Protest

জমল না জমায়েত! ময়দান রাজনীতিমুক্ত করার দাবিতে তিন প্রধানের সমর্থকদের প্রতিবাদ রইল ফাঁকা

নৈহাটির উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-র প্রশংসা করে ভিডিয়োবার্তা দিয়েছিলেন কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কর্তারা। তাঁদের সেই বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৯
প্রতিবাদ সভায় বলছেন ৫২ বছর ধরে ইস্টবেঙ্গলের সদস্য তপন সাহা।

প্রতিবাদ সভায় বলছেন ৫২ বছর ধরে ইস্টবেঙ্গলের সদস্য তপন সাহা। —নিজস্ব চিত্র।

রাজনীতিমুক্ত ময়দান গড়ার স্লোগান দিয়ে মঙ্গলবার জমায়েতের ডাক দিয়েছিল তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান সমর্থকদের মঞ্চ ‘তিলোত্তমার পাশে ময়দান’। কিন্তু সেই জমায়েত জমল না। তিন ক্লাবের পতাকা, প্ল্যাকার্ডের আয়োজন ছিল। কিন্তু দেখা গেল গুচ্ছ গুচ্ছ পতাকা, প্ল্যাকার্ড পড়েই রইল। হাতে নেওয়ার লোক পাওয়া গেল না।

Advertisement

নৈহাটির উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সনৎ দে-র প্রশংসা করে ভিডিয়োবার্তা দিয়েছিলেন কলকাতার তিন প্রধান ক্লাব মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান স্পোর্টিংয়ের কর্তারা। দেবাশিস দত্ত, দেবব্রত সরকার, কামারুদ্দিনদের সেই বক্তব্য সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছিল তৃণমূল। তার প্রতিবাদেই মঙ্গলবার গোষ্ঠ পালের মূর্তির পাদদেশে জমায়েত ডেকেছিলেন তিন প্রধানের সমর্থকেরা। জমায়েতের অনেক মুখই স্পষ্ট করে দিয়েছে এই কর্মসূচির নেপথ্যে ছিল সিপিএম। এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে, বাম ছাত্র নেত্রী দীধিতি রায়, ডিওয়াইএফআইয়ের কলকাতা জেলা সভাপতি বিকাশ ঝাঁয়েরা ছিলেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনাও করছিলেন সিপিএমের তরুণ নেতা তথা ইস্টবেঙ্গল গ্যালারির পরিচিত মুখ চন্দন বসু। তবে নেতারা থাকলেও সে ভাবে জমায়েত টানতে পারলেন না তাঁরা। গাছতলায় দাঁড়িয়ে এক যুব নেতা বলেই দিলেন, ‘‘ব্যাপারটা এ বার ইলাস্ট্রিকের মতো টানা হয়ে যাচ্ছে। এ বার থামা দরকার।’’

তবে প্রতিবাদ সভা হয়েছে। অনেক প্রবীণ মানুষও এসেছিলেন। ওই সভায় বক্তৃতা করেন ৫২ বছর ধরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সদস্য তপন সাহা। তিনি বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে দলীয় রাজনীতির আখড়া বানানো হচ্ছে ক্লাবগুলিকে। এর বিরুদ্ধে সমর্থকদের লড়াই জারি রাখতে হবে।’’ মোহনবাগানের সমর্থক সুরঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্লাবকর্তারা হয়তো চাপের সামনে এ সব করতে বাধ্য হচ্ছেন। আসলে এটাও এক ধরনের থ্রেট কালচার।’’ বক্তৃতা করেন চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণও। বিক্ষোভ সভা শেষে প্রতীকী মানববন্ধনও করেন তাঁরা।

গোষ্ঠ পাল মূর্তির পাদদেশে তিন প্রধানের সমর্থকদের জমায়েত।

গোষ্ঠ পাল মূর্তির পাদদেশে তিন প্রধানের সমর্থকদের জমায়েত। —নিজস্ব চিত্র।

নৈহাটির তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে তিন প্রধানের কর্তাদের ওই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। যদিও তৃণমূলের তরফে কুণাল ঘোষ সে দিনই বলেছিলেন, ‘‘তিন কর্তা এক জন ক্রীড়া সংগঠকের প্রশংসা করেছেন। এর মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। যা করেছেন বেশ করেছেন।’’ কিন্তু তাতে বিতর্ক থামেনি। বরং বৃদ্ধি পায়। পাল্টা কুণাল পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেন, সিপিএমের শচীন সেন, স্নেহাংশু আচার্য, মানস মুখোপাধ্যায়েরা ইস্টবেঙ্গলের বিভিন্ন পদে ছিলেন। বেঙ্গল টেবল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। কল্যাণ চৌবের প্রসঙ্গও তুলেছিলেন কুণাল। এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ মানিকতলায় ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন বিজেপির হয়ে। কুণাল বোঝাতে চেয়েছিলেন, ময়দানের ক্লাবগুলিতে রাজনৈতিক নেতাদের যোগ অতীতেও ছিল। তাঁর এ-ও দাবি ছিল, এই বিতর্ক তৈরির নেপথ্যে রয়েছে সিপিএম।

প্রসঙ্গত, কুণাল নিজে মোহনবাগানের কর্মসমিতির অন্যতম সদস্য। তা ছাড়া বাগানের এখনকার যে কর্মসমিতি, তাতে রয়েছেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক এবং অরূপ রায়। কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষও রয়েছেন মোহনবাগানের কর্মসমিতিতে। প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদও মহামেডানের কর্তা ছিলেন।

আরজি কর-আন্দোলনের আবহে গত ১৮ অগস্ট যুবভারতীতে ডুরান্ড কাপের ডার্বি বাতিল করেছিল বিধাননগর পুলিশ। ওই দিনই যুবভারতীর সামনে, বাইপাসের অনেকটা জুড়ে জড়ো হয়েছিলেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডানের কয়েক হাজার সমর্থক। সেই বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিও চলেছিল। সেই থেকেই এই মঞ্চ আরজি কর নিয়ে বিভিন্ন নাগরিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। তবে আরজি কর নিয়ে নাগরিক আন্দোলন যেমন স্তিমিত হয়েছে, তেমনই দেখা গেল তিন প্রধানের সমর্থকদেরও সেই ঝাঁজ কমেছে।

আরও পড়ুন
Advertisement