কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য পেয়ে গ্রাম ফিরলেও ভয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যেরা। —নিজস্ব চিত্র।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে পুলিশি নিরাপত্তা পেয়ে এক দশকের বেশি সময় পেরিয়ে নিজেদের ঘরে ফিরলেন আফরোজা বিবি, মজল শেখরা। মঙ্গলবার আবার বীরভূমের লাভপুরের ঘরে পা রেখেছেন তাঁরা। অভিযোগ, ১৩ বছর আগে সালিশি সভার নাম করে নিজের বাড়িতে ডেকে একই পরিবারের তিন ভাইকে শাবল-কুড়ুল দিয়ে দলবল নিয়ে পিটিয়ে খুন করেন তৃণমূলের তৎকালীন দাপুটে নেতা মণিরুল শেখ। এর পর ঘরছাড়া করা হয়েছিল লাভপুরের ছয় পরিবারের দেড়শো সদস্যকে। সেই অভিযোগের নিষ্পত্তি আজও হয়নি। দলবদল করে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন মণিরুল।
স্থানীয় সূত্রে খবর, ২০১০ সালে লাভপুরের বুনিয়া ডাঙ্গাল গ্রামের একই পরিবারের ন’ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাইকে খুন করেছিলেন মণিরুল। নিহতেরা হলেন ধানু শেখ, কটুন শেখ এবং ওইসুদ্দিন শেখ। এই অভিযোগের মীমাংসা না হলেও পরে লাভপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন তিনি। সেই খুনের মামলা কলকাতা হাই কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ধানু শেখের পরিবারের দাবি ছিল, খুনের পর তাঁদের গ্রামছাড়া করা হয়েছে। নিরাপত্তার অভাবে ভুগছিলেন তাঁরা। তাঁদের মতোই একই পরিস্থিতি ছিল আরও ছ’পরিবারের। সে সময় হাই কোর্টের নির্দেশে ধানু শেখের পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়। ওই নির্দেশে ধানুর পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর চার জন এবং স্থানীয় পুলিশের দু’জন কর্মীকে মোতায়েন করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, সেই নির্দেশকে অমান্য করে এখন কোনও নিরাপত্তাকর্মী ছিল না পরিবারের সঙ্গে। অভিযুক্তদের শাস্তির দাবিতে ১৩ বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে পরিবারগুলি।
২০১০ সাল থেকে লাভপুর, বোলপুর-সহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়েছিটিয়ে বসবাস করেন নিহতদের পরিবারের দেড়শো সদস্য। দীর্ঘ ১৩ বছর পর হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ঘরছাড়াদের গ্রামে ফেরানোর জন্য নির্দেশ দেন। হাই কোর্টের নির্দেশ পেয়ে ১৩ বছর পর নিহতদের ছ’ভাই-সহ প্রায় দেড়শো জন মঙ্গলবার গ্রামে ফিরছেন।
পুলিশ-প্রশাসনের ভরসা পেয়েই ঘরে ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আফরোজা বিবি নামে ঘরছাড়াদের এক জন বলেন, ‘‘আমরা পরিবারের লোকজন একই সঙ্গে থাকতাম। এক দিন নিজের বাড়িতে সালিশি সভায় ডাকল মণিরুল ইসলাম। তার পর শাবল-কুড়ুল দিয়ে দলবল নিয়ে খুন করল। এখন আদালতের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসনের ভরসায় ১৩ বছর পর গ্রামে ফিরছি।’’
মণিরুলের বিরুদ্ধে কী কারণে খুনের অভিযোগ উঠেছিল? ঘরে ফেরা মজল শেখের দাবি, ‘‘সে সময় আমরা বামফ্রন্ট করতাম। আমরা তৃণমূল করব না বলেছিলাম মণিরুলকে। তবে নিজের বাড়িতে সালিশি সভা ডেকে আমার ভাইদের খুন করে মণিরুল।’’ খুনের অভিযোগ ওঠার বেশ কয়েক বছর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিতে যোগদান করেন মণিরুল।
হাই কোর্টের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য পেয়ে গ্রাম ফিরলেও একটু হলেও ভয় রয়েছে বলে জানিয়েছেন নিহতদের পরিবারের সদস্যেরা। যদিও জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শুধুমাত্র আদালতের নির্দেশ পালন করেছি। ওই পরিবারের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রাখব।’’