Child Death in Tiljala

সাত বছরের নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন করে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে খুন! ক্ষোভে ফুঁসছে তিলজলা

পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ তুলে রাতে তিলজলা থানার সামনে এলাকাবাসীদের বিক্ষোভ, ইট বৃষ্টি চলে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তিলজলা থানার বন্ধ গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৬:০৬
A Photograph of the Tilaja Protest

ঘেরাও: এক শিশুকন্যার দেহ উদ্ধারের পরে তিলজলা থানার সামনে স্থানীয় মানুষদের বিক্ষোভ। রবিবার রাতে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সকাল থেকে নিখোঁজ থাকা সাত বছরের এক বালিকার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হল রবিবার রাতে। তিলজলা থানা এলাকার ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, বালিকাকে যৌন নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে। মাথায় স্ক্রু ড্রাইভার জাতীয় কিছু দিয়ে ফুটো করার চিহ্ন মিলেছে। আঘাত রয়েছে কানেও। গ্রেফতার করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। ধৃতের নাম অলোক কুমার। পুলিশের দাবি, খুনের কথা স্বীকার করেছে সে। ধৃত আদতে বিহারের সমস্তিপুরের বাসিন্দা।

এ দিকে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ তুলে রাতে তিলজলা থানার সামনে এলাকাবাসীদের বিক্ষোভ, ইট বৃষ্টি চলে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা তিলজলা থানার বন্ধ গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকতে চেষ্টা করেন। এর পরেই পুলিশ এলাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা করতে লাঠি নিয়ে বেরোলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে যায়।

Advertisement

স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীটি থাকত শ্রীধর রায় রোডের একটি চারতলার ফ্ল্যাটে। ওই বালিকার বাবা দেহ উদ্ধারের পরে রাতে জানান, এ দিন সকাল সাতটা নাগাদ তিনি বাড়ির আবর্জনা মেয়েকে নীচে ফেলে আসতে বলেছিলেন। ওই বালিকা নীচে নেমে রাস্তায় ময়লা ফেলে ভিতরেও ঢুকে যায়। কিন্তু তার পর থেকে তার আর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই বহুতলে ঢোকার মুখে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও দেখা গিয়েছে, বাচ্চাটি ভিতরে ঢুকেছে, কিন্তু তার পর সে কোথায় গেল? প্রশ্ন ছিল সেখানেই।

বাচ্চাটিকে দেখতে না পেয়ে এলাকার লোকজনও খুঁজতে শুরু করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, সকাল ন'টায় যখন তাঁরা থানায় গিয়ে বাচ্চাটি নিখোঁজ হওয়ার কথা জানান, তখন গা ছাড়া মনোভাব দেখা গিয়েছিল পুলিশের মধ্যে। এর পরে বেলা ১২টা নাগাদ নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। দুপুরেও বাচ্চাটিকে না পেয়ে ফের তার বাবা থানায় যান। তখন বিকেল থেকে ফের তল্লাশি শুরু হয়। ওই বহুতলের দোতলার একটি ফ্ল্যাটের গেট আগে বন্ধ ছিল। পরে সেই গেটটি খোলা পেয়ে ভিতর ঢুকে তল্লাশি শুরু হয়। রাত ৯টা নাগাদ ফ্ল্যাটে রাখা একটি সিলিন্ডারের পাশ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় দেহটি উদ্ধার হয়।

বস্তা থেকে দেহ বেরোতেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা, বছর বত্রিশের অলোক কুমারকে সেখানেই ধরা হয়। অভিযুক্তকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন উত্তেজিত জনতা। পুলিশ অভিযুক্তকে ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে বাঁচিয়ে থানায় নিয়ে আসে। খুনের কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে। দেহটি ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে।

দেহ উদ্ধারের পর থেকেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এলাকাবাসী। নিখোঁজ ডায়েরি করার পরে প্রথম দিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও তাঁরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, পুলিশ যদি আগে বাচ্চাটিকে খোঁজার চেষ্টা করত, তা হলে হয়তো তার মৃত্যু হত না। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা ও মেয়েদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে থানায় ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা। সেই সঙ্গে দাবি ছিল, ধৃতকে তাঁদের হাতে তুলে দিতে হবে। থানার মূল দরজার তালা ভেঙে ক্ষুব্ধ জনতা ঢুকতে চাইলে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে থাকে। পুলিশের গাড়ি ও থানা লক্ষ্য করে শুরু হয় ইট বৃষ্টি। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে আসতেই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়। এলাকা থেকে কয়েক জন মহিলাকে আটক করা হয়েছে।

রাতে এলাকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী মোতায়েন ছিল, নেমেছিল র‌্যাফও। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিক্ষোভকারীদের ঘরে ফেরার অনুরোধ জানায় পুলিশ।

আরও পড়ুন
Advertisement