পুলিশ কলকাতার এসিজেএম (১) আদালতে চার্জশিট দেয়। —প্রতীকী চিত্র।
বড়তলা থানা এলাকার ফুটপাতবাসী সাত মাসের শিশুকন্যাকে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ২৬ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করেছে কলকাতা পুলিশ। বৃহস্পতিবার কলকাতা নগর দায়রা আদালতের বিশেষ পকসো কোর্টে সেই মামলার চার্জ গঠন হল। ৭ জানুয়ারি এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য হয়েছে বলে আদালত সূত্রের খবর।
গত ৪ ডিসেম্বর রাতে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে অভিযুক্ত রাজীব ঘোষ ওরফে গোবরাকে। গত সোমবার ধৃতের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় বড়তলা থানার পুলিশ। সে দিন কলকাতা নগর দায়রা আদালতের বিশেষ পকসো কোর্ট বন্ধ ছিল। তাই পুলিশ কলকাতার এসিজেএম (১) আদালতে চার্জশিট দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ১৩ পাতার চার্জশিটে রাজীবের বিরুদ্ধে অপহরণ, ধর্ষণ, মারধর, পকসো আইনের ছ’নম্বর-সহ বেশ কয়েকটি ধারায় মামলা করা হয়েছে। দু’জন সাক্ষী আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছেন। মামলার বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি সৈকত পাণ্ডে বলেন, ‘‘এই ধরনের মামলায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা আমাদের কর্তব্য। পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করে চার্জশিট দিয়েছে, যা বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে বলেই আশা।’’
এ দিন বড়তলা মামলার চার্জ গঠন হতেই ফের চর্চায় উঠে এসেছে আর জি কর-কাণ্ডে দুই ধৃতের প্রসঙ্গ। আর জি কর-কাণ্ডে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে সিবিআই গ্রেফতার করেছিল ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং টালা থানার প্রাক্তন ওসি
অভিজিৎ মণ্ডলকে। কিন্তু ৯০ দিনেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা চার্জশিট দিতে না পারায় শিয়ালদহ আদালত জামিন দেয় দুই অভিযুক্তকে।
আইনজীবী সেলিম রহমান বলছেন, ‘‘বড়তলা থানার মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশ যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছে বলেই ২৬ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা দিয়েছে। তদন্তকারী সংস্থা তাড়াতাড়ি তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দিলে বিচারপ্রক্রিয়া অবশ্যই দ্রুত হয়। আর এর বিপরীত ঘটলে বিচারপ্রক্রিয়াও দীর্ঘায়িত হয়।’’
আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার দাবি, ‘‘দ্রুত তদন্ত করে ২৬ দিনে চার্জশিট দেওয়া
নিঃসন্দেহে কলকাতা পুলিশের কৃতিত্ব।’’ তবে দ্রুত চার্জশিট জমা দিতে গিয়ে কোনও ভুল যাতে না হয়ে যায়, সে দিকেও তদন্তকারী সংস্থাকে নজর রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ দ্রুত চার্জশিট পেশ করলে সাজা ঘোষণাও দ্রুত হয়। এই প্রসঙ্গে অনির্বাণ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ন’বছরের বালিকাকে ধর্ষণ ও খুনের মামলার উদাহরণ টেনে আনেন। সেই মামলায় ৬২ দিনে অপরাধী মোস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত।
আর এক আইনজীবী ইয়াসিন রহমানের আবার মত, ‘‘কোনও ঘটনায় তদন্তকারী সংস্থা অতি সক্রিয়, কোনও ক্ষেত্রে অতি নিষ্ক্রিয়। রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এবং পুলিশকে তাদের মতো করে কাজ করতে দিলে কী হয়, তার উদাহরণ বড়তলা থানার মামলা।’’ আইনজীবী বি এস চৌবের বক্তব্য, ‘'বড়তলা থানার ঘটনার মতো দ্রুত তদন্ত শেষ হবে, সাধারণ মানুষের এটাই কাম্য। ৯০ দিনে চার্জশিট পেশ করতে না পারাটা তো কোনও মাপকাঠি হতে পারে না।’’