(বাঁ দিকে) আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল । সেমিনার হলের সামনে বিক্ষোভ (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
আরজি করের তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়, প্রথম থেকেই দাবি করে আসছিলেন মৃতার বাবা-মা। পরিবারের দাবি, তাদের মেয়েকে মেরে ফেলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সে দিকেই স্পষ্ট ইঙ্গিত দিল। সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তে মৃতার শরীরে একাধিক অংশে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। মুখে, ঠোঁটে, পেটে, হাতে-পায়ে, পেটে, এমনকি যৌনাঙ্গেও আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। কী ভাবে এই আঘাত লাগল, তা ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে স্পষ্ট নয়। তবে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
শুক্রবার সকালে আরজি কর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয় চিকিৎসকের দেহ। সেই নিয়ে শুরু হয় হইচই। ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিজেপি, তৃণমূল নেতৃত্বও। কী ভাবে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হল তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। শুক্রবারই আরজি কর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে ময়নাতদন্ত করা হয়। সেই ময়নাতদন্তে উঠে আসে মৃতার শরীরে একাধিক ক্ষতের কথা।
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, সেমিনার হলে একটি নীলরঙা কার্পেটের উপর চিকিৎসকের রক্তাক্ত দেহ পড়েছিল। কার্পেটের চারপাশে চুলের গোছা পড়ে থাকতেও দেখা যায়। সেই কার্পেটে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছিল। তাঁর দু’চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ার চিহ্নও মিলেছে। এ ছাড়া, মুখেও রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। পাশাপাশি শরীরের বিভিন্ন অংশ, যেমন বাঁ পা, পেট, নখ, মুখ, ঠোঁট, যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। হাড় ভাঙারও কথা উল্লেখ রয়েছে প্রাথমিক রিপোর্টে।
কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে তারা তদন্ত করছে। পুলিশ সূত্রে খবর, খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে। সেই ভিত্তিতেই তদন্ত করছে সিট। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
চিকিৎসকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সকাল থেকেই ঘটনায় সরব বিজেপি। হাসপাতালের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে তারা। বিক্ষোভ দেখিয়েছে বাম সংগঠন এআইডিএসও। এই ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে এপিডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ ডেমোক্র্যাটিক রাইটস)। তদন্তের দাবিও জানিয়েছে তারা। রাত গড়ালেও উত্তেজনার রেশ কমেনি। আরজি কর হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বাম যুব নেতৃত্ব। সঠিক তদন্তের দাবি তুলেছেন তাঁরা। সেই বিক্ষোভের নেতৃত্বে রয়েছেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তাঁদের প্রশ্ন, যে হাসপাতালে ঘটনা ঘটল, সেই হাসপাতালেই কেন ময়নাতদন্ত করা হল? পাশাপাশি, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মিনাক্ষীরা। অন্য দিকে রাতেই বিজেপির একটি প্রতিনিধি দল টালা থানায় উপস্থিত হয়েছেন।
চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিকিৎসক মৃত্যুর প্রতিবাদে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন। সদস্যেরা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে তদন্ত-সহ তাঁদের বাকি দাবি যত ক্ষণ পর্যন্ত মানা হবে না, তত ক্ষণ বন্ধ থাকবে কাজ। শুধু হাসপাতালের জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। হাসপাতালের ভিতরে বিক্ষোভ দেখায় চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। তরুণীর বাবা জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীও ফোন করে কথা বলেছেন। উপযুক্ত তদন্তের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। হাসপাতালের সুপার ‘সত্য প্রকাশ্যে’ আনার দাবি তুলেছেন। ঘটনার তদন্তে গিয়েছেন খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। হাসপাতালে যান রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম।
উল্লেখ্য, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রীর রহস্যমৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়া এবং চিকিৎসকেরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোমবাতি মিছিলে অংশ নেন তাঁরা। অন্য দিকে, আরজি করের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে। অধ্যক্ষ মৌসুমি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের কাজের পরিবেশ যেন ভাল থাকে। পরিষেবা দেওয়ার কাজ যেন ভাল ভাবে করতে পারি।’’