—ফাইল চিত্র।
১ অগস্ট থেকে বাতিল হতে পারে কলকাতা শহরে চলাচল করা কয়েক হাজার বেসরকারি বাস। কলকাতা হাই কোর্টের ২০০৯ সালের এক নির্দেশে এমনটাই হতে চলেছে বলে দাবি করছে বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন। যে সব বেসরকারি বাস কোভিডের জন্য চলতে পারেনি, তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল করার প্রক্রিয়া দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বাস সংগঠনগুলি। সম্প্রতি এক প্রশ্নের উত্তরে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনেই ১৫ বছরের বেশি বয়সি গাড়ি বা বাস কলকাতা শহরে চালানো যাবে না। তাই আদালতে নির্দেশে বেসরকারি বাস সংগঠনগুলির দাবি মানা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পরিবহণ দফতরের এমন মনোভাবের কথা জানার পরেই আদালতে যাওয়ার বিষয়ে মনস্থির করেছেন বেসরকারি বাস সংগঠনের নেতারা। ‘গণপরিবহণ বাঁচাও কমিটি’ নাম দিয়ে পরিবহণমন্ত্রী ও পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনটি বাস সংগঠনের নেতারা। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস অ্যান্ড মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারি বাসের সময়সীমা আরও দু’বছর করে বৃদ্ধি করার আবেদন জানিয়েছিল। তাদের যুক্তি ছিল, অতিমারির কারণে দু’বছর যে সব বেসরকারি বাস চলেনি, তাদের পরিষেবা দেওয়ার সময়সীমা আরও দু’বছর বৃদ্ধি করা হোক।
বেসরকারি বাস সংগঠনের তরফে আরও বলা হয়েছিল, লকডাউনের কারণে পরিবহণ শিল্প বেহাল হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে বেশি সংখ্যায় বাস রাস্তা থেকে তুলে নেওয়া হলে নতুন বাস রাস্তায় নামানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। বর্তমানে পরিবহণ শিল্পের যা অবস্থা তাতে বাসমালিকেরা মোটা টাকা ইএমআই দিয়ে রাস্তায় বাস নামানোর অবস্থায় নেই। তা ছাড়া যে বাসগুলি কোভিডের জন্য চলতে পারেনি, তাদের বয়সের ভিত্তিতে বাতিল দু’বছর করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের যুক্তি, লকডাউনের সময় দু’বছর বাসগুলি রাস্তায় চলাচল করেনি। অথচ এমন অনেক বেসরকারি বাস রয়েছে, যাদের মেয়াদ ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু, কোভিডের সময় দু’বছর বেসরকারি বাস রাস্তায় চলাচল না করায় বাসমালিকদের আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে। ওই বাসগুলি ওই দু’বছর না চলায় এখনই তা বাতিল করার জায়গায় নেই। সঙ্গে, অতিমারির ফলে যে আর্থিক ধাক্কা বেসরকারি বাসমালিকদের সহ্য করতে হয়েছে, তাতে নতুন বাস নামানো অনেকটাই আর্থিক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন বাসমালিকেরা। তাই তাঁরা বসে থাকা বাসের মেয়াদ দু’বছর বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের কাছে। বর্তমানে একটি ডিজেল চালিত বাস রাস্তায় নামাতে গেলে তার মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। আর বিদ্যুৎচালিত বাস কিনতে গেলে দাম পড়তে পারে ৬০-৬৫ লক্ষ টাকা। করোনা সংক্রমণে যে আর্থিক ধাক্কা বাসমালিকেরা খেয়েছেন, তাতে আগামী কয়েক বছরে এই ধরনের বড় বিনিয়োগ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই দাবি করেছিলেন তাঁরা।
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট ২০০৯ সালে এক নির্দেশে বলেছিল, কলকাতার পরিবেশ বাঁচাতে কলকাতা মিউনিসিপাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এলাকায় ১৫ বছরের বয়সসীমার ঊর্ধ্বে কোনও বাস চালানো যাবে না। আগামী ১ অগস্ট থেকে হাজারখানেক বাস রাস্তায় নামতে পারবে না বলে দাবি বেসরকারি বাসমালিকদের। ঠিক কত সংখ্যক বেসরকারি বাস বাতিল হচ্ছে ১ অগস্ট থেকে? এমন প্রশ্নের মুখে পড়ে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে, তার ভিত্তিতে আমি বলতে পারি যে, অগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত মাত্র ১৫৭টি বেসরকারি বাস বাতিল হবে। তাই বেসরকারি বাসমালিকেরা যে দু’-আড়াই হাজার বাস বাতিলের কথা বলছেন, তা আদৌ সত্যি নয়।” তাঁর আরও দাবি, ‘‘গত পাঁচ বছরে শহরে কমপক্ষে এক হাজার বিকল্প পরিবহণ পরিষেবা দিতে গাড়ি নেমেছে। এ ছাড়াও প্রায় ৭০ হাজার অ্যাপ ক্যাবও রাস্তায় চলে। তাই সাধারণ যাত্রীদের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”
পরিবহণমন্ত্রীর এমন দাবি মানতে চাননি জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পরিবেশ দফতর কেবল আদালতের নির্দেশের কথা উল্লেখ করছে। আমরা যে দু’বছরের জন্য বাসের মেয়াদ বৃদ্ধির কথা বলেছিলাম, সেই বিষয়টি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া উচিত ছিল পরিবহণ দফতরের। কিন্তু, রাজ্য সরকার এই পদ্ধতিতে বাসমালিকদের পাশে না দাঁড়িয়ে বাস বাতিল করতে উদ্যত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “এখন আমরা নিরুপায় হয়ে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছি। আশা করব, পশ্চিমবঙ্গের বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের বর্তমান আর্থিক অবস্থার কথা বুঝে আদালত আমাদের দাবি বিবেচনা করবে।” অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সংগঠনটি কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।