ভিন্ ধর্ম বা ভিন্ন জাতের যুগলদের মুশকিল আসানে সক্রিয় ধনক নামে একটি মঞ্চের অভিজ্ঞতায় এ ছবি উঠে এসেছে। — প্রতীকী চিত্র।
গত ছ’বছরে দেশ জুড়ে ১৮৯০ জন ছক-ভাঙা যুগলের সঙ্কটের সাক্ষী তাঁরা। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে ৪২৩টি, দিল্লিতে ২৭৫টি, মহারাষ্ট্রে ঘটেছে ২৪৬টি ঘটনা। রাজস্থানে ১১৩টি, হরিয়ানায় ১০২টি, গুজরাতে ৯৮টি এবং বিহারের ৯২টি ঘটনাও রয়েছে। কিছুটা কম হলেও পশ্চিমবঙ্গেও ৪৮টি ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। এ দেশে ভিন্ ধর্ম বা ভিন্ন জাতের যুগলদের মুশকিল আসানে সক্রিয় ধনক নামে একটি মঞ্চের অভিজ্ঞতায় এ ছবি উঠে এসেছে। ওই নথিতে ৫৯ শতাংশ ভিন্ ধর্মের, ৪০ শতাংশ ভিন্ন জাতের এবং এক শতাংশ প্রান্তিক যৌনতার যুগল বলে জানা গিয়েছে।
এ দেশের আন্তঃধর্ম বা অসবর্ণ বিয়ের যুগলদের নিরাপত্তার সমস্যা মেনে ২০১৮ সালেই সব রাজ্যে এর প্রতিকারে পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। একটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে বিপন্ন যুগলদের জন্য দেশে জেলায় জেলায় বিশেষ সেল এবং হেল্পলাইন তৈরি করতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। দরকারে এমন যুগলদের জন্য নিরাপদ পরিসর বা সেফ হোম তৈরি করতেও বলা হয়। অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত সেই নির্দেশ কার্যকর করতে তাপ-উত্তাপই নেই পশ্চিমবঙ্গে। গত কয়েক বছরে নানা প্রতিকূলতা জয় করে ঘুরে দাঁড়ানো যুগলেরা দেশের নানা প্রান্তে বচ্ছরকার সম্মেলনে জড়ো হচ্ছেন। দিল্লি, লখনউ, পুণের পরে আজ, রবিবার কলকাতায় অনুষ্ঠান। ‘চয়ন’ নামে আসরটির অন্যতম আহ্বায়ক তথা ধনকের কর্ণধার আসিফ ইকবাল বলছেন, “দিল্লি, চণ্ডীগড়, হরিয়ানা, পঞ্জাবের পরে মহারাষ্ট্রেও এই ছক-ভাঙা যুগলদের জন্য সেফ হোম গড়ে উঠেছে। কিন্তু তাতেও ভিন্ধর্মীদের আদালতে ‘সিভিল ম্যারেজ’-এর পথ বেশ জটিল। ধর্ম মতে বিয়ে করা বরং সোজা। কিছু আইনের সংশোধন ছাড়া ভিন্ধর্মী যুগলদের মুক্তি নেই।” তাঁর ব্যাখ্যা, অনেক ক্ষেত্রেই এমন বিয়ের ক্ষেত্রে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার সহযোগিতা করেন না। এক রাজ্য থেকে পালিয়ে অন্য রাজ্যে গেলে যুগলদের সে রাজ্যের বাসিন্দা হিসাবেও নথি দিতে হয়। আসিফের মতে, “যে কোনও রাজ্য থেকেই অবাধে সিভিল ম্যারেজের অধিকার চালু হলে অনেক যুগলের পথটা সহজ হবে।”
তথ্য জানার অধিকার আইনে ধনকের তরফে পশ্চিমবঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা, বিপন্ন যুগলদের সেফ হোম বা বিশেষ সেল, হেল্পলাইন নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। তার সদুত্তর মেলেনি। শুধু রাজ্য পুলিশের ডিজি-র তরফে এমন সমস্যা নিয়ে বাহিনীকে সজাগ করার কথা জানানো হয়। রাজ্যে সমাজকল্যাণ দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, “এটা পুলিশের সমস্যা। যা করার ওরাই করবে।”
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০২২-এর মধ্যে দেশে মোট ৪৯৩টি তথাকথিত সম্মানরক্ষায় মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য সরকারের আধিকারিকেরা বলে থাকেন, পশ্চিমবঙ্গে এমন ‘অনার কিলিং’-এর নমুনা কার্যত নেই। তবে বাস্তবে এ রাজ্যেও ভিন্ধর্মী যুগলদের পথে ফুল ছড়ানো রয়েছে বলে মনে করেন না সমাজকর্মীরা। কলকাতায় চয়নের অনুষ্ঠানের শরিক প্রান্তকথা-র বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট রূপান্তরকামীদেরও কোর্টে বিয়ের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাঁদেরও পদে পদে বাধা পেতে হচ্ছে।”