Light Pollution

Light pollution: রাতের আলোয় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের অভিযোগ

অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন রেস্তরাঁর আকর্ষণ বাড়াতে সেগুলির সামনের গাছপালা মুড়ে দেওয়া হচ্ছে আলোয়।

Advertisement
মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:০৪
আলোয় সেজেছে পথের গাছ। টালিগঞ্জের এনএসসি বসু রোডে (বাঁ দিকে) ও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে।

আলোয় সেজেছে পথের গাছ। টালিগঞ্জের এনএসসি বসু রোডে (বাঁ দিকে) ও সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে।

রাতের শহরের রূপ আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ব্যবহার করা হচ্ছে নানা রকম আলো। ঝলমলিয়ে উঠছে শহর। তবে সেই আলোর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে গভীর অন্ধকার। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন ওই তীব্র আলোয় ক্ষতি হচ্ছে গাছের। বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, পাখি আলো এড়াতে অন্যত্র চলে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যও।

বর্তমানে শহরকে আলোকময় করে তুলতে আবাসিক বাড়ি, অফিস ভবন, উড়ালপুল, কোনও কিছুই বাদ রাখা হচ্ছে না। আলোর সজ্জা থেকে রেহাই মিলছে না গাছেদেরও। রাতকে দিন করার এই চেষ্টার বিরুদ্ধে একাধিক পরিবেশকর্মীর অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগে। অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন এলাকায়, বিভিন্ন রেস্তরাঁর আকর্ষণ বাড়াতে সেগুলির সামনের গাছপালা মুড়ে দেওয়া হচ্ছে আলোয়। যাদবপুর থানা থেকে ই এম বাইপাসের দিকে যাওয়ার রাস্তা, কেয়াতলা রোড থেকে গড়িয়াহাটমুখী রাস্তার আশপাশ, এলগিন রোড, দেশপ্রাণ শাসমল রোড, টালিগঞ্জের এনএসসি বসু রোডের আশপাশে এই ঘটনা বেশি চোখে পড়ছে বলে অভিযোগ। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে এমনই এক রেস্তরাঁর কর্মীকে প্রশ্ন করায় তিনি শুধু বললেন, ‘‘কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।’’

Advertisement

পরিবেশবিদেরা রাতের অন্ধকারে গাছে আলো জ্বালানোয় গভীর বিপদ দেখছেন। পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র পর্ষদের রিসার্চ অফিসার অনির্বাণ রায়ের পর্যবেক্ষণ, ‘‘চব্বিশ ঘণ্টার জীবনচক্রে যে কোনও জীবেরই বেশ কিছু ক্ষণ অন্ধকারে থাকা দরকার। গাছেদের ক্ষেত্রে অন্ধকার পরিবেশ ব্যাহত হলে হরমোনজনিত সমস্যা হবে। ফুল ফোটা, ফল ধরার প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। এর ফলে ওই গাছেদের উপর নির্ভরশীল প্রাণীরাও খাবার পাবে না। পাশাপাশি, রাতে অনেক পাখি, কীটপতঙ্গ গাছে আশ্রয় নেয়। রাতেও আলো জ্বললে তাদের খুব সমস্যা হবে।’’

হাওড়ার বাগনান কলেজের অধ্যাপক আক্রামুল হক বলেন, ‘‘আলোর দাপটে পেঁচা, বাদুড়, চামচিকের মতো নিশাচর প্রাণীরা কার্যত শহর থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে রাতে ময়দান অঞ্চল এবং বাইপাস এলাকায় প্রচুর ভাম, শিয়ালের দেখা মিলত। এখন তারাও উধাও।’’ বছর পাঁচেক আগের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বললেন, ‘‘২০১৭ সালে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে রাতে ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন আদালতের শর্ত ছিল, স্টেডিয়ামের আশপাশ কালো কাপড়ে মুড়ে রাখতে হবে। যাতে আলো কোনও ভাবেই গাছে গিয়ে না পড়ে। কারণ, তাতে গাছে বসে থাকা পাখি, প্রাণীদের ক্ষতি হবে। আদালতের সেই শর্ত হুবহু মানা হয়েছিল। অথচ এখন দিনের পর দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গাছে যে ভাবে অবাধে আলো জ্বালানো হচ্ছে, তাতে প্রশাসন উদ্যোগী না হলে কলকাতার জীববৈচিত্রের ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।’’

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘রাতের বেলায় গাছে আলো জ্বালানো অত্যন্ত অন্যায়। পুরসভা ব্যবস্থা নিক।’’ পরিবেশকর্মী বনানী কক্করও পুরসভার দ্রুত হস্তক্ষেপের দাবি তুলে বলেন, ‘‘প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা এ বিষয়ে সচেতন না হলে অচিরেই শহরের জীববৈচিত্র নষ্ট হবে। সারা শহরে রাতের অন্ধকারে গাছে আলো জ্বালানোর প্রবণতা বেড়ে গিয়েছে। ব্যবসার সম্প্রসারণে এই পথে হাঁটছেন অনেকে। কিন্তু গাছ তো সকলের।’’

অভিযোগ প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। রাতের বেলায় গাছে যে বা যাঁরা আলো জ্বালিয়ে পরিবেশহানি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে পুরসভা। পুরসভা এ বিষয়ে সারা শহরে সমীক্ষা করে যেখানে আলো জ্বালানো হচ্ছে, সেখানে অভিযুক্তদের নোটিস দেবে।’’

Advertisement
আরও পড়ুন