গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘‘শনিবার যা ঘটল, আমরা আলোচনা করতে গিয়েছিলাম, শুরু থেকে বলেছিলাম আলোচনা চাই, কী দাঁড়াল! শর্তহীন আলোচনাতেও রাজি ছিলাম। হয়তো একটু দেরি হয়েছে। কিন্তু মুখ্যসচিব, মন্ত্রী বললেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় অতিবাহিত। এই হলে কী ভাবে আস্থা রাখব। আমাদের ফ্রন্টের তরফে আলোচনা করে জানাব।’’
কালীঘাট থেকে ফিরে এসে আন্দোলনকারীরা জানালেন, বৈঠকের পর পরবর্তী পদক্ষেপের কথা জানানো হবে।
কালীঘাট থেকে স্বাস্থ্য ভবনে ফিরে এলেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। স্লোগান উঠছে, ‘বিচার চাই’।
আন্দোলনকারীদের কথায়, ‘‘ভিডিয়ো যেটা করা হচ্ছে, আমাদের কাছে থাকা উচিত। সঙ্গে সঙ্গে দেওয়া উচিত। তাঁরা বললেন, দেওয়া যাবে না। আমরা আবার আলোচনা করলাম। মুখ্যমন্ত্রী আমাদের কাছে এলেন। আমরা ভিজছিলাম। তিনি এসে বলেন, ‘ভিতরে এসো, বৈঠক না করো, চা খেয়ে যাও।’ ভিডিয়ো আমরা করে দেব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর। এই ঘটনার পর আমরা আবার আলোচনা করলাম। মুখ্যমন্ত্রী এসে একটা জায়গা রাখার চেষ্টা করলেন। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। তাঁর চেয়ারের প্রতি সম্মান রেখে আমরা ভিডিয়োগ্রাফি ছাড়াই মিনিটস দেওয়ার শর্তে রাজি হলাম। তিনি যখন নিজে অনুরোধ করলেন, আমরা ঠিক করলাম, আস্থা রাখি। যখন আলোচনা করে জানাতে গেলাম, তখন হঠাৎ করে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বললেন, অনেক হয়েছে আর সম্ভব নয়। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আলোচনায় বসতে রাজি নই। আমাদের এত সদিচ্ছা, এতটা নামলাম, এই অচলাবস্থা যাতে কাটানো যায়, তার জন্য সব শর্ত মানলাম, তার পর বলা হল, সম্ভব নয়! তার পর তাঁরা বেরিয়ে গেলেন।’’
আন্দোলনকারীরা জানান, ঠিক কী ঘটেছে কালীঘাটে। তাঁরা দাবি করেন, বৈঠকের ভিডিয়ো চেয়েছিলেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে জানানো হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পেলে দেওয়া হবে। আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘‘আমরা চিঠিতে স্বচ্ছতার কথা বলেছি। আমরা অনেক নেমে এসে গিয়েছি। আমরা আলোচনা করতে এসেছিলাম। আমরা খুব হতাশ।’’
মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন মুখ্যসচিব মনোজ, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদেরও ‘সদিচ্ছা’ রয়েছে। কথা বলতে চান তাঁরা। আরও আধ ঘণ্টা সময় চান তাঁরা। জানান, ঘড়ি, মোবাইল জমা রেখেই ভিতরে প্রবেশ করবেন তাঁরা। মুখ্যসচিব জানান, আর সম্ভব নয়। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন তাঁরা। চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘আমরাও কথা বলতে চেয়েছি।’’
মুখ্যসচিব এসে কথা বলছেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে। কথা বলছেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা।
মমতা জানালেন, আন্দোলনকারীরা যে চিঠি দিয়েছিল, তাতে সরাসরি সম্প্রচারের কথা ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘যদি না-ই আসো তা হলে চিঠি দিলে কেন? আমাকে অসম্মান করছ। এর আগেও আমি তিন দিন অপেক্ষা করে বসে থেকেছি। রাজনীতি ভুলে যাও। মানুষের স্বার্থে এসো, কথা বলো। মিনিটস সই করে দেব, আমাদের তরফে একজন সই করবে, তোমাদের তরফেও এক জন সই করবে। তোমরা যদি কথা বলতে না চাও, বৈঠক না করো, অন্তত এক বার ভিতরে এসে চা খেয়ে যাও।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘সব দাবি মানা সম্ভব নয়। কোর্টে অনুমতি নিয়ে ভিডিয়ো দেওয়া হবে। আমার উপর ভরসা রাখো, তোমাদের মিসলিড করব না।’’
মমতা বললেন, ‘‘বৈঠক না করো অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যাও। ভিজো না। তোমাদের অসুখ করলে আমার খারাপ লাগবে। আমরাও কেউ ভিডিয়ো রেকর্ডিং করব না।’’ মমতা এ-ও জানান, আন্দোলনকারীদের জন্য ছাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বার বার ভিজতে বারণ করেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘একটা মানুষের বাড়িতে কি ৪০ জনের জায়গা হয়! তা-ও আমি ব্যবস্থা করেছি।’’
ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মমতা। জুনিয়র ডাক্তারদের ঘরে যেতে অনুরোধ করলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে।
কালীঘাটের বাড়িতে অপেক্ষা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশে রয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী, রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার।
কালীঘাটের বাড়িতে মমতা। — নিজস্ব চিত্র।
জুনিয়র ডাক্তার অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কী কারণে আমাদের ভিডিয়োগ্রাফারকে অনুমতি দেওয়া যাবে না? আমরা এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি। বলি, যে আমাদের ভিডিয়ো তোলা হচ্ছে। তাঁরা বলেন, এটা নিরাপত্তা জোন। আমরা সেটাও মেনে নিয়েছি। এর পর জানাই, তাঁদের তরফে যে ভিডিয়ো তোলা হবে, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের এক জন প্রতিনিধি রাখা হোক। প্রযুক্তিগত সমস্যা হলে যাতে আমাদের লোকও দেখতে পারেন। বৈঠকের শেষে যাতে পুরো ভিডিয়ো আমাদের দেওয়া হয়। নম্রভাবে জানিয়েছি, এর কারণ, আমাদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর অবিশ্বাসের বিষয় নেই। আমাদের প্রতি ডাক্তারি জনতা, যাঁরা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে বসে রয়েছে, তাঁদের জবাব দেওয়ার জন্য এটা বলেছি। কিন্তু এখনও আমরা অপেক্ষা করছি।’’
আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘‘আমাদের সঙ্গে নিজস্ব ভিডিয়োগ্রাফার রয়েছেন। আমরা তাঁকে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে বলি। ভিডিয়োগ্রাফির প্রক্রিয়া যাতে আমরাও চালাতে পারি। এই প্রক্রিয়া যাতে দ্বিপাক্ষিক হয়। তাঁদের অনুরোধ করি। তাঁরা দফায় দফায় আলোচনা করে জানান, সেটাও সম্ভব নয়।’’
আন্দোলনকারীদের দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। মুখ্যসচিব স্যর আসেন, আমরা তাঁকে বলি, সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে। তিনি বলেন, এটা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি। এখান থেকে সরাসরি সম্প্রচার সম্ভব নয়। দফায় দফায় আলোচনা করে জানায় সম্ভব নয়।’’
কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পৌঁছেছেন আন্দোলনকারীরা। সূত্রের খবর, জুনিয়র ডাক্তারদের সরাসরি সম্প্রচারের দাবি নিয়ে আবার জটিলতা তৈরি হয়েছে।
নির্যাতিতার মা বলেন, ‘‘সুষ্ঠু সমাধান হোক। দোষীদের শাস্তি হোক। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, যদি কেউ দোষী থাকে, তাঁর শাস্তি হোক। দোষী তো সকলেই। আমি চাইব তিনি দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে শাস্তি দিন।’’
কিছু ক্ষণের মধ্যেই কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে শুরু হচ্ছে বৈঠক।
বাস থেকে নামার সময় আন্দোলনকারীরা জানালেন, নিজেদের পাঁচটি দাবিতে তাঁরা অনড়। কী সেই দাবি? প্রথমত, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। দ্বিতীয়ত, তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার। তৃতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা। চতুর্থত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। পঞ্চমত, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।
কালীঘাটে পৌঁছে স্লোগান জুনিয়র ডাক্তারদের, ‘বিচার চাই’।