Birthday

Gayatri Chakravorty Spivak: বালিগঞ্জে বিভোর বিদুষী বাঙালিনী

আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বনাগরিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের জন্মদিন তবু কলকাতা বা বাঙালিরই উদ্‌‌‌যাপন হয়ে উঠল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৯
তাঁর ৮০তম জন্মদিন পালিত হচ্ছে মহানগরেও। সেই অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক থেকে দর্শকদের মুখোমুখি গায়ত্রী।

তাঁর ৮০তম জন্মদিন পালিত হচ্ছে মহানগরেও। সেই অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্ক থেকে দর্শকদের মুখোমুখি গায়ত্রী। ছবি: সুমন বল্লভ

বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে তখন একটু একটু করে জনবসতি দানা বেঁধেছে। বৃহস্পতিবার সুদূর নিউ ইয়র্কে বসে তাঁর সকালে (কলকাতার সন্ধ্যা) দক্ষিণ কলকাতার সেই মহল্লাকে জীবন্ত করে তুললেন এক বিদুষী বাঙালিনী।

বিশ্বের দুই প্রান্তে সমান উৎসাহে ৮০ বছরের জন্মদিন পালিত হল তাঁর। ইদানীং কালে এমন বাঙালি হাতে গোনা। আক্ষরিক অর্থেই বিশ্বনাগরিক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের জন্মদিন তবু কলকাতা বা বাঙালিরই উদ্‌যাপন হয়ে উঠল। নিউ ইয়র্কের বিকেলে ইটালিয়ান অ্যাকাডেমিতে তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই নিজের
নিউ ইয়র্কের বাড়িতে বসে ভার্চুয়াল মাধ্যমে এক অনুষ্ঠানে কলকাতার মুখোমুখি হয়েছিলেন গায়ত্রী। সাহিত্য তাত্ত্বিক, নারীবাদী সমালোচক তথা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা গায়ত্রীকে খানিক অন্য ভাবেও চিনল কলকাতা। নিজের জীবনের আকর্ষক অভিযাত্রার কথায় যিনি তাঁর কলকাতায় জন্মানোর গল্প শোনাবেন। নেপালের রানির জটিল রোগের চিকিৎসা করে বাবা, ঢাকার ধন্বন্তরী শল্য চিকিৎসক পরেশ চক্রবর্তী বালিগঞ্জে বাড়ি করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানি বোমার ভয়ে সবাই তখন কলকাতা ছেড়ে পালাচ্ছে! কিন্তু মা শিবানী রাজি হননি! ফলে, জন্ম এ শহরেই। গায়ত্রীর কথায়, ‘‘এখনও আমার পাসপোর্টে বালিগঞ্জ। বাড়ি বলতে বালিগঞ্জের এই কোণ এবং নিউ ইয়র্কের আপার ওয়েস্ট সাইডই বুঝি!’’ শিশুর সারল্য এবং বিরল রসবোধে এ দিন নন্দন-৩ প্রেক্ষাগৃহের দর্শকদের তাঁর বালিগঞ্জের বাড়ির সামনের রাস্তার কল দেখিয়ে গায়ত্রী বলেছেন, ‘‘সেই সময়ের এটাই টিকে। আমার খুব ইচ্ছে, এটা হিস্টরিক্যাল মনুমেন্ট হোক!’’

Advertisement

এ দিনই গায়ত্রীর প্রথম বাংলা লেখার সঙ্কলন ‘অপর’ প্রকাশিত হল। বই নিয়ে খানিক কুণ্ঠার সুরেও সরস ভঙ্গিতে প্রেসিডেন্সির মাস্টারমশাই সুবোধ সেনগুপ্তের গল্প বলেছেন গায়ত্রী। তখন কলেজ ম্যাগাজ়িনে কলকাতার বাসযাত্রা নিয়ে রম্যরচনা লেখেন গায়ত্রী। বহু বছর বাদেও সুবোধবাবু তাঁর বাঙাল লব্জে সস্নেহে ছাত্রীকে বলতেন, ‘‘এমন লেখা তুমি আর লিখতে পারোনি!’’ গায়ত্রী সহাস্যে বলছিলেন, ‘‘তার মানে ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক’ বা দেরিদার গ্রামাটোলজির ইন্ট্রোডাকশনও সেই লেখার কাছে লাগে না!’’ ‘গায়ত্রীদি’র বাংলা লেখায় চমৎকৃত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার অবাক ফুটবলার, বন্ধু ‘পিকে’র সঙ্গে গায়ত্রীর মোটরবাইকে কলকাতা সফরের কাণ্ড শুনে। নানা পুরনো কথা উস্কে দিয়েছেন, ১৯৫৬ থেকে গায়ত্রীর বন্ধু, সহপাঠী প্রাবন্ধিক, নাট্য সমালোচক শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

ইদানীং বাংলা বলা, লেখার তেমন সুযোগ পান না! কিন্তু গায়ত্রী বলেছেন, নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে হুইলচেয়ারে বসার সময়ে তাঁর ‘বাবা রে’ শুনেই বাংলাদেশি সহযাত্রীটি ঠিক চিনে নিয়েছিলেন। সমান আদরে গায়ত্রী তাঁর জীবনে শঙ্খ ঘোষ এবং টোনি মরিসনের সাহচর্যের কথাও শোনান। আবার কেরলের মুসলিম মেয়েদের কলেজের বন্ধু জ়াহিরা রহমান এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক শিশুরাও তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। গায়ত্রী বলেন, ‘‘এই আশিতে আমার কোনও ভবিষ্যৎ নেই। তবে দূর গ্রামের শিশুদের পৃথিবী চেনানোর কাজটা ছাড়তে পারছি না!’’ বাবার মুখে শোনা সংস্কৃত উদ্ধৃতি আউড়ে বলেছেন, ‘‘বাবা মনে করতেন, বিদ্যার কাজ করলে তুমি অজর এবং অমর!’’ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আশিতে আসিও না’ ছবির উল্লেখ করে দার্শনিক, অধ্যাপক অরিন্দম চক্রবর্তীও গায়ত্রীকে নতুন তারুণ্যে নানা কাজে পাওয়ার আশা প্রকাশ করে গেলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement