গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাগুলির শুনানি হয়। মোট পাঁচটি জনস্বার্থ মামলায় আবেদনকারীদের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে সওয়াল করেন। এই ঘটনায় রাজ্য এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন মামলাকারীরা। আরজি কর সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে সওয়াল পর্বে বলেন, “কামদুনিতে ধর্ষণ এবং খুনের মামলা যে ভাবে সাজানো হয়েছিল, সেই একই কায়দায় আরজি করের মামলা সাজানো হচ্ছে।” যাবতীয় অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, বুধবার সকাল ১০টায় তাদের তরফে সবার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে।
মঙ্গলবার জনস্বার্থ মামলাগুলির আইনজীবীরা তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন। শুভেন্দু অধিকারীর তরফে করা জনস্বার্থ মামলাটির আইনজীবী আদালতে বলেন, “৩০ মিনিটের মধ্যে এক জনের পক্ষে ওই ঘটনা সম্ভব নয়। এই কোর্টের নির্দেশে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে নির্দেশিকা রয়েছে। রবিবার পর্যন্ত দেখা হবে বলা হচ্ছে। তার পরে সিবিআইকে তদন্তভার দেওয়া হবে। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” সওয়াল পর্বে নিহত চিকিৎসকের পরিবারের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও আদালতে একই আশঙ্কার কথা জানান। তিনি বলেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ইঙ্গিত করছে, এক জনের পক্ষে ওই ধরনের জঘন্য অপরাধ করা সম্ভব নয়। আরও কেউ জড়িত রয়েছেন।” কেন সিবিআইকে দ্রুত তদন্তভার দেওয়া হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিকাশরঞ্জন। তিনি বলেন, “কেন সিবিআইকে দেওয়ার জন্য আরও সময় দেওয়া হবে? তথ্য নষ্ট হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।” কেন্দ্রের আইনজীবী আদালতকে জানান, সিবিআই এখনই তদন্ত করতে প্রস্তুত।
প্রধান বিচারপতি জানতে চান, নিহত চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন, এই কথা কে বলেছিলেন? বিকাশরঞ্জন বলেন, “প্রথমে পরিবারকে কেউ ফোন করে বলেন, আপনাদের মেয়ে অসুস্থ। তার পরে আবার ফোন করে বলা হয়, আপনাদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু ময়নাতদন্ত তা বলছে না। ঘটনাস্থলে ওই মহিলা চিকিৎসককে এমন অবস্থায় দেখা যায়, সাধারণ ভাবে যে কেউ বলবেন এটা কোনও ভাবেই আত্মহত্যা হতে পারে না। মেয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকের পরিবারকে হাসপাতালে ৩ ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয় বলেও দাবি করেন বিকাশরঞ্জন।
আইনজীবী এডুলজি তদন্ত প্রক্রিয়া থেকে কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলকে সরানোর জন্য হাই কোর্টে আর্জি জানান। কামদুনির ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর সওয়াল, “কামদুনির ঘটনার সময় বিনীত গোয়েল সিআইডির আইজি ছিলেন। আরজি কর মামলাও একই কায়দায় সাজাচ্ছেন বিনীত। তাঁকে এই তদন্ত থেকে সরানো হোক।” একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে আদালতে বলা হয়, “তদন্ত করছে পুলিশ। কিছু লুকিয়ে রাখা হচ্ছে না। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, আরও এক জন জড়িত। কিন্তু এর কোনও সত্যতা এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।” রাজ্যের তরফে এ-ও জানানো হয় যে, তদন্ত নিয়ে তারা বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে প্রস্তুত। তবে আদালতের কাছে সময় চেয়ে রাজ্য জানায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে। তদন্তের গতিপ্রকৃতি জানিয়ে বলা হয়, আরজি করের ঘটনায় ইতিমধ্যেই ৩৫-৪০ জনের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে।