দশম শ্রেণির পড়ুয়া শেখ শানকে শেষ বার দেখা যায় স্কুলের ছ’তলার করিডোরে।—নিজস্ব চিত্র।
স্কুলবাড়ির ছ’তলায় সংস্কারের কাজ চলছিল। বারান্দায় গ্রিল বসানো হচ্ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুক্রবার সেখান থেকেই ঝাঁপ দিয়েছে দশম শ্রেণির ছাত্র শেখ শান। সোমবার কসবার রথতলার সিলভার পয়েন্ট হাই স্কুলের ওই পড়ুয়ামৃত্যুর ঘটনায় কর্তৃপক্ষের এই দাবিকে যদিও উড়িয়ে দিয়েছে মৃতের পরিবার। তাদের দাবি, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই করে পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ওই ছাত্রকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল সোমবার দুপুরে। তখন ছ’তলার করিডোরে ছিল সে। তার অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যে স্কুলবাড়ির নীচে মেলে তার রক্তাক্ত দেহ। সোমবার সন্ধ্যায় কসবা থানা থেকে বেরিয়ে এমনটাই জানিয়েছে মৃতের পরিবার। মৃতের বাবা শেখ পাপ্পু স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং আরও দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ৩০২ এবং ধারা ১২০বি অনুযায়ী খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে।
মৃতের বাবা শেখ পাপ্পুর অভিযোগ, তাঁর ছেলেকে মারধর করেছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। তাঁর আরও দাবি, অনেক দিন আগেই তাঁর ছেলেকে ‘চিহ্নিত’ করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সেই চিহ্নিতকরণ কী কারণে তার কোনও ব্যাখ্যা পাপ্পু দেননি। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ তলা থেকে পড়লে হাড়গোড় ভাঙত ছেলের। কিন্তু সে সব কিছুই তো হয়নি।’’ অন্য দিকে, স্কুল কর্তৃপক্ষ পাপ্পুর এই দাবি উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ‘‘তদন্ত চলছে। কোনও স্কুলই তাদের পড়ুয়াকে ‘চিহ্নিত’ করে না। হেনস্থাও করে না। আমরা শিশু-বান্ধব স্কুল। যে সমস্ত অভিযোগ করা হচ্ছে, আমাদের কোনও শিক্ষকই এমন আচরণ করেন না। ঘটনাক্রম আমরা জানতে পারলে নিশ্চয়ই সমস্তটা আমরা জানাব।’’
সোমবার দুপুরে সিলভার পয়েন্ট হাই স্কুলে রক্তাক্ত অবস্থায় শানকে পাওয়া যায়। তড়িঘড়ি তাঁকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ১৬ বছরের ওই ছাত্রকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, উপর থেকে পড়ে এই মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রের দেহের ময়নাতদন্ত হবে। এর মধ্যে স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে শানের পরিবার। মৃত ছাত্রের বাবার কথায়, ‘‘ওর কান থেকে রক্ত বেরোচ্ছিল। শরীরের হাড় ভাঙেনি। তা হলে কী ভাবে উপর থেকে পড়ে মৃত্যু হল?’’ পাশাপাশি, ছ’তলায় কেন গিয়েছিল শান, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘শানকে ওখানে কি যাওয়া হয়েছিল?’’ তাঁর কথায়, ‘‘করোনার সময় বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ করায় দেখে নেওয়ার ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।’’ তিনি এক শিক্ষিকার নাম করে অভিযোগ করেন। পাশাপাশি, সোমবার, মোট দুই ছাত্রকে নিয়ে কয়েক জন শিক্ষিকা ছ’তলায় নিয়ে গিয়েছিলেন বলেও দাবি করেছেন পাপ্পু।
মৃতের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘শান ভদ্র ছেলে ছিল। পড়াশোনায় ভাল। বাবা এবং দিদার সঙ্গে থাকত। পারিবারিক কিছু কারণে ছেলেটির মা অন্যত্র থাকেন।’’ সে নিয়ে কি ছাত্রের মধ্যে কোনও অবসাদ কাজ করত? উত্তর মেলেনি। মৃতের বাবার কথায়, ‘‘আমার ছেলের আজ দুটো প্রজেক্ট স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ও একটা প্রজেক্ট নিয়ে যায়। গোটা ক্লাসের সামনে ওকে বলা হয়, ‘কান ধরো’। হয়তো ওর মনে কোথাও দাগ পড়ে। এর পর ছেলেটা কোথায় চলে গেল, স্কুলের কেউ জানতে পারল না! কোনও সিকিউরিটি নেই? এখন বলছে ও ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে! কিন্তু আগে আমাকে ফোনে বলা হয়েছিল যে, ও সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। কোনটা সত্যি?’’ সন্তানহারা পাপ্পু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ছেলের মৃত্যুর বিচার চেয়েছেন।
গত ৯ অগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের দেহ পাওয়া যায় মেন হস্টেলের নীচে। ওই ঘটনা নিয়ে শোরগোল অব্যাহত। এ বার স্কুলছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।