Kolkata Tram & Durga puja

ধর্মতলায় ‘বৃদ্ধ’ ট্রাম ভাড়া নিয়ে পুজোর দ্বিতীয় বছরে ‘বৃদ্ধাশ্রম’ থিম, এই কি শেষ ট্রাম-বাহিনী দুর্গার আরাধনা

২০২৩ সাল থেকে ‘সিডস’ নামে একটি সংস্থা শারদোৎসবের আয়োজন করছে ধর্মতলায় ট্রাম ডিপোতে থাকা একটি ট্রামে। এ বছর তাদের পুজোর বিষয় ভাবনায় উঠে এসেছে থিম-নিরুত্তর।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ২০:৪৮
Tram Durga puja theme is old age home in Kolkata

ধর্মতলায় ট্রামেই আয়োজিত হচ্ছে দুর্গাপুজো। —নিজস্ব চিত্র।

নচিকেতার ‘বৃদ্ধাশ্রম’ গানটি বড় প্রিয় বাঙালির। কলকাতার রাজপথে চলতে চলতে ঐতিহ্যের ট্রামও এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। গতিশীল শহরে সেই ট্রাম যেন কিছুটা বেমানান ঠেকেছে শাসকের নজরে। তাই সেপ্টেম্বর মাসে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী জানিয়ে দিয়েছেন, ঐতিহ্যবাহী রুট এসপ্ল্যানেড-খিদিরপুর রুটটি রেখে বাকি শহর থেকে তুলে দেওয়া হবে ট্রাম। তারপর থেকেই কলকাতাবাসীদের একাংশ অভিযোগ, শহরের ঐতিহ্য ট্রামকে কৌশলে ‘বৃদ্ধাশ্রমে’ পাঠিয়ে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার।

Advertisement

কাকতালীয় ভাবেই সেই ট্রামে আয়োজিত হচ্ছে দুর্গাপুজো। ২০২৩ সাল থেকে ‘সিডস’ নামে একটি সংস্থা শারদোৎসবের আয়োজন করছে ধর্মতলায় ট্রাম ডিপোতে থাকা একটি ট্রামে। এ বছর তাদের পুজোর বিষয় ভাবনায় উঠে এসেছে থিম, নিরুত্তর। সেই থিমে তুলে ধরা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কথা। কোথাও দেখানো হয়েছে, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বয়সকালের শেষ ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। কোথাও আবার হারিয়ে যাওয়া পোস্টকার্ডে ছেলেমেয়েকে পাঠানো চিঠিতে বৃদ্ধশ্রমে থাকা মা বাবার আর্তনাদ ধরা পড়েছে। উদ্যোক্তাদের দাবি, এ বারের ট্রামে পুজো করার অনুমতি পেতে ঝক্কি পোহাতে হয়েছে তাদের। মহালয়ার দিন পর্যন্ত তারা বুঝতে পারছিলেন না, এ বার আদৌ তারা ট্রামে মা দুর্গার আরাধনা করতে পারবেন কি না? ৩ অক্টোবর প্রতিপদ তিথিতে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ নিগমের তরফে ট্রামে পুজো করার অনুমতি পান উদ্যোক্তারা। তাই শেষমেশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ট্রামের পুজোর মঞ্চ সাজিয়েছেন বৃদ্ধাশ্রমের আদলে।

Tram Durga puja theme is old age home in Kolkata

ধর্মতলায় ট্রাম ডিপোর শারদোৎসবের এ বারের থিম নিরুত্তর। —নিজস্ব চিত্র।

সোমবার বিকেলে এই পুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রেও পরিবহণ দফতরের মন্ত্রী তথা আধিকারিকদের উদাসীনতাই চোখে পড়েছে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী, পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান মদন মিত্র সহ পরিবহণ দফতরের কয়েকজন আধিকারিককে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পর তারা কেউ না এলে, বৃদ্ধাশ্রমের কয়েকজন বাসিন্দাকে দিয়েই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। যদিও উদ্যোক্তাদের দাবি, মদন তাদের পুজো কমিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির না হতে পারলেও, সময় ও সুযোগ বুঝে তিনি অবশ্যই আসবেন।

পরিবহণমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ট্রাম কলকাতা শহর থেকে বিদায় নেওয়ার পালা। তাই স্বাভাবিক কারণেই উদ্যোক্তাদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ বারের শারদোৎসব কী কলকাতার ট্রামে শেষবারের মতো আয়োজিত হচ্ছে? জবাবে উদ্যোক্তাদের অন্যতম অমৃতা সিংহ বলেন, ‘‘ট্রামের প্রতি কলকাতাবাসীর ভালবাসা থেকেই আমরা গত বছর ট্রামে পুজো করা শুরু করেছি। এ বারও পরিবহণ নিগম আমাদের অনুমতি দেওয়া ট্রামে পুজো করার অনুমতি দিয়েছে। আমরা চাইব প্রতি বছর কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ট্রামেই আমরা মায়ের পুজো করতে পারি।’’ তবে ট্রামে বৃদ্ধাশ্রমের আদলে মণ্ডপ যেন ট্রামের প্রতি সরকারপক্ষের উপেক্ষার প্রতীকী রূপ পেয়েছে বলে মনে করছেন দশর্নার্থীরা। এই সংক্রান্ত বিষয়ে আগত দর্শনার্থীদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে নারাজ পুজো উদ্যোক্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement