JU Student Death

যাদবপুরে সিসি ক্যামেরা বসাতে দেরি কেন? উপাচার্য বললেন, সে তো সরকারি সংস্থা জানে

যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল কর্তৃপক্ষকে। এমনকি, ইউজিসিও জবাব তলব করেছিল যাদবপুর কর্তৃপক্ষের কাছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০২৩ ১৫:৫৮
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। —ফাইল চিত্র।

হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মারা গিয়েছেন ২০ দিন হল। অথচ ক্যাম্পাসে নজরদারির জন্য এখনও পরিকল্পনামাফিক সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি যাদবপুরে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের দিকে আঙুল উঠতেই মঙ্গলবার তাঁরা পাল্টা দায় ঠেললেন সরকারের দিকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ মঙ্গলবার বললেন, ‘‘আমরা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আমরা তো আর সিসি ক্যামেরা লাগাতে পারি না। একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সেটি সরকারি সংস্থা। এ বার তারা কী করছে, কী করবে, সেটা তাদের ব্যাপার।’’

Advertisement

যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে নিরাপত্তার অভাব নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এমনকি, এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন বা ইউজিসি জবাবও তলব করেছিল যাদবপুর কর্তৃপক্ষের কাছে। অভিযোগ উঠেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য ইউজিসির যে নির্দেশ রয়েছে, তা যাদবপুরে মানা হয়নি। যার জেরে চাপে পড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে যখন বিতর্ক তুঙ্গে, তখন গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য ঘোষণা করেন, ক্যাম্পাসে ‘সিসিক্যামেরা বসানোর প্রক্রিয়া’ শুরু হয়ে গিয়েছে। অথচ তার পরে ছ’দিন কেটে গেলেও যাদবপুর মেন হস্টেলের মূল ফটক বা অন্যত্র কোনও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। কেন এই দেরি? প্রশ্ন করতেই হঠাৎ সুর বদলাল তাঁর।

গত বুধবার উপাচার্য বলেছিলেন, যাদবপুরে কোথায় কোথায় সিসিক্যামেরার নজরদারি চলবে, তা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওয়েবেলের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথাও হয়েছে। মঙ্গলবার তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরা এখনও লাগানো গেল না কেন? ওয়েবেল কি এ ব্যাপারে দেরি বা টালবাহানা করছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ওয়েবেলের মতো নামী সংস্থা টালবাহানা করবে কি করবে না বা করছে কি করছে না সেটা তো আমাদের দেখার কথা নয়। জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা একটি কাজের দায়িত্ব দিয়েছি। আর একটি নামী সংস্থাকেই দায়িত্ব দিয়েছি। তার ওপর সেই সংস্থা সরকারের। আমরা বলেছিলাম যত দ্রুত সম্ভব করতে হবে। এর পর আর আমরা কী করতে পারি?’’

তবে কি সরকারি সংস্থার তরফে অসহযোগিতার কারণেই কাজ এগোতে দেরি হচ্ছে? বিরোধীরা এ-ও প্রশ্ন তোলেন উপাচার্য কি আদৌ ওই সংস্থাকে সিসি ক্যামেরা বসানোর টেন্ডার দিয়েছিলেন? উপাচার্য অবশ্য এ প্রশ্নের জবাব সরাসরি দেননি। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি সংস্থা হলে টেন্ডার না দিলেও কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেন না বাজেটটা তো সরকারের কাছ থেকেই আসবে। তবে সরকার যদি না দেয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টি যে হেতু রক্ষণাবেক্ষণের তাই বিশ্ববিদ্যালয়কে তার রক্ষণাবেক্ষণের বাজেট থেকে এই খরচ দিতে হবে।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ‘‘যদি এমন ভাবা হয় যে, ছাত্রদের ফেলোশিপের পয়সা থেকে নিয়ে ওই খরচ করা হবে। তবে সেটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।’’

ফলত ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পর যাদবপুরে র‌্যাগিং রুখতে যে সমস্ত পদক্ষেপ করার কথা বলা হচ্ছিল, তা আবার বিশ বাঁও জলে যেতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। ইতিমধ্যেই যাদবপুরে সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে ছাত্রদের বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন উপাচার্য। তার পরই যাদবপুরের পড়ুয়াদের দাবি মেনে বৈঠকের ডাক দেন তিনি। যাদবপুরের সব পক্ষকে নিয়ে আগামী ১ সেপ্টেম্বর সেই বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষা কর্মচারী, ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের। সেখানে সিসি ক্যামেরা-সহ র‌্যাগিং বিরোধী অন্যান্য পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর।

আরও পড়ুন
Advertisement