তাজপুরের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
ইয়াসের হাত থেকে বাঁচার আশায় শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন আয়লা কেন্দ্র কিংবা বহুমুখী প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্রে। কয়েক মাস ধরে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের একমাত্র ঠাঁই হয়ে গিয়েছিল ওই সব কেন্দ্র। ক্রমে ধীরে ধীরে অনেকেই নিজের নিজের ঘরে ফিরেছেন। কিন্তু ফের কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভরসা এই আয়লা কেন্দ্রগুলিই। অথচ সেগুলির এখন কার্যত বেহাল অবস্থা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আয়লা কেন্দ্র কিংবা বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রের কোনওটিতে আলো জ্বলে না। কোনওটিতে আবার মাথার উপরের পাখা লোপাট। কোথাও পাখা-আলো দুই-ই উধাও। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল এলাকা জুড়ে একাধিক ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার কিংবা আয়লা কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গিয়েছে এমনই ছবি।প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্মিত এই সব আশ্রয় কেন্দ্রগুলির নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়ে উঠেছে।
রামনগর-১ ব্লকের তাজপুর পর্যটন কেন্দ্র থেকে সৈকত সরণি ধরে শঙ্করপুরে পৌঁছনোর যে রাস্তা রয়েছে, তার ধারেই রয়েছে বহুমুখী প্রাকৃতিক বিপর্যয় আশ্রয় কেন্দ্র। গিয়ে দেখা গেল তিনতলা এই আশ্রয় কেন্দ্রে আলো এবং পাখা সবই লোপাট হয়ে গিয়েছে। ইয়াসের পরে পরে ওই সব জিনিস চুরি হয়ে গিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। খানিকটা দূরে চাঁদপুর থেকে গ্রামের ভিতরে আর একটি আশ্রয় কেন্দ্র। সেখানে দেখা গেল চারপাশে জমে রয়েছে আবর্জনা। আলো-পাখা কিছুই নেই। শুধু রামনগর-১ ব্লকেই এধরনের আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে ৮টি। কাঁথি -১ ব্লকে রয়েছে ২০টি। এছাড়াও কাঁথি দেশপ্রাণ, রামনগর -২ এবং খেজুরির দুটি ব্লকে অনেকগুলি ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার রয়েছে।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা জেলায় মোট ৪৩টি এই ধরনের আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলির উপর নির্ভর করে উদ্ধার কাজে অনেকটাই সফল হয়েছিল জেলা প্রশাসন। ২০১৯ সালে বুলবুল, ২০২০-তে আমপান, তারপর ফণির মতো ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের এই সমস্ত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে আনা হয়েছিল। তার ফলে প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল অনেকের। বছরঘুরে ফে মে মাস। ফের ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় প্রমাদ গুনছেন উপকূলের মানুষ। কিন্তু তার আগে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রগুলি এমন বেহাল ছবি দেখে অনেকেই হতাশ। রামনগর-১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংশ্লিষ্ট গ্রাম পঞ্চায়েচের প্রধান, পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী কয়েকজনকে নিয়ে একটি করে কমিটি তৈরি হয়েছিল। ওই কমিটিরই মূলত আশ্রয় কেন্দ্রগুলির নিয়মিত দেখভাল করার কথা। যদিও সেই রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা নজরদারি সঠিকভাবে হচ্ছে না বলে অভিযোগ এলাকার বাসিন্দাদের। জলধা গ্রামের বাসিন্দা ভবেশ চাউলিয়া বলেন, ‘‘ইয়াসে বাড়ি থেকে চাল বস্তা, বিছানাপত্র নিয়ে জীবন হাতে উঠেছিলাম আয়লা কেন্দ্রে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ছিলাম সেখানে।। কিন্তু আজ যেন খাঁ খাঁ করছে।’’
সম্প্রতি অবশ্য কাঁথি এলাকার বেশ কয়েকটি আয়লা কেন্দ্রে দুয়ারে সরকারের শিবির চলেছে। ফের ঘূর্ণিঝড় আসার আগে এই সমস্ত নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। গত ২৩ মে আয়লা কেন্দ্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে জেলাশাসকের অফিসে একটি মিটিং ডাকা হয়েছিল। সেখানে প্রত্যেকটি আয়লা কেন্দ্রের স্বয়ংসম্পূর্ণ পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘জেলায় কিছু কিছু আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা আয়লা কেন্দ্র থেকে জিনিসপত্র চুরির খবর মিলেছে। নতুন করে ঘূর্ণিঝড় আসার আগে যাতে ওই সব কেন্দ্রগুলিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায় তার জন্য মিটিং করা হয়েছে।’’