তিন হাজারের বেশি ভোটে জয়ী তৃণমূলের গৌতম দেব। নিজস্ব চিত্র।
বিধাননগর পুরভোটে আবার জয়ের মুখে তৃণমূল। কৃষ্ণা নাকি সব্যসাচী, কে হবেন মেয়র, চলছে জল্পনা।
চার পুরনিগমের ভোটে বিরোধীদের প্রায় উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। শিলিগুড়িতেও ধুয়েমুছে ছাপ বামেদের ‘অশোক মডেল’। এই প্রথমবার শিলিগুড়ি পুরসভা পরিচালনার ভার যাচ্ছে তৃণমূলের হাতে। ফলাফল স্পষ্ট হতেই উচ্ছ্বাসে মাতলেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বিধাননগরে বড় ব্যবধানে জেতার অপেক্ষা তৃণমূলের। কার্যত ধুয়েমুছে ছাপ বিরোধীরা। ফল সামনে আসতেই জয়োল্লাস তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের।
বিধাননগর,আসনসোল, চন্দননগর ও শিলিগুড়ি, চার পুরসভা ভোটে তৃণমূলের ধারেকাছে নেই বিরোধীরা। বহু এগিয়ে রাজ্যের শাসক দল। এই প্রথম শিলিগুড়ি পুরসভা দখলের পথে তৃণমূল।
আরও নম্র ও মানবিক হয়ে মানুষের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। চার পুরনিগমের বিপুল জয়ের পর প্রতিক্রিয়া তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতা বলেন, ‘‘এই জয় মানুষের জয়। শান্তিপূর্ণ ভাবে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাতে এই ফল হয়েছে। আমরা খুশি।’’
চার পুরনিগমের ফলের পর আবারও কংগ্রেস, সিপিএম ও বিজেপি-কে একযোগে আক্রমণ শানিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গে বিধানসভা ভোটে জয় পেয়েও দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুরের জন্য কিছুই করেনি বিজেপি। মানুষ পুরভোটে তারই জবাব দিয়েছেন আরও বেশি করে তৃণমূল প্রার্থীদের জিতিয়ে।’’ গৌতম দেবই শিলিগুড়ির মেয়র হচ্ছেন বলেও ঘোষণা করে দিয়েছেন মমতা।
৩০০-র বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে গিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য। হারের পর তিনি বলেন, ‘‘একটা বিপর্যয় হয়েছে। আমাদের যে ভোট বিজেপি-তে গিয়েছিল, সেই ভোট আমাদের কাছে ফেরত আসার বদলে তৃণমূলের বাক্সে ঢুকেছে। আমাদের পলিটিক্যাল রিজেকশন হয়েছে। তবে কমিউনিস্ট পার্টি করি, হতাশায় ডুবে গিয়ে, ঘরে বসে গেলে হবে না।’’
প্রসঙ্গত, বিধানসভা ভোটে হারের পর নির্বাচনী রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিলেন বাম জমানার দাপুটে পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অশোককে ফোন করেন। এবং বলেন, ‘‘বামেদের এই দুর্দিনে ভোটের ময়দান ছেড়ে যাওয়া চলবে না। শিলিগুড়িতে তোমাকেই বামেদের নেতৃত্ব দিতে হবে।’’ তার পরই অশোক পুরভোটে দাঁড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভোটের ফলে দেখা গেল, তৃণমূল প্রার্থীর কাছে ৩০০-র বেশি ভোটে হেরে গিয়েছেন তিনি।
চন্দননগর পুরনিগমে তৃণমূল জয়ী ১৭টি ওয়ার্ডে (১, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৮, ১৯, ২০, ২১)। বামেরা ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয় পেয়েছেন।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে পরাজিত সিপিএম প্রার্থী তথা শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তৃণমূলের মহম্মদ আলম খানের কাছে অশোক পরাজিত হয়েছেন ৩০০-র বেশি ভোটে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে হেরে গিয়েছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া নান্টু পালও।
আসানসোল, শিলিগুড়ি, বিধাননগর, চন্দননগর— চার পুরনিগমেই হয় জয়ী কিংবা বিপুল ভোটে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থীরা। শিলিগুড়িতে গৌতম দেব তিন হাজারেরও বেশি জয়ে জিতে গিয়েছেন। আসানসোলে এগিয়ে গিয়েছেন অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, চন্দননগরে এগিয়ে রাম চক্রবর্তী এবং বিধাননগরে বিদায়ী মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী এগিয়ে।
শিলিগুড়ি পুরনিগমে এই প্রথম সবুজ ঝড়। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন গৌতম দেব।
৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী অমরানন্দ দাস। নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি পুরনিগমে ঝড় তুলেছে তৃণমূল। ১১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থীরা। ৩টি ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই জয় পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। ১ নম্বর ওয়ার্ডে আরএসপি প্রার্থী বিশ্বজিৎ রায় জয়ী। বিজেপি-র মেয়র পদপ্রার্থী তথা শিলিগুড়ির বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ নিজের ওয়ার্ডে পিছিয়ে পড়েছেন।
জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় ঘটক। নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি পুরনিগমের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী কংগ্রেস প্রার্থী সুজয় ঘটক।
বিধাননগর পুরনিগমের বিদায়ী মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছেন। তৃণমূল প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত এগিয়ে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে।
আসানসোলে ৫৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল প্রার্থীরা, বিজেপি এগিয়ে একটি আসনে। বামেরা কোনও আসনে এগিয়ে নেই।
বিধাননগরে ৩৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল, বামেরা এগিয়ে একটি ওয়ার্ডে। বিজেপি প্রার্থীরা কোনও ওয়ার্ডেই এগিয়ে নেই।
বিধাননগরে ১১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে তৃণমূল। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছেন বাম প্রার্থী।
শিলিগুড়িতে ৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে ইলেকশন ডিউটি ভোটে এগিয়ে গেলেও দ্বিতীয় রাউন্ডে পিছিয়ে গিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য।
চন্দননগর পুরনিগমের মোট ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে গেলেন তৃণমূল প্রার্থীরা। বামেরা এগিয়ে একটি ওয়ার্ডে। একটি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছেন নির্দল প্রার্থী।
আসানসোলের ২৪ থেকে ২৯ নম্বর ওয়ার্ড, এই ৬টি ওয়ার্ডে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। এখন চলছে ইলেকশন ডিউটি (ইডি) ভোটগণনা।