Transport

দেশে সবচেয়ে শ্লথ শহর কলকাতা! রোগ সারবে কি

বার বার দুর্ঘটনা সত্ত্বেও পথচারীদের রাস্তায় নেমে হাঁটা বন্ধ হচ্ছে না। আটকানো যাচ্ছে না রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে হকারদের দাপট।

Advertisement
নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৫
আটকানো যাচ্ছে না রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে হকারদের দাপট।

আটকানো যাচ্ছে না রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে হকারদের দাপট। —ফাইল চিত্র।

কোথাও রাস্তার উপরেই পার্কিং করা গাড়ি, মোটরবাইক। কোথাও দ্রুত গতিতে গাড়ি চলার রাস্তায় ঢুকে পড়ছে ঠেলাগাড়ি, সাইকেল ভ্যান বা সাইকেলের মতো শ্লথ গতির যান। একমুখী রাস্তাতেও উল্টো দিক থেকে ঢুকে পড়ছে গাড়ি, মোটরবাইক। বার বার দুর্ঘটনা সত্ত্বেও পথচারীদের রাস্তায় নেমে হাঁটা বন্ধ হচ্ছে না। আটকানো যাচ্ছে না রাস্তার উপরে পসরা সাজিয়ে হকারদের দাপট। সরছে না যেখানে-সেখানে রাখা পুলিশের গার্ডরেল!

Advertisement

এই পরিস্থিতিতেই দেশের মধ্যে সব চেয়ে ‘শ্লথ শহর’-এর ‘শিরোপা’ পেয়েছে কলকাতা। বিশ্বের ৫০০টি শহরের মধ্যেও শ্লথ শহরের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতা। গত ৮ জানুয়ারি একটি ‘ডাচ লোকেশন টেকনোলজি ফার্ম’-এর প্রকাশিত সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে আসার পরেই শুরু হয়েছে জল্পনা। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে কলকাতায় কোনও যানের ১০ কিলোমিটার পথ পেরোতে ৩৪ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময় লেগেছে। ২০২৩ সালে সেই সময় লেগেছিল ১০ সেকেন্ড কম। কলকাতার পরেই শ্লথ শহরের তালিকায় রয়েছে বেঙ্গালুরু, পুণে, হায়দরাবাদ, চেন্নাই, মুম্বই, আমদাবাদ, এর্নাকুলাম, জয়পুর এবং নয়াদিল্লি। মুম্বইয়ে ১০ কিলোমিটার পথ যেতে যেখানে ২৯ মিনিট ২৬ সেকেন্ড সময় লাগছে, সেখানে নয়াদিল্লিতে সময় লেগেছে ২৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড। তাই সমীক্ষা অনুযায়ী, কলকাতাই দেশের মধ্যে অন্যতম ঘিঞ্জি শহর।

রাস্তার ধরন, সেখানে কত গাড়ি চলতে পারে, গতির ঊর্ধ্বসীমা কত— ইত্যাদি স্থায়ী তথ্য এবং যানজট কতটা, রাস্তায় কোনও নির্মাণকাজ চলছে কিনা, খারাপ আবহাওয়া রয়েছে কিনা— এমন পরিবর্তনশীল তথ্য বিশ্লেষণ করে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, পুরনো পরিকাঠামো, রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা ও দক্ষতার অভাব এবং ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের চাহিদা কলকাতাকে ‘শ্লথ’ করে তুলতে সাহায্য করেছে। যদিও কলকাতার ক্রমশ গতিহারা হয়ে পড়ার আলোচনা নতুন নয়। এর জেরে জনজীবন সমস্যায় পড়তে পারে বলে কয়েক বছর ধরেই জল্পনা চলছে। মূলত অফিসের ব্যস্ত সময়ে নিত্যদিনই ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠায় সম্প্রতি শহরের রাস্তাগুলির উপরে সমীক্ষা করে কলকাতা পুলিশের ‘প্ল্যানিং অ্যান্ড সার্ভে’ বিভাগ। একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের পাশাপাশি, কোন রাস্তায় প্রতিদিন গড়ে কত গাড়ি চলে, সেই হিসাব করা হয়। কোন রাস্তায়, কখন, কত গাড়ির চাপ থাকে, তা নিয়ে আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়। এর পরে রাস্তা ধরে ধরে ট্র্যাফিক সিগন্যালের সময় ঠিক করার এবং স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় লালবাজার। পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ শুরু হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। সেখানে প্রতিটি সিগন্যালে কিছু সেকেন্ড করে সময় বাঁচিয়ে মোট ১৩ মিনিট সাশ্রয় করানো যাচ্ছে বলে দাবি লালবাজারের। কোনও সিগন্যালে এক বার দাঁড়াতে হলে পরের তিনটি বা চারটি সিগন্যালে যাতে না দাঁড়িয়ে গাড়ি যেতে পারে, সেই বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলেও দাবি পুলিশের।

কিন্তু ট্র্যাফিক পুলিশেরই একাংশের দাবি, স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় রাস্তায় কোনও গাড়ি বিকল হলে দ্রুত তা সরানো যাচ্ছে না। ফলে বিকল গাড়িটির পিছনে অন্য যানবাহনের লম্বা লাইন পড়ে যাচ্ছে। হঠাৎ মিছিল বা পথ অবরোধ হলে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতিতে গ্রিন করিডর করতেও নাজেহাল হতে হচ্ছে। যদিও স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থার কোনও বদল হয়নি। উল্টে লালবাজার জানায়, এতে কম সংখ্যক পুলিশকর্মীকে পথে রেখে কাজ চলে যাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, এই ট্র্যাফিক ব্যবস্থার জেরেই কি শ্লথ হচ্ছে শহর? পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী না থাকাতেই কি ঠেলাগাড়ি, সাইকেল ভ্যানের যত্রতত্র প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? বন্ধ হচ্ছে না পথে হকারের দাপট, যেমন খুশি রাস্তা পারাপার?

যদিও লালবাজারের কর্তাদের দাবি, পর্যালোচনায় তাঁরা দেখেছেন, এই সমীক্ষা শুধু কলকাতা শহর নয়, এর পার্শ্ববর্তী নানা জায়গা নিয়ে করা হয়েছে। তা ছাড়া, কলকাতা ছোট শহর। বাইপাসের কিছুটা অংশ ধরে সব মিলিয়ে ১০ কিলোমিটার হিসাব করেও সমীক্ষা করা হয়ে থাকলে সেই পথ পেরোতে ২০-২২ মিনিট লাগার কথা। কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) ইলওয়াদ শ্রীকান্ত জগন্নাথরাও বললেন, ‘‘কলকাতার পথের গতি নিয়ে তেমন কোনও সমস্যা নেই। যদিও পথের গতির চেয়ে পুলিশের কাছে সব সময়ে পথের নিরাপত্তা আগে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন