না।’’
জবরদখল নিয়ে মমতা বললেন, গড়িয়াহাটে তো হাঁটারই জায়গা নেই। দুটো ফুটপাথ দখল হয়ে গিয়েছে। এতে আমাদের কাউন্সিলরদের দোষ আছে। কিন্তু আমাদের তো হকারদের পুনর্বাসনের জায়গা দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা তো আছে। আমরা এ টুকু খরচ তো ওঁদের জন্য করতেই পারি।
নবান্নে বৈঠকে মমতা বললেন, তাঁর লক্ষ্য হকার উচ্ছেদ নয়। মমতা বললেন, পুরো ব্যাপারটার একটা সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। আগুন লাগবে না এমন জিনিস দিয়ে স্টল বানাতে হবে। প্রতিটি স্টলের নম্বর থাকবে। এক এক জন হকার এক একটি স্টল পাবেন।
অবৈধ ভাবে সরকারি জায়গা দখল হয়ে যাওয়া নিয়ে গত সোমবার রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভা ও পুরনিগমের চেয়ারম্যান এবং মেয়রদের বিভিন্ন বিষয়ে ধমক দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর থেকেই বেদখল হয়ে যাওয়া জমি দখলমুক্ত করতে তৎপর পুরসভাগুলি। রাজ্যের জায়গায় জায়গায় শুরু হয়েছে দখলদার উচ্ছেদ অভিযান। তা নিয়েই নতুন করে বৈঠক ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে রয়েছেন বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক, বিভিন্ন দফতরের আমলা, কলকাতার পুলিশ কমিশনার-সহ বিভিন্ন কমিশনারেটের কমিশনার এবং কর্তারা। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরাও ওই বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন।
‘দখলদার’ উচ্ছেদ অভিযান কী ভাবে চলছে, তাতে কোনও বদল ঘটাতে হবে কি না, সে সব নিয়ে পর্যালোচনা চলছে এই বৈঠকে। আলোচনা উচ্ছেদ অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও।