Subodh Singh

উঁচু পদের অফিসার হলে তবেই জেরার জবাব দেয় সুবোধ, ঠান্ডা মাথা সবেতেই

বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার মামলায় সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছে সুবোধ।

Advertisement
শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৬
সুবোধ সিংহ।

সুবোধ সিংহ। — নিজস্ব চিত্র।

তদন্তকারী অফিসারের পদমর্যাদা জেনে তবেই জেরার প্রশ্নের জবাব দিতে সে রাজি! তাকে ‘প্রাধান্য’ না দেওয়া ঘোরতর অপছন্দ তার। ব্যারাকপুর পুলিশের হেফাজতে থাকা, বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার সুবোধ সিংহের এ হেন আচরণ অবাক করছে দুঁদে পুলিশ অফিসারদেরও।

Advertisement

বেলঘরিয়ায় ব্যবসায়ী অজয় মণ্ডলের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনার মামলায় সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছে সুবোধ। সূত্রের খবর, গত ২০ জুলাই বেলঘরিয়া থানায় নিয়ে আসার পর থেকে যত বারই তাকে জেরা করা হয়েছে, প্রতি বারই অফিসারের পদমর্যাদা জেনে তবে মুখ খুলেছে কুখ্যাত ওই দুষ্কৃতী। আইপিএস এবং অন্তত ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিকদের সামনে অকপটে বিভিন্ন অপরাধ স্বীকার করেছে স্বর্ণ বিপণি, সোনা বন্ধক রেখে ঋণ প্রদানকারী সংস্থায় একের পর এক ডাকাতির মূল পান্ডা। অজয়ের গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালানো, ফোনে হুমকি থেকে মণীশ শুক্লকে খুনের ঘটনা— সবেতেই তার যুক্ত থাকার কথা জানতে বেগ পেতে হয়নি পুলিশ আধিকারিকদের। অতীতে সুবোধকে জেরা করা পুলিশ আধিকারিকেরাও বলছেন, ‘‘সুবোধের স্বভাব বরাবরই এমন। তদন্তকারীর পদমর্যাদা জেনে কথা বলা তো বটেই, পছন্দের আধিকারিকের কাছে অকপটে অপরাধ স্বীকার করতেও দ্বিধা বোধ করে না সে।’’

রাজ্যের যে কোনও আদালতে তার হয়ে যে আইনজীবী মামলা লড়েন, তাঁর ফি নিয়ে কখনও আপত্তি করে না সুবোধ। বরং, আদালতে পৌঁছে বা জেল হেফাজতে যাওয়ার আগে কখনও নিজেই আইনজীবীর প্রাপ্য মিটিয়ে দেয়। সুবোধের ‘সাম্রাজ্যে’ তার নিজস্ব, নির্দিষ্ট কয়েক জন আইনজীবী আছেন। পটনা থেকে তাঁরাই ভিন্‌ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোন আদালতে কোন আইনজীবী মামলা লড়বেন, তা স্থির করে দেওয়া হয় পটনা থেকেই।

ব্যারাকপুর আদালতের আইনজীবী কমলজিৎ সিংহ জানাচ্ছেন, ২০১৬-’১৭ সালে পটনার এক আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি প্রথম সুবোধের মামলা লড়তে শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘তার পর থেকে ব্যারাকপুর আদালতে সুবোধের সব মামলাই আমি লড়ছি। ফি নিয়ে কখনও কিছু বলতে হয় না। পটনার আইনজীবীরাও মামলার গতিপ্রকৃতির খবর নেন।’’ বেলঘরিয়া থানার একটি আলাদা লক-আপে রয়েছে সুবোধ ও তার অতি ঘনিষ্ঠ শাগরেদ রওশন যাদব। সেখানে গিয়েই সুবোধের সঙ্গে দেখা করছেন কমলজিৎ। বলছেন, ‘‘সব সময়ে হাসি মুখে, হিন্দিতে ঠিক যতটা দরকার, ততটাই বলে সুবোধ।’’

সূত্রের খবর, ডাকাতি থেকে খুনের মতো একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত সুবোধ পুরোপুরি ভাবলেশহীন। পদমর্যাদায় পুলিশকর্তা, এমন যে কেউ যত বারই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করুন, আপত্তি নেই সুবোধের। তবে, কোনও ঘটনায় অহেতুক তার নাম জড়ানোয় আপত্তি আছে ওই দুষ্কৃতীর। জানা গিয়েছে, পুলিশি হেফাজতে তার শুধু দাবি ছিল, নিরামিষ খাবারের। প্রতিদিন মুড়ি-চানাচুর দিয়ে প্রাতরাশ সেরে, স্নান করে ফিটফাট থাকে সুবোধ। লক-আপের মেঝেতে পাতা কম্বলে কখনও শুয়ে, কখন ভিতরে পায়চারি করেই সময় কাটে। মাঝেমধ্যে রওশনের সঙ্গে কথা বলতেও দেখা যায় তাকে। রওশন আমিষ খেলেও পুরোপুরি নিরামিষাশী সুবোধের পছন্দ মতো দু’জনকেই দুপুরে ও রাতে দেওয়া হচ্ছে থানার মেসে রান্না হওয়া নিরামিষ খাবার।

সুবোধ-রওশনের মতো দুই কুখ্যাত দুষ্কৃতী থাকার কারণে এখন কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বেলঘরিয়া থানাও। বি টি রোডের উপরে ওই থানায় ঢোকার কোল্যাপসিবল গেট বন্ধ। সেখানে সর্বক্ষণ ইনসাস হাতে পাহারায় এক পুলিশকর্মী। থানায় আসা যে কাউকেই নিজের পরিচয় ও প্রয়োজন জানানোর পরে ভিতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে। থানার বারান্দার এক পাশে লক-আপ। বারান্দা ও সে দিকের আর একটি দরজার (সেটি তালাবন্ধ) কাছেও সশস্ত্র পাহারা। সূত্রের খবর, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আট জন ‘স্ট্র্যাকো’ (বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সশস্ত্র পুলিশ) ও থানার চার জন, সব মিলিয়ে ১২ জনের সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘সুবোধ অত্যন্ত চালাক। তাই নিজের অপরাধ স্বীকারে দ্বিধা বোধ করে না। কারণ ও জানে, জেলই ওর নিরাপদ আশ্রয়!’’

আরও পড়ুন
Advertisement