Old Houses In Kolkata

বৃষ্টি মানেই মৃত্যুভয়! তবু বদলায় না বিপজ্জনক বাড়ি আঁকড়ে বসবাস

বহু জায়গায় আবার পুরনো বাড়ির অংশ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির যে অংশ এখনও দাঁড়িয়ে, তা থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। তবু এমন বাড়িই আঁকড়ে আছেন অনেকে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৬
ঝুঁকি: জীর্ণ বাড়িতেই বসবাস একাধিক পরিবারের। শনিবার, উত্তর কলকাতার মণ্ডল স্ট্রিটে।

ঝুঁকি: জীর্ণ বাড়িতেই বসবাস একাধিক পরিবারের। শনিবার, উত্তর কলকাতার মণ্ডল স্ট্রিটে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

এ যেন পদে পদে বিপদ! কোথাও রাস্তার উপরে ঝুলছে পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির ভাঙা অংশ। কোথাও পুরনো বাড়ির গায়ে লাগানো লোহার শিক উঁচিয়ে রয়েছে। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লে যে কারও মাথায় বা বুকে গেঁথে যেতে পারে সে সব! বহু জায়গায় আবার পুরনো বাড়ির অংশ ভেঙে পড়েছে। বাড়ির যে অংশ এখনও দাঁড়িয়ে, তা থেকে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। তবু এমন বাড়িই আঁকড়ে আছেন অনেকে। টানা বৃষ্টিতে বাড়ি ভেঙে প্রাণহানির ভয় থাকা সত্ত্বেও।

Advertisement

কলকাতা পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরলেই চোখে পড়ে এমনই নানা বিপদের ছবি। এলাকার পুরপ্রতিনিধি মীরা হাজরা বললেন, ‘‘শুধুমাত্র এই ওয়ার্ডেই রয়েছে অন্তত ১০৮টি পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ি!’’ তবে একটি এলাকায় নয়, শহর জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু বাড়ি, যা ভেঙে পড়তে পারে যে কোনও সময়ে। টানা বৃষ্টিতে সেগুলি নিয়ে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভয় আরও বেড়েছে বৃহস্পতিবার রাতে বাগুইআটিতে বাড়ি ভেঙে সতেরো বছরের এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায়। লোহার রডের বদলে সেখানে বাঁশ, কাঠ, সুপুরি গাছের বাকল দিয়ে তৈরি কাঠামোর উপরে সিমেন্ট আর সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তেতলা বাড়ি। তার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে, একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চললেও কবে হুঁশ ফিরবে মানুষের?

শোভাবাজার মোড়ে এমনই একটি বাড়ির বাসিন্দা নিমাই সর্দার বললেন, ‘‘পনেরো বছর ধরে ভাড়ায় রয়েছি। বাড়িওয়ালা দায়িত্ব নেন না। বাড়ি সারাবে কে? ভেঙে পড়ে মৃত্যু হলে হবে।’’ একই রকম দাবি সর্দার শঙ্কর রোডের বাসিন্দা স্নেহপদ ঘোষেরও। ঘরে বালতি রেখে ছাদ চুঁইয়ে পড়া জল ধরতে ধরতেই তিনি বলেন, ‘‘বাড়িওয়ালা এক বার সারানোর অজুহাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আদালতে গিয়ে আটকেছি।’’ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিটের বাসিন্দা সুমনা হাজরার দাবি, ‘‘আমরা সাব-টেন্যান্ট। উঠে গেলে ঘর পাব কী করে?’’ যদিও এই সমস্যা মেটাতেই ‘অকুপেন্সি সার্টিফিকেট’ দেওয়া শুরু করেছে পুরসভা। সংস্কারের পরে ওই সার্টিফিকেট থাকলেই জায়গা ফিরে পাবেন ভাড়াটে। কিন্তু লাভ হয়নি।

পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, পুরনো, বিপজ্জনক বাড়ির ক্ষেত্রে পুর আইনের ৪১১ (১) ধারায় নোটিস দিয়ে বাড়ি খালি করে সংস্কার করতে বলা হয়। কাজ না হলে ৪১২ (এ) ধারায় বাড়ির মালিককে মিউনিসিপ্যাল ট্রাইবুনালে ডাকা হয়। কাজে উৎসাহ দিতে বেশ কিছু ছাড়ও দেয় পুরসভা। তবে, মালিক সারাতে না পারলে সুযোগ দেওয়া হয় ভাড়াটেকে। তার পরেও কাজ না হলে সংস্থা লাগিয়ে সংস্কার করবে পুরসভাই। তবে, খরচ দিতে হবে মালিককে। যদিও ‘দ্য ক্যালকাটা হাউস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুকুমার রক্ষিতের দাবি, এর পরেও সমস্যা মিটছে না। কারণ, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রেমিসেস টেন্যান্সি অ্যাক্ট’ সংশোধনের পরে ১৯৯৭ সালে প্রথম ভাড়াটের থেকে বাড়ি সংস্কারের খরচ নেওয়ার বিষয়টি আনা হয়। ভাড়ার ১০ শতাংশ সংস্কারের খরচ হিসাবে দেবেন ভাড়াটে। কিন্তু পুরনো বাড়ির ভাড়া কোথাও ২০, কোথাও ৩০, কোথাও ১০০ টাকা। ১০০ টাকার ১০ শতাংশ ১০ টাকা। সুকুমারের প্রশ্ন, ‘‘আইন সংশোধন না হলে এই ভাবে কি পুরনো বাড়ির বিপদ কাটানো সম্ভব?’’

মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘প্রচুর ছাড় দিলেও অনেকেই এগিয়ে আসছেন না। আমি সংবিধান মেনে চলতে বাধ্য। পুরসভা তো আর জোর করে ভেঙে সংস্কার করতে পারে না!’’ তা হলে উপায়? উত্তর মেলে না।

আরও পড়ুন
Advertisement