ধর্না: চিকিৎসকের অবস্থান। শুক্রবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
চারতলা থেকে নেমে তার পরে প্রায় ৬০০ মিটার রাস্তা এক জন মানুষ পৌঁছে গেলেন মাত্র ৪৩ সেকেন্ডে!
আর জি করে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সিসি ক্যামেরার যে সমস্ত ফুটেজ তদন্তে পাওয়া গিয়েছে, তাতে ধৃত সঞ্জয় রায়ের এই গতিবিধি নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। হাসপাতাল এবং শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়, এই দু’জায়গার সিসি ক্যামেরার ফুটেজের সময় নিয়েই তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের অভিযোগ, তথ্যপ্রমাণে এমন বিভিন্ন রকমের ফাঁক ও অসঙ্গতি থাকলেও সেগুলি নিয়ে সিবিআই কোনও পদক্ষেপ করছে কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী বলেন, ‘‘সঞ্জয় তো সুপারম্যান নন যে, মাত্র ৪৩ সেকেন্ডে এতটা দূরত্ব পৌঁছে গেলেন। সিবিআইয়ের কাছে এই সমস্ত ফাঁক ও অসঙ্গতিগুলি জানিয়েছি।’’
তমোনাশ আরও বলেন, ‘‘তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার হত্যা হয়েছে, কিন্তু কেউ তাঁকে হত্যা করেনি। এমনটা যাতে না হয়, তার জন্য সিবিআইকে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে হবে।’’ সূত্রের খবর, আর জি করের ঘটনায় সিবিআই ওই হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার, জরুরি বিভাগের চারতলায় বক্ষরোগ বিভাগের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। পাশাপাশি, ৮ অগস্ট দুপুর থেকে ৯ অগস্ট ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সঞ্জয়ের গতিবিধি দেখা গিয়েছে, এমন ৫১টি সিসি ক্যামেরার (কলকাতা পুলিশের) ফুটেজও সংগ্রহ করেছে তারা। সেই সব তথ্য থেকেই দেখা যাচ্ছে, ভোর ৪টে ৩২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে বক্ষরোগ বিভাগের ওয়ার্ড থেকে সঞ্জয় বেরিয়ে আসছেন। আর সেই ছবি ধরা পড়েছে চারতলার বক্ষরোগ বিভাগের ক্যামেরাতেই। আর ওই ব্যক্তি যে সঞ্জয়, তা চিহ্নিতও করেছেন কলকাতা পুলিশেরই এক এএসআই।
কলকাতা পুলিশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ৪টে ৩৩ মিনিট ১৩ সেকেন্ডে বাইক নিয়ে সঞ্জয় শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড় পার হচ্ছেন। ধোঁয়াশা এখানেই। আর জি করের জরুরি বিভাগের চারতলা থেকে নেমে, কয়েক পা হেঁটে তার পরে বাইক নিয়ে হাসপাতালের মূল গেট থেকে বেরিয়ে প্রায় ৬০০ মিটার রাস্তা অর্থাৎ পাঁচ মাথার মোড়ে কী ভাবে এত কম সময়ে পৌঁছতে পারে কেউ? এই প্রশ্ন তুলে চিকিৎসকদের বড় অংশের অভিযোগ, ‘‘এই সমস্ত অসঙ্গতি থেকেই বোঝা যাচ্ছে, কাউকে আড়াল করার মরিয়া চেষ্টা চলছে।’’
এই সব বিষয় নিয়েও ধর্মতলায় সরব হয়েছেন চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আয়োজকেরা বলছেন, ‘‘এমনিতেই রাত ৯টার পরে মাইক বাজাই না। এখন সকাল ১০টার আগেও বাজাচ্ছি না। কিন্তু মঞ্চে দিনরাত থাকছি।’’