Kolkata Metro Rail

‘আজ পিছনের সিটে বসুন আপনি, আমি স্টিয়ারিংয়ে’, চালক কার্তিককে বললেন কলকাতা মেট্রোর জিএম

চাকরি জীবন গাড়ি চালিয়েই কেটেছে কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের। অফিসের গাড়ির পিছনের আসনে বসার সুযোগ হয়নি। কিন্তু অবসরের দিনে তাঁর অভিজ্ঞতা বদলে গেল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:৫৬
GM of Kolkata Metro Rail drives for his driver on retirement day

সারথিবদল। —নিজস্ব চিত্র।

সাক্ষাৎ ভগবান হয়েও কৃষ্ণ সারথি হয়েছিলেন অর্জুনের। সেই পরিচয়ে কৃষ্ণ ‘পার্থসারথি’ হয়ে রয়েছেন। এমন তুলনা কি সোমবার মনে পড়েছিল কার্তিকচন্দ্র মণ্ডলের? জানা নেই। তবে তেমনই এক ছবি দেখা গিয়েছে। এত দিন যাঁর গাড়ি চালানোই তাঁর কাজ ছিল, অবসরের দিনে সেই তিনিই অর্থাৎ কলকাতা মেট্রোর জিএম (জেনারেল ম্যানেজার) পি উদয়কুমার রেড্ডি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে দিলেন কার্তিককে। এমন মুহূর্ত তৈরি করার আগাম পরিকল্পনা হয়তো আগেই মনে মনে তৈরি করে রেখেছিলেন উদয়কুমার। মেট্রো ভবনে আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনার শেষে তিনি কার্তিককে বলেন, ‘‘আজ আপনি পিছনের সিটে, আমি স্টিয়ারিংয়ে।’’

Advertisement
GM of Kolkata Metro Rail drives for his driver on retirement day

চালকের আসনে উদয়কুমার। পিছনের আসনে কার্তিকচন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

গাড়িচালক হিসাবেই মেট্রো রেলে দীর্ঘ সময় চাকরি করেছেন কার্তিক। অনেক অফিসারকে বাড়ি থেকে অফিস নিয়ে আসা, ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। চাকরি জীবনের শেষ পর্বে তিনি ছিলেন জিএমের গাড়িচালক। উচ্চপদস্থ কর্তাদের গাড়িচালকের জীবন খুব একটা সহজ হয় না। কর্তার ব্যস্ততার সঙ্গে পাল্লা দিতে হয়। নিশ্চিন্তে পৌঁছে দিতে হয় গন্তব্যে। অত্যন্ত সাবলীল ভাবে স্টিয়ারিং সামলাতে হয়। সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োজন হয় নিয়মানুবর্তিতা, শৃঙ্খলার। তাই উচ্চপদস্থ রেলকর্তার গাড়ির চালক বাছাইও হয় যাবতীয় গুণ ও দক্ষতা বিচার করে। সেই পরীক্ষায় অনেক আগেই পাশ করেছিলেন কার্তিক। ধাপে ধাপে উঠে জিএমের গাড়ির চালক হন। তবে মেট্রো রেল ভবনের বাকি অফিসার থেকে কর্মীদের সঙ্গেও তাঁর সদ্ভাব ছিল। মেট্রো এক কর্তার কথায়, ‘‘কার্তিকবাবু সকলের কাছেই সম্মান, স্নেহ এবং ভরসার পাত্র হয়ে ওঠেন আগেই। জিএম সাহেবেরও।’’ আর সোমবারের ঘটনা নিয়ে মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘আমরা যে যে পদেই থাকি না কেন আসলে যে একটা পরিবারের মতোই সেটাই বুঝিয়ে দিলেন জিএম। সকলকেই অবসর নিতে হয়। দেখা গেল, কাজের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে এমন অভাবনীয় পুরস্কারও পাওয়া যায়।’’

সোমবার, অক্টোবরের শেষ দিনে ছিল কার্তিকের অবসরের দিন। আনুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয় মেট্রো রেল ভবনে। সকলেই কার্তিক সম্পর্কে অনেক কথা বলেন। কিন্তু নজির তৈরি করেন উদয়কুমার। দিনের পর দিন একসঙ্গে পথচলার সারথিকে অবসরের দিনে দিলেন বিশেষ সম্মান। নিজে স্টিয়ারিং ধরলেন জিএম উদয়কুমার। তার আগে গাড়ির দরজাও খুলে ধরলেন। যেমন করে দিনের পর দিন কার্তিক ধরতেন।

‘স্যর’-এর দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত করে অবসরের দিনে পাওয়া নানা উপহার নিয়ে পিছনের আসনে বসলেন কার্তিকচন্দ্র। উপস্থিত মেট্রো রেলের কর্মী থেকে কর্তারা দেখলেন, কার্তিকবাবুর চোখের কোণে জল। আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ছে গালে। গাড়ি চলতে লাগল। রোজ যায় আলিপুরে জিএমের আবাসনের দিকে। সোমবার চলল, তেলেঙ্গাবাগানের পথে। সেখানেই অপেক্ষায় কার্তিকের পরিবার।

Advertisement
আরও পড়ুন