গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মাণ ভেঙে পড়ার ঘটনায় বিপাকে পড়েছে কলকাতা পুরসভা। রবিবার গভীর রাতে গার্ডেনরিচের ব্যানার্জিপাড়া এলাকায় নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে পড়ার পর শহরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কলকাতা পুরসভার বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই কলকাতা শহর জড়ে বেআইনি নির্মাণের উপর নজরদারি করতে ওয়ার্ড অফিসারদের ময়দানে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই বৈঠকে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৫ নম্বর বোরো এবং ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এবং সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে শোকজ় করেছে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাঁদের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গার্ডেনরিচের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কড়া পদক্ষেপ করতে মেয়রের উদ্যোগে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করেছে কলকাতা পুরসভা। সেই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতি দিন সকাল সাড়ে ১০টায় অফিসে ঢুকেই ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা নিজেদের ওয়ার্ড পরিদর্শন করবেন। সেই ওয়ার্ডের কোথাও কোনও বেআইনি নির্মাণ হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার বোরো-১৫-র চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল দাবি করেছেন, ‘‘গত দেড়-দু’মাসে ২০টির বেশি বাড়ি বেআইনি নির্মাণের অভিযোগে ভাঙা হয়েছে। এই ঘটনার পর কলকাতা পুরসভা বেআইনি নির্মাণ নিয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে।’’ সে ক্ষেত্রে মেয়রের বৈঠকের পর গৃহীত সিদ্ধান্ত যথেষ্ট কার্যকরী হবে বলেই মনে করছেন শাসকদলের কাউন্সিলরদের একাংশ। তবে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্রের দাবি, ১৫ নম্বর বোরো বা গার্ডেনরিচ অঞ্চলে গত এক বছরে তিনশোর বেশি নোটিস দেওয়া হয়েছে।
তবে কলকাতা পুরসভার অফিসারদের ওয়ার্ডে বেআইনি নির্মাণ পরিদর্শন ও নোটিস দেওয়াকে ‘নাটক’ বলে কটাক্ষ করেছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এখন মুখ বাঁচাতে নাটক করছে কলকাতা পুরসভা। কাউন্সিলররা নিজের বাড়ি ও অফিসে বসে বেআইনি নির্মাণের অনুমোদন দেবেন। আর আধিকারিকেরা ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে তা চিহ্নিত করবেন। এমন উদ্যোগকে নাটক ছাড়া কিছুই বলতে পারছি না। আগে বেআইনি বিল্ডিং বলতে আমরা বুঝতাম, যেখানে ৯০ শতাংশ আইনি ও ১০ শতাংশ বেআইনি বিষয় রয়েছে। এখানে তো দেখলাম, পুরো বাড়িটাই পুরসভার অনুমতি ছাড়া গড়ে উঠছিল।’’ সজল আরও বলেন, ‘‘চাপে পড়ে কলকাতা পুরসভা দাবি করছে, তারা গত কয়েক মাসে ৮০০টি বেআইনি বাড়ি কলকাতা শহরে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু আমরা প্রশ্ন তুলছি, যে ওই বাড়িগুলির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’’
প্রাথমিক ভাবে রবিবার রাতের ঘটনার পর কলকাতা শহরে সমস্ত বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে নোটিস ইস্যু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে নির্মাণ নিয়ে অভিযোগ উঠবে, তা ‘স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি’ সার্টিফিকেট পেলে তবেই ওই নির্মাণকে বৈধতা দেওয়া হবে। না হলে আইনানুগ পদক্ষেপ করবে পুরসভা।