বেহাল ফুটপাত কাশীপুর রোডে। —নিজস্ব চিত্র।
একে হতশ্রী দশা। সেই সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত হকারদের দাপট। এই জোড়া ফলায় শহরের ফুটপাতে পা রাখাই দায়! কোথাও ফুটপাতের এবড়োখেবড়ো দশা। কোথাও কেব্ললাইন বা জলনিকাশি সংযোগের জন্য ফুটপাত খোঁড়াখুঁড়ি হলেও পরে তা মেরামতির বালাই নেই। ফলে শহরের ফুটপাত এখন সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমতো ‘আতঙ্ক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টালা থেকে টালিগঞ্জ, বেহালা থেকে বেলেঘাটা— কলকাতার সর্বত্র ফুটপাতের ছবিটা মোটামুটি একই। খাস ধর্মতলা এলাকার বিভিন্ন রাস্তার ফুটপাত উঁচু-নীচু, কোথাও বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে গর্ত। কোথাও ফুটপাত জুড়ে পড়ে থাকে উঁচু করে রাখা মাটি বা নির্মাণসামগ্রী। সম্প্রতি চাঁদনি মেট্রো স্টেশন যাওয়ার পথে ম্যাডান স্ট্রিটের ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সিঁথির বাসিন্দা, ব্যবসায়ী সুদীপ মিত্র অভিযোগ করলেন, ‘‘ফুটপাতের বেশির ভাগ অংশ হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। ফুটপাতের অবস্থাও জরাজীর্ণ। ফুটপাত সমান না হওয়ায় হাঁটতে খুব সমস্যা হয়। বয়স্কদের হাত ধরে না নিয়ে গেলে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। ক’দিন আগেই এক বৃদ্ধাকে ফুটপাতে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে দেখেছি।’’ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার ফুটপাতের এমন বেহাল দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ শহরবাসীদের একটা বড় অংশ। বেহালার বাসিন্দা রমেন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘বছর দুয়েক আগে কলকাতা পুরসভায় মেয়র হিসাবে শপথ নেওয়ার পরে ফিরহাদ হাকিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নাগরিক পরিষেবা প্রদানে পুরসভা সচেতন হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ও কলকাতাকে লন্ডন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ দু’বছর পার হতে চললেও শহরে হকারদের দাপট যথেষ্ট বেড়েছে। তার উপরে ফুটপাতের যেটুকু জায়গা রয়েছে, তা হাঁটার যোগ্য নয়।’’ ফুটপাতের হতশ্রী দশায় পুরসভার বিরুদ্ধে ক্ষোভ চেপে রাখেননি একাধিক পথচারী।
কলকাতা পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে, কাশীপুর রোড ও গোপাল চ্যাটার্জি রোডের সংযোগস্থল থেকে বরাহনগরের দিকে কিছুটা এগোলেই কাশীপুর রোডের ডান দিকের ফুটপাত চলাচলের প্রায় অযোগ্য। সেখানে মাটি জমে উঁচু হয়ে রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘‘প্রায় এক মাস আগে ফুটপাত কেটে কেব্ললাইন বসানো হয়েছে। কিন্তু ফুটপাত সারানোর নামগন্ধ নেই।’’ সামনেই কাশীপুর-বেলগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক তথা কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের জনসংযোগ কার্যালয়ের অফিস। এ নিয়ে তাঁকে ফোন করা হলে তিনি ওই ফুটপাত দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছেন। স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি কার্তিক মান্না বলেন, ‘‘কাশীপুর রোডের ওই ফুটপাত শীঘ্রই সারানো হবে।’’ কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাশীপুর রোডের ফুটপাত শীঘ্রই মেরামত করা হবে। শহরের বাকি অংশের ফুটপাতও ধীরে ধীরে সংস্কার করা হবে।’’ মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কলকাতাকে পরিকল্পনা মাফিক সাজিয়ে তুলতে কী ভাবে কী করা যায়, আমরা খতিয়ে দেখছি।’’