Fire

আগুনের গ্রাস থেকে শিশুদের বাঁচাতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় বস্তিতে

জুম্মান দেখতে পান তাঁর স্ত্রীকে। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গেও নেই বাচ্চারা। তা হলে কি ওরা আগুনে আটকে পড়ল? এই আশঙ্কা করে জুম্মান ও তাঁর স্ত্রী বাচ্চাদের খুঁজতে থাকেন।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৮
আগুন থেকে উদ্ধারের পরে শিশুদের আঁকড়ে মায়েরা। শুক্রবার। 

আগুন থেকে উদ্ধারের পরে শিশুদের আঁকড়ে মায়েরা। শুক্রবার।  —নিজস্ব চিত্র।

তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে তপসিয়ার মজদুরপাড়া বস্তির একের পর এক ঘর। সকলে পড়িমরি করে ছুটছেন। জিনিসপত্র বাঁচানো যে সম্ভব নয়, সেটা বুঝে গিয়েছিলেন বস্তির বাসিন্দা শেখ জুম্মান। তাঁর তখন চিন্তা, জিনিস পুড়ে যাক, কিন্তু তাঁর চার বাচ্চা কোথায়? ঘরে আটকে পড়েনি তো?

Advertisement

তত ক্ষণে জুম্মানের ঘর এতটাই পুড়ে গিয়েছে যে, ভিতরে ঢোকা সম্ভব নয়। জুম্মান দেখতে পান তাঁর স্ত্রীকে। কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গেও নেই বাচ্চারা। তা হলে কি ওরা আগুনে আটকে পড়ল? এই আশঙ্কা করে জুম্মান ও তাঁর স্ত্রী বাচ্চাদের খুঁজতে থাকেন। আচমকা জানতে পারেন, আগুন লেগেছে শুনে তাঁর শাশুড়ি দুই থেকে ছয় বছরের চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে বস্তি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে তপসিয়ার ওই বস্তির আগুনকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি শিশু আটকে আছে বলে প্রথমে আতঙ্ক ছড়ায়। যদিও ঘটনাস্থলে আসা বিধায়ক তথা মন্ত্রী জাভেদ খান বলেন, ‘‘কোনও শিশুই নিখোঁজ
হয়নি। হতাহতেরও খবর নেই।’’ এক মাসের শিশু কোলে জসমিনা খাতুন বললেন, ‘‘বাচ্চাটা ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। পুড়তে থাকা ঘরেই ঢুকে পড়ি ওকে উদ্ধার করতে। বাচ্চাকে বাঁচাতে পেরেছি, এটাই যথেষ্ট।’’ ওই বস্তির আর এক মা ইয়াসিম খাতুন বলেন, ‘‘তিন বছরের বাচ্চাটা খেলছিল সামনেই। দাউ দাউ করে বস্তি জ্বলছে, তবু বেরিয়ে আসতে পারছিলাম না। ওকে কোলে নিয়ে কোনও মতে বেরিয়ে আসি।’’

পোড়া বস্তির একটু দূরে চার নাতি-নাতনিকে নিয়ে স্বস্তিতে বসে ছিলেন তাদের ঠাকুরমা সরবানু বিবি। সরবানু বলেন, ‘‘ওদের বাবা-মা কাজে গিয়েছিল। চার নাতি-নাতনির দায়িত্ব আমার উপরে। আগুন লাগার পরে মনে হয়েছিল, আমি মরলে মরব। কিন্তু ওদের বাঁচাতেই হবে।’’ সরবানুর পাশে থাকা নুরহাসান মোল্লা নামে এক কিশোরের ডান পা দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল। ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছিলেন চিকিৎসকেরা। নুরহাসান বলল, ‘‘দু’টি বাচ্চাকে উঠোন থেকে উদ্ধার করে কোলে নিয়ে দৌড়চ্ছিলাম। তখনই গলিতে পড়ে থাকা কাচে পা কেটে যায়। তবে বাচ্চাদের তো উদ্ধার করতে পেরেছি। এটাই বড় কথা।’’

Advertisement
আরও পড়ুন