Crime

চার অপরাধ দেখে নাবালককে সাবালক গণ্য করার মামলা সাজাচ্ছে পুলিশ

তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত নাবালককে সাবালক হিসাবে গণ্য করে বিচার করার আবেদন জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ।

Advertisement
নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৪ ০৬:৩৭
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

ঘটনা ১: ২০১৭ সালের অগস্ট। নিউ আলিপুরের বাড়িতে খুন হন প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার, ৮২ বছরের মলয় মুখোপাধ্যায়। চুরি করতে ঢুকে বৃদ্ধের বুকের উপর উঠে বসে এক নাবালক। সঙ্গী প্রাপ্তবয়স্কেরা বৃদ্ধের হাত-পা চেপে ধরলে তাঁর গলায় রবার ব্যান্ড পেঁচিয়ে ধরেছিল ওই নাবালক, যতক্ষণ না বৃদ্ধের ছটফটানি বন্ধ হয়।

Advertisement

ঘটনা ২: জ়াকারিয়া স্ট্রিটে ২০১৭-র অক্টোবরে খুন হন রত্ন ব্যবসায়ী মহম্মদ সেলিম। চুরির জন্য সেলিমের চেম্বারে ঢুকে তাঁকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে এক নাবালক। মেরে ফেললি কেন? সঙ্গী প্রাপ্তবয়স্কদের প্রশ্নের উত্তরে সে বলে, ‘‘আমাকে দেখেছে! জ্ঞান ফিরলেই পুলিশে বলে দিত।’’

ঘটনা ৩: ২০১৮ সালের জুনে খুন হন কসবার টেগোর পার্কের বাসিন্দা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার শীলা চৌধুরী। বৃদ্ধার ঘরে খাটের নীচে লুকিয়ে ছিল এক নাবালক। সেখান থেকেই বৃদ্ধার পা টেনে ধরে সে। তিনি হুমড়ি খেয়ে পড়লে সঙ্গী সাবালক তাঁর মুখে ও কপালে ঘুষি মারতে থাকে। শেষে রড দিয়ে মেরে মাথা থেঁতলে দেয়। সেই সময়েও প্রৌঢ়ার পা দুটো চেপে ধরে রেখেছিল ওই নাবালক।

তিনটি ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত নাবালককে সাবালক হিসাবে গণ্য করে বিচার করার আবেদন জানিয়েছিল কলকাতা পুলিশ। খুনের মতো অপরাধের পরিণাম কী হতে পারে, তা বোঝার অবস্থা নাবালকের আছে কিনা ও এ হেন অপরাধ করার জন্য সে উপযুক্ত শারীরিক ও মানসিক শক্তিসম্পন্ন কিনা, তা দেখে পুলিশকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’র মেডিক্যাল বোর্ড রিপোর্ট দেয়, অপরাধ করার মতো শারীরিক, মানসিক ক্ষমতা ছিল সংশ্লিষ্ট নাবালকের। পরিণাম সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল ছিল সে। তার ভিত্তিতেই আদালত সাবালক হিসাবে গণ্য করার নির্দেশ দেয় তিন ক্ষেত্রেই।

অতীতের উদাহরণ সামনে রেখেই সম্প্রতি ঠাকুরপুকুরে পালিত কন্যা ও তার প্রেমিকের হাতে মায়ের খুনের ঘটনার তদন্ত এগোতে চাইছে লালবাজার। ইতিমধ্যেই ওই নাবালক-নাবালিকাকে সাবালক ধরে বিচারের আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘যে ভাবে নাবালক প্রেমিকের সঙ্গে মিলে ওই কিশোরী মাকে খুনের পরিকল্পনা করেছে, তাতে মানসিক দৃঢ়তার ছাপ স্পষ্ট। দেহের সৎকার থেকে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে দু’জনকে যে ভাবে সব কিছু করতে দেখা গিয়েছে, তাতে খুন ধামাচাপা দেওয়ার ভাবনাও স্পষ্ট।’’

এর সঙ্গে পুলিশকর্তারা মিল পাচ্ছেন গড়িয়াহাট থানা এলাকার গরচার ঘটনার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঊর্মিলা ওরফে ললিতা ঝুন্ড নামে এক বৃদ্ধা নৃশংস ভাবে খুন হন। তাঁর শরীরে দু’ডজনেরও বেশি গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়া হয় মাথা। পুলিশ বৃদ্ধার পুত্রবধূ এবং নাতনির পাশাপাশি, পুত্রবধূর প্রেমিককেও গ্রেফতার করে। ধৃতের আইনজীবী দাবি করেন, নাতনির বয়স ১৮ বছর হতে তখনও সাত মাস বাকি। যদিও আদালত তাকে প্রাপ্তবয়স্ক ধরেই বিচারের নির্দেশ দেয়।

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ২০০০ সালের ‘জুভেনাইল জাস্টিস (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন অব চিলড্রেন) অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, ১৮ বছরের কম কাউকে প্রাপ্তবয়স্কদের বিচার প্রক্রিয়ায় শামিল করা যাবে না। রাখতে হবে হোমে। অভিযোগ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের সাজা। ২০১২ সালে দিল্লির নির্ভয়া-কাণ্ডে বাকি অভিযুক্তেরা কড়া শাস্তি পেলেও অভিযুক্ত নাবালককে রাখা হয়েছিল হোমে। তিন বছর পরে ছাড়া পায় সে। এর পরে ঘৃণ্য অপরাধের ক্ষেত্রে নাবালককে সাবালক হিসাবে ধরা উচিত কিনা, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ২০১৫ সালে জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট সংশোধন করে বলা হয়, ১৬-১৮ বছর বয়সি কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক খুন-ধর্ষণ-পাচার-অ্যাসিড ছোড়ার মতো অপরাধে অভিযুক্ত হলে, জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড স্থির করবে তাকে প্রাপ্তবয়স্ক ধরা হবে কিনা। লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘২০১৯ সালে হোম থেকে বেরিয়ে আসা মানসিক ভারসাম্যহীন, মৃগী আক্রান্ত এক মহিলাকে গাড়িতে তুলে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে পঞ্চসায়রে। গ্রেফতার হয় এক নাবালক। যদিও শেষ পর্যন্ত তাকে সাবালক হিসাবে বিচারের আওতায় আনা যায়নি।’’

আরও পড়ুন
Advertisement