Kolkata Bike incident

মোটরবাইকের দৌরাত্ম্যে ছেদ পড়েনি, প্রশ্নে পুলিশের উদ্যোগ

পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিলজলায় এক বাইক-আরোহীর মৃত্যু হয়েছিল। আবার দুর্ঘটনায় বাইকের সওয়ারি এক মহিলার মৃত্যু হয় ঠাকুরপুকুরেও।

Advertisement
চন্দন বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৮
A Photograph indicating accident

হেলমেটে বাইক চালানোর অভিযোগে ১৯৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রতীকী ছবি।

ঘটা করে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহেরসূচনা করেছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু, পথ কি তাতে আদৌ নিরাপদ হয়েছে? দুর্ঘটনা কি বন্ধ হয়েছে? মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য কিকমেছে একটুও? প্রতিটি প্রশ্নেরই সম্ভবত একটিই উত্তর, না। কারণ, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের মধ্যেও পথের বিধি ভাঙার প্রবণতা যেমন আটকানো যায়নি, তেমনই রোখা যায়নি দুর্ঘটনায় মৃত্যুও। মোটরবাইকের বেলাগাম দৌরাত্ম্যও চলছে পুরোদমে, যা পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে সচেতন করার যে অঘোষিত নীতি নিয়ে পুলিশ চলছে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। যা দেখে শহরের সচেতন বাসিন্দাদের অনেকেরই প্রশ্ন, বাইকের দৌরাত্ম্য তা হলে বন্ধ করা যাবে কী ভাবে?

গত বারের পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেপরোয়া বাইক নিয়ে উদ্বেগ শোনা গিয়েছিল কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের গলায়। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, শহরে দুর্ঘটনায় মৃতদের ২৫ শতাংশই বাইকচালক। এই সংখ্যা কমাতে এবং বিনা হেলমেটে বাইক চালানো আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছিলেন নগরপাল। কিন্তু, তার পরেও নিয়ম ভাঙার প্রবণতায়কোনও পরিবর্তন ঘটেনি। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের সূচনার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিলজলায় এক বাইক-আরোহীর মৃত্যু হয়েছিল। আবার দুর্ঘটনায় বাইকের সওয়ারি এক মহিলার মৃত্যু হয় ঠাকুরপুকুরেও।ঘটে একের পর এক বিধি ভাঙার ঘটনাও। আর এরই মধ্যে সব থেকে বেশি চিন্তা বাড়িয়েছে বাইক। এই ক’দিনে আইন ভাঙার প্রবণতায় সকলকে কার্যত টেক্কা দিয়েছেন বাইকচালকেরা।

Advertisement

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের প্রথম দিন, অর্থাৎ সোমবারই শহরে পথ-বিধি ভাঙার নথিভুক্ত ঘটনা ঘটেছিল ১২৬৫টি। এর মধ্যে বাইকের আইন ভাঙার ঘটনা ৭০৩টি। ওই দিন বিনা হেলমেটে বাইক চালানোর অভিযোগে ১৯৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। মত্ত অবস্থায় বাইক চালানোর অভিযোগেও ২৮ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ মঙ্গলবার আইন ভাঙার দায়ে দু’চাকার যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সংখ্যা ৬৬৭। এর মধ্যে শুধু বিনা হেলমেটে চালানোর অভিযোগেই ১৭৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গোটা দিনে ৪৪ জন মত্ত চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তাঁদের মধ্যে বাইকচালকের সংখ্যা ২৩। এ ছাড়া, একই বাইকে একাধিক জনকে বসিয়ে চালানোর অভিযোগে ৮১ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে লালবাজার।

শহরবাসীর অবশ্য অভিযোগ, বিধি ভাঙার তুলনায় ব্যবস্থা নেওয়ারসংখ্যা অনেকটাই কম। তাঁদের দাবি, শহরের বড় রাস্তাগুলিতে বিধি খানিকটা মানা হলেও ছোট রাস্তায় কার্যত গোটা দিন ধরে বাইকের দৌরাত্ম্য চলে। আর এই বেলাগাম দৌরাত্ম্যের পিছনে পুলিশের একাংশের গা-ছাড়া মনোভাবকেই দায়ী করছেন তাঁরা। বেলেঘাটার বাসিন্দা রাতুল জায়সওয়াল বলেন, ‘‘ছোট রাস্তায় পুলিশি নজরদারি তুলনামূলক ভাবে কম থাকায় সেখানে যে ভাবে বাইক চলে, তাতে রীতিমতো প্রাণ হাতে নিয়ে বেরোতে হয়। আর রাতের দিকে তো কথাই নেই! বহু ক্ষেত্রে পুলিশ সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে কাটিয়ে দেয়।’’

লালবাজারের এক পুলিশকর্তা যদিও নজরদারিতে ঢিলেমির বিষয়টি মানতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াটাই নিয়ম। আগের থেকে পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি করা গিয়েছে। ট্র্যাফিক আইন কঠোর করে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে সব সময়ে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement