Ram Navami 2025

গন্ডগোল এড়াতে কঠোর ব্যবস্থা, সহযোগিতার আবেদন সিপি-র

রামনবমী উপলক্ষে শনিবার রাত পর্যন্ত ৮০টি মিছিলের আবেদন জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। যার মধ্যে পাঁচটি বড় শোভাযাত্রা। ওই সমস্ত শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্তি এড়াতে ২৩০টি পুলিশ পিকেট তৈরি হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৯:০৮
রামনবমীর আগে বড়বাজার পরিদর্শনে কলকাতার নগরপাল ও অন্য কর্তারা। শনিবার।

রামনবমীর আগে বড়বাজার পরিদর্শনে কলকাতার নগরপাল ও অন্য কর্তারা। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

আজ, রবিবার রামনবমী উদ্‌যাপনকে কেন্দ্র করে শহরে অশান্তি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করার পাশাপাশি মিছিলের উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা চাইল লালবাজার। শনিবার নগরপাল মনোজ বর্মা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বেরিয়ে উদ্যোক্তাদের কাছে পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করার আবেদন জানান। এ দিন লালবাজারে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তিনি।

Advertisement

রামনবমী উপলক্ষে শনিবার রাত পর্যন্ত ৮০টি মিছিলের আবেদন জমা পড়েছে পুলিশের কাছে। যার মধ্যে পাঁচটি বড় শোভাযাত্রা। ওই সমস্ত শোভাযাত্রা ঘিরে অশান্তি এড়াতে ২৩০টি পুলিশ পিকেট তৈরি হয়েছে। লালবাজার জানিয়েছে, আজ রাস্তায় থাকবেন কয়েক হাজার অতিরিক্ত পুলিশকর্মী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিভিন্ন এলাকায় রাখা হচ্ছে ১৬টি হেভি রেডিয়ো ফ্লাইং স্কোয়াড। তাতে এক জন অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশবাহিনী থাকবে। সেই সঙ্গে শহরে ঘুরে বেড়াবে ৯২টি টহলদারি ভ্যান।

লালবাজার জানিয়েছে, বড় পাঁচটি শোভাযাত্রার মধ্যে দু’টি উত্তর কলকাতার কাশীপুর এবং চিৎপুর থেকে বেরোবে। ওই দু’টি মিছিল কাশীপুর রোড, বিটি রোড, কেসি রোড, চিড়িয়ামোড় হয়ে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে গিয়ে শেষ হবে। ওই দুই মিছিলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে এক জন করে ডিসি-র নেতৃত্বে বিরাট বাহিনী। পূর্ব কলকাতার মৌলালির রামলীলা ময়দান থেকে একটি মিছিল বেরোবে। সেই মিছিলে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী হাঁটতে পারেন বলে খবর। ওই মিছিল ফিলিপস মোড়, আনন্দ পালিত মোড় হয়ে কামারডাঙার দিকে যাবে। মিছিল শেষ হবে চায়নাপাড়া মোড়ের কাছে। হেস্টিংস থেকে বেরোনো আর একটি মিছিলেও শুভেন্দু থাকতে পারেন। ক্যানাল রোড থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি ওয়াটগঞ্জের কবিতীর্থ সরণি, সিজিআর রোড, কার্ল মার্ক্স সরণি, ভূকৈলাস রোড ঘুরে ফের হেস্টিংসে ফিরে যাবে। পুলিশের ধারণা, শুভেন্দু অংশ নিলে ওই মিছিলে অনেক বেশি ভিড় হবে। তাই বিশেষ পুলিশি বন্দোবস্ত রাখার পাশাপাশি ওই মিছিলের নিরাপত্তার জন্য থাকছেন তিন জন ডিসি। এ ছাড়া, এক জন অতিরিক্ত নগরপাল পুরো পুলিশি ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকছেন। বড়বাজার ও পোস্তা এলাকাতেও মিছিল হওয়ার কথা। লালবাজার জানিয়েছে, পাঁচটি বড় শোভাযাত্রার পাশাপাশি অসংখ্য ছোট ছোট মিছিলও
বেরোবে। প্রতিটি মিছিলের সঙ্গেই থাকবে পুলিশবাহিনী। মিছিলের পথ খালি রাখতে আজ দুপুর থেকে শহরে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

লালবাজার জানিয়েছে, কলকাতা পুলিশের ছ’টি স্পর্শকাতর ডিভিশনে এক জন করে উপ-নগরপালের নেতৃত্বে একটি করে দল তৈরি রাখা হচ্ছে। তাতে থাকছেন মহিলা পুলিশকর্মীরাও। মোট ৩৮ জনের ওই দলটিকে ছ’টি ডিভিশনে মোতায়েন করা হচ্ছে। যাতে কোথাও
গোলমাল হলেই তারা পৌঁছে যেতে পারে। সেই সঙ্গে থানার ওসিদের নেতৃত্বেও বাহিনী রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন এলাকায় ১১ জন অতিরিক্ত নগরপাল এবং যুগ্ম নগরপালের নেতৃত্বে কমব্যাট এবং র‌্যাফ বাহিনীকে মোতায়েন রাখা হবে।

এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, যে সব রাস্তা দিয়ে রামনবমীর মিছিল যাবে, সেখানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে নতুন করে। পাশাপাশি, প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে বডি ক্যামেরা ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি মিছিলের ভিডিয়োগ্রাফিও করা হবে। সেই সঙ্গে ড্রোনের মাধ্যমে চলবে নজরদারি। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে অস্ত্র প্রদর্শন কিংবা বাইক-মিছিল করা যাবে না বলে জানিয়েছে লালবাজার।

পরিদর্শনে বেরিয়ে এ দিন নগরপাল বলেন, ‘‘আমরা চাই, উৎসব উৎসবের মতো করেই হোক। কিন্তু কারও যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সেটা দেখতে হবে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা সে কথাই বলেছি। পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতার পাশাপাশি আদালতের নির্দেশ মেনে যাতে মিছিল করা হয়, সেই আবেদন করেছি।’’

অন্য দিকে, রামনবমী উদ্‌যাপনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটও। নাগেরবাজার, দমদম, নিমতা, নিউ ব্যারাকপুর ও ঘোলা থানা এলাকায় বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিল সংক্রান্ত বেশ কিছু নিয়ম সম্পর্কে আয়োজকদের অবহিত করা হয়েছে। যেমন, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না, ডিজে বাজানো যাবে না। এই সমস্ত নিয়ম মানা হচ্ছে কিনা, তা জানতে নজরদারি চলবে। শোভাযাত্রাগুলি কোন পথে এবং কোন সময়ে যাবে, তা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোনের মাধ্যমেও নজরদারি চলবে।
নজরদারি চালাতে শোভাযাত্রার পথের বিভিন্ন বহুতলেও পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করা হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নিয়ম ভেঙে শোভাযাত্রা করা হলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে। প্রতিটি শোভাযাত্রার সঙ্গেই পুলিশকর্মীরা থাকবেন।

Advertisement
আরও পড়ুন